হাসান সোহেল : সহসাই হচ্ছে না নার্সদের পদায়ন। নার্সদের ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদা দিলেও এখনও এ সম্পর্কিত কোন নীতিমালা তৈরি হয়নি। যদিও নীতিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ভেটিং হওয়ার পর পিএসসি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলোচনার মাধ্যমে পদায়নের সময় নির্ধারণ করবে। আর তাই আইনের মারপ্যাঁচে নার্সদের পদায়নে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর সুপারিশক্রমে মোট ৯ হাজার ৪৮৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর এক মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় সাড়ে ৯ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্সকে কবে পদায়ন করা হবে তা জানে না সেবা অধিদফতর। অথচ দীর্ঘদিন থেকে সরকারি হাসপাতালে নার্সের ব্যাপক সংকট রয়েছে। এ সংকট দূর করতে অনতিবিলম্বে নার্স নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। যদিও ঈদ-উল আযহার আগে এক সঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক নার্স নিয়োগকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার বলে মন্তব্য করেছিলেন। সরকারি চাকরি পেয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত নার্সরাও খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলেন। তবে খুব শিগগির এ পদায়ন না হওয়ায় অনেকটা হতাশ নার্সরা।
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত একাধিক নার্স বলেন, চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর থেকে সেবা অধিদফতরে কবে নাগাদ পদায়ন হবে তা জানতে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তারা কোন সদুত্তর পাননি।
সেবা অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরিতে যে কোন চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর নিয়োগপ্রাপ্তরা কোন ধরনের রাষ্ট্রীয় কিংবা ফৌজদারি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি কিনা তা জানতে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমেও নার্সদের দৈহিক ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়। তিনি জানান, নার্সরা ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা বিধায় পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য চিঠি লিখবে পিএসসি। পিএসসি এখনও পর্যন্ত পুলিশ বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত কোন চিঠি দেয়নি বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
এদিকে পিএসসি ৯ হাজার ৪৮৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করলেও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০ হাজার নার্স নিয়োগের নির্দেশ পালন করতে চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদিও সার্টিফিকেট বা অন্যান্য কাগজপত্রে ভুল থাকায় চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে না পারা ১২৫ জন নার্সের তথ্য চেয়েছে পিএসসি। এটা হলে পিএসসি’র চূড়ান্ত নার্স নিয়োগের তালিকা দাঁড়াবে ৯৬০৯ জনে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে আরও কিছু নার্স নিয়োগ দিতে চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কারণ, অনেক সিনিয়র নার্স পিএসসি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। যাদের চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে। পিএসসি’র সাথে এ নিয়ে আলোচনাও চলছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্ভরশীল সূত্র জানিয়েছে। তবে পিএসসি এই নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ না করলে এডহক ভিত্তিতে আরও ৫শ’ নার্স নিয়োগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০ হাজার নার্স নিয়োগের কোটা পূরণ করা হবে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে। এক্ষেত্রে যে সব নার্সদের চাকুরীর বয়সসীমা অতিক্রম করেছে বা করবে তাদেরকে প্রমার্জনার মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে।
এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোতে নার্সের ব্যাপক সংকট রয়েছে। পাশাপাশি দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ১জন করে চিকিৎসক ও ২ জন করে নার্স নিয়োগের নির্দেশনা রয়েছে। সূত্র মতে, গত আগস্ট পর্যন্ত দেশে ১৩ হাজার ৩২৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে খুব শিগগিরই ৫০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ২জন করে নার্স নিয়োগ করা হলে আগামীতে বিপুল সংখ্যক নার্সের প্রয়োজন হবে। এছাড়া দেশের অন্যান্য সরকারী হাসপাতালগুলো চালু করতেও বিপুল পরিমাণ নার্স দরকার বলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুভাষ চন্দ্র সরকার ইনকিলাবকে বলেন, পিএসসি এখনো চূড়ান্ত তালিকা দেয়নি। একই সঙ্গে এখনো কোনো নীতিমালা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই পদায়নের বিষয়টি পিএসসি’র উপর নির্ভর করছে। তারা যখন নির্দেশনা দিবে তখনই বাস্তবায়ন হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন