বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সউদী বিনিয়োগে আগ্রহ

প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:০৬ পিএম, ৬ অক্টোবর, ২০১৬

শামসুল ইসলাম : বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সউদী আরবের বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জনশক্তি আমদানীর পাশাপাশি সউদী আরব এখন বাংলাদেশে ব্যাপক পরিসরে বিনিয়োগের চিন্তা-ভাবনা করছে। সউদী বিনিয়োগকারীরা শিল্পবান্ধব বাংলাদেশের আইটি খাত, পর্যটন খাত, বস্ত্রখাত, হোটেল, স্পেশাল ইকোনমিক জোনে ও ওষুধ শিল্পখাতে ব্যাপক বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করায় সউদী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগ করতে গভীরভাবে আগ্রহ প্রকাশ করছে। বিভিন্ন খাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। দেশের বিভিন্ন শিল্পখাতে শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে সহাবস্থান বিরাজ করছে। শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতার পরিবর্তে সুবাতাস বইয়ে চলছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত নামি-দামি ওষুধ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেদারসে রফতানি হচ্ছে। বিশ্বে ওষুধ রফতানি করে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বেশ খ্যাতিও অর্জন করছে। মিল-কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দিন দিন গতি বাড়ছে। বাংলাদেশী শ্রমিকদের মজুরি অন্যদেশের তুলনায় সস্তা হওয়ায় অনেক বিদেশী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীর বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে । শিগগিরই সউদী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আগামী জানুয়ারীর দিকে সউদী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবেন। সউদী সফরকারী উদ্যোক্তাগণ বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধাসহ বিস্তারিত বিষয় নিয়ে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনায় মিলিত হবেন। সউদী আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এ তথ্য জানিয়েছেন।
সউদীতে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীরা সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। জনশক্তি রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে সউদী আরব। দেশটিতে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে সউদীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। তারা প্রতি মাসে কোটি কোটি মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে দেশে। ২০১৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী কর্মীরা ১৫২৭০ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে ঐ বছর সউদী প্রবাসী কর্মীরা ৩২১৭ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছে। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী কর্মীরাও ২৭৬১ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর সউদী’র শ্রমবাজার এখন উন্মুক্ত হয়েছে। সউদী আরবে বিনা খরচে মহিলা গৃহকর্মী নিয়োগের পাশাপাশি এখন হাউজ ড্রাইভারসহ অন্যান্য পুরুষ কর্মীর ভিসাও আসছে। হাউজ ড্রাইভাররা স্বল্প খরচেই সউদী যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। হাউজ ড্রাইভার ভিসায় সউদী যাওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলার বিআরটিএ-এর অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সউদী গমনেচ্ছুরা।
 সউদী আরবে অলিখিতভাবে কর্মী নিয়োগ বন্ধ থাকার পরও ২০১৫ সাল থেকে বিনা খরচে মহিলা গৃহকর্মীরা দেদারসে ভিসা পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০ হাজার মহিলা গৃহকর্মী দেশটিতে বিনা খরচে গেছে। এদের মধ্যে নানা কারণে বেশ কিছু মহিলা গৃহকর্মী সউদী থেকে ফেরত এসেছে। তিন মাসের আগে যেসব মহিলা গৃহকর্মী সউদী থেকে দেশে ফিরে আসছে তাদের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে প্রসেসিং ফি’ কেটে রাখছে সউদী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সউদীতে মহিলা গৃহকর্মী পাঠিয়ে প্রসেসিং ফি বাবদ এক থেকে দেড় হাজার মার্কিন ডলার আয় করে চাঙ্গা হচ্ছে। সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে সউদী কোম্পানীগুলো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিনিয়োগ বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ উৎসাহ যোগালে এবং লাল-ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সউদী বিনিয়োগের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও সুবাতাস বইবে। অভিজ্ঞ মহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।  এদিকে, চীনা প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরেও উভয় দেশের মধ্যে আরো ব্যাপক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। চীনা প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরেই সউদী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী বাংলাদেশে সফরে আসছেন। সউদী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রীর ঢাকায় সফরকালে বাংলাদেশে আইটি খাতে সউদী বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন হতে পারে। বাংলাদেশে সউদী বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচিত হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হবে। এছাড়া ভ্রাতৃ-প্রতীম সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর উন্নতি এবং মুসলিম উম্মাহ’র মাঝে নবদিগন্তের সৃষ্টি হবে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ অন্যান্য দেশগুলোও বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বুধবার এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে দীর্ঘ দিনের বন্ধকৃত সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবার আভাস পাওয়া গেছে। আগামী ১৬ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রম মন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলেকজামি’র নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছেন। সফররত প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শনসহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে একাধিক বৈঠকে মিলিত হবে। প্রতিনিধি দল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সাথে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। বিএমইটি’র মহাপরিচালক মোঃ সেলিম রেজা গতকাল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিএমইটি’র মহাপরিচালক সেলিম রেজা ইনকিলাবকে বলেন, অতিসম্প্রতি শ্রীলংকার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত কলম্বো প্রসেসের প্রাক্কালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব  বেগম শামছুননাহার সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রম মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত আলোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দলকে সফরের আমন্ত্রণ জানান। এছাড়া দুবাই ডায়লক-এ প্রবাসী সচিব বেগম শামছুননাহার সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার চালুর জন্য সৃষ্ট সংকট নিরসন এবং বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনের অনুরোধ জানান। বিএমইটি’র মহাপরিচালক বলেন, এসব কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার উপায় বের এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শনের জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর দু’দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। শিগগিরই সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার খুলে যাবে বলেও বিএমইটি’র মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করেন।    
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সউদী বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রণে সউদী আরব সফরকালে সউদী বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এতে সউদী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে অধির আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি ও লভ্যাংশে অংশীদার হতে সউদী বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে কোটি মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন আনার আশাবাদ ব্যক্ত করে সউদী বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলে ছিলেন,বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমাদের দেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের অংশীদার হতে সউদী বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানাচ্ছি’। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘সবচেয়ে উদার’ বিনিয়োগ নীতির দেশ উল্লেখ করে উদীয়মান শিল্প খাত বস্ত্র, চামড়া শিল্প, পাট, সিরামিক, পেট্রো-কেমিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যালস, শিপ বিল্ডিং, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিকস, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও সমুদ্র সম্পদসহ বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আইন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা প্রদান, ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত, অনিয়ন্ত্রিত প্রত্যাহার নীতি এবং লভ্যাংশ ও পুঁজি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এসময় বাংলাদেশে তরুণ, পরিশ্রমী এবং তুলনামূলক স্বল্প বেতনে প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাওয়া, স্বল্প খরচে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশ সুবিধাসহ বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দেশের বিভিন্নস্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একাধিক হাইটেক পার্ক নির্মাণ এবং এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ-এর বিষয়ে জানানো হয় ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ এখন যন্ত্রনির্ভর, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বৈচিত্র্য এবং মূল্য সংযোজনের দেশে পরিণত হচ্ছে, যোগ করেন শেষ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি ও এ সংশ্লিষ্ট শিল্পও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সফটওয়ার ও আইটি সার্ভিসে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম গন্তব্য, বাংলাদেশে তৈরি হাজারো অ্যাপ্লিকেশন আইওএস এবং অ্যানড্রয়েড ফোনে যাচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার তরুণ আইটি গ্র্যাজুয়েটস এই সেক্টরে যোগ দিচ্ছে। ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতার (পিপিপি) দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমাদের অর্থনীতি বর্তমান বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির একটি। “গোল্ডম্যান স্যাক্স বাংলাদেশকে ‘নেক্সট ইলাভেন’ এবং জে পি মরগ্যান ‘ইমার্জিং ফাইভ’ অর্থনীতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশের উপরে, রফতানি আয় বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রেমিটেন্স দ্বিগুণ হয়ে এখন ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদাশিক মুদ্রার রির্জাভ ২৯ বিলিয়ন ডলার”। জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র ভাইস চেয়ারম্যান মাজেন ব্যাটার্জি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বাড়ানো দরকার। এটা মূলত প্রাইভেট সেক্টরে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ব্যবসার যে আকার, এটা যথেষ্ট নয়। এটা বাড়াতে হবে। এজন্য দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে, সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বিনিয়োগের সম্ভবনা খুঁজে দেখতে জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (জেসিসিআই) থেকে ব্যবসায়ীদের একটা টিম গঠন করে বাংলাদেশে পাঠানোর কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে প্রকৌশলী, স্থপতির মতো দক্ষ মানবসম্পদ রফতনির লক্ষ্যে সউদী আরবভিত্তিক বাওয়ানি গ্রুপ এবং বাংলাদেশের সেনা কল্যাণ সংস্থার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
বিএমইটি’র সূত্র জানায়, বিগত ২০১৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪ লাখ ৯ হাজার ২শ’৫৩জন, ২০১৪ সালে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬শ’৮৪জন এবং ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮শ’৮১জন কর্মী চাকুরি নিয়ে গেছে। উল্লেখিত তিন বছরে কি পরিমাই প্রবাসী কর্মী চাকরি হারিয়ে এবং নানা কারণে খালি হাতে দেশে ফিরেছে তার কোনো সংখ্যা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কল্যাণ ডেক্স দিতে পারেনি। রাতে বিমান বন্দর কল্যাণ ডেক্সের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে এ ব্যাপারে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। গত জানুয়ারি থেকে গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৬শ’ ৯১জন কর্মী বিদেশে চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে গত আগস্ট মাসে ৬৯ হাজার ১শ’ ৯০জন কর্মী বিদেশে গেছে। সেপ্টেম্বর মাসে তা’ হ্রাস পেয়ে ৫৫ হাজার ৮শ’৬৯ দাঁড়িয়েছে।  গত মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সেও ভাটা পড়েছে। মক্কাস্থ মনসুর আল-জাবেরী রিক্রুটমেন্ট (৪৪০) নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশে দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য ট্রেনিং সেন্টারে বিনিয়োগের চিন্তা-ভাবনা করছে। এ ব্যাপারে জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে প্রস্তাব নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সি আল-রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল (৩৫৪)-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার ও বায়রার সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব-১ আলহাজ আবুল বাশার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সউদী আরব-সংযুক্ত আরব আমিরাত-ইয়েমেন ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে ১০ একর জমির উপর প্রস্তাবিত ”কালচার্ড মার্বেল” উৎপাদনের বৃহৎ ফ্যাক্টরি সউদী-বাংলা এনভাইরনমেন্ট এন্ড ইকো-ফ্রেন্ড এম এফ জি লিমিটেড চালু হলে বৈদেশিক মুর্দ্রা অর্জনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত এবং বহু দক্ষ-অদক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। প্রস্তাবিত এ মার্বেল ফ্যাক্টরিতে সউদী উদ্যোক্তাদের একটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আসছে। সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে নির্মিত এ ফ্যাক্টরির উৎপাদিত উন্নতমানের কালচার্ড মার্বেল ইউরোপ-আমেরিকার উল্লেখযোগ্য বাজার দখল করবে। বিনিয়োগ বোর্ড কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই এ ফ্যাক্টরি চালুর জন্য অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু একজন অসাধু কর্মকর্তার অসহযোগিতা ও  চক্রান্তে চার দেশীয় যৌথ উদ্যোগের বিদেশী বিনিয়োগের এ ফ্যাক্টরির প্রক্রিয়া এখনো লাল ফিতার দৌরাত্বে ঘুরপাক খাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিনিয়োগের সাথে সম্পৃক্ত একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাবিত উল্লেখিত ফ্যাক্টরি যাতে দ্রুত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেতে পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Harun ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ২:১৫ পিএম says : 2
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাবিত উল্লেখিত ফ্যাক্টরি যাতে দ্রুত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেতে পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
Total Reply(0)
Laboni ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ২:২৩ পিএম says : 0
জনশক্তি রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে সউদী আরব।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন