সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বগুড়ায় অস্থির চালের বাজার

প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : তিন মাস ধরে অস্থির বগুড়ার চালের বাজার। দাম বাড়ছে প্রতিদিন। কৃষি বিভাগ বলছে, বিগত ১২ বছর ধরে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও বগুড়া নিয়ে গঠিত কৃষি অঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। খাদ্য বিভাগ বলছে বগুড়ার গোডাউনে ধান-চাল রাখার জায়গা নেই । কিন্তু তারপরও অস্থির বগুড়ার চালের বাজার!
বগুড়া শহরের মালতীনগর বখশী বাজারের মুদি দোকানী রতন জানালো, তার ব্যবসায়িক জীবনে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম এভাবে বাড়তে দেখেনি। তার ভাষায়- “গত রোজার মাসে পাইকারী পর্যায়ে কেজিতে এক টাকা প্রকার ভেদে ২ টাকা দাম বাড়ে। তখন ভেবে ছিলাম হয়তো ঈদ মার্কেট হিসেবে এই হঠাৎ বৃদ্ধি, ঈদ চলে গেলে দাম পড়ে যাবে আবার। কিন্তু ঈদের পরে কোরবানী ঈদ চলে আসার পর প্রথমে মোটা চালের দাম ২২/২৪ থেকে এক লাফে ৩২/৩৪-এ গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বাজার থেকে মোটামুটিভাবে মোটা চাল উধাও হয়েই গেল। ফলে ৩২ টাকার বিআর ২৮ চাল যেটা সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের পছন্দের চাল তা’ বেড়ে ৪২ টাকায় উঠলো। প্রায় একমাস হয়ে গেল বিআর ২৮-এর কেজি বগুড়ায় ৪২ টাকাতেই স্থির হয়ে আছে।”
একই বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজার, রাজা বাজার, কালিতলা হাট, খান্দার বাজারের চালের খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতা পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল বর্তমানে চালের উৎপাদন প্রক্রিয়ার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে অটো রাইস মিল মালিকরা। এই অটো রাইস মিল মালিকরা শত শত কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে তার সামান্য অংশ মিল প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করে বাকি টাকা বিভিন্ন ২ নম্বরী কাজে ব্যবহার করছে। তারা বোরো ও আমন মওসুমে ইচ্ছাকৃতভাবে ধানের দর ফেলে দিয়ে চাষীদের ঠকিয়ে কম দামে ধান কিনে নেয়। এর আগে ধান-চাল কেন্দ্রিক যে হাজার হাজার চাতাল গড়ে উঠেছিল ধান উৎপাদনভিত্তিক অঞ্চলগুলোতে কৌশলে তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে অটো রাইস মালিকদের গুটিকয় পুঁজিপতি। ফলে বগুড়াসহ সারা দেশের চালের বাজার এখন পুরো পুরি জিম্মি হয়ে গেছে অটো রাইস মালিকদের হাতে। তারাই মূলত সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষের মুখের অন্নকেও পুঁজি কামানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারেও দ্বিধা করছে না।
তবে অটো রাইস মিল মালিকরা বলছে, আগে চাল নয়, মূলত ধানের দাম বেড়েছে আগে। কারণ তাদের এখন বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে বলেই চালের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। তবে তারা যে দামে পাইকারী বাজারে চাল দিচ্ছেন খুচরা পর্যায়ে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে কেন চাল বিক্রি হচ্ছে তা বোধগম্য নয় তাদের কাছেও?
অন্য একটি সূত্র বলছে, বিগত বছরগুলোতে ধান/চালের বাজার সুস্থির থাকায় সরকার উৎপাদক চাষীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে চালের আমদানী শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছে। এর ফলে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে চাল আমদানী বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু আমদানীকারক/অটো রাইস মিল মালিকরা বাজারে চালের কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়ে তাই আবার চালের আমদানী শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সরকারকে বাধ্য করতে চাচ্ছে।
অন্যদিকে কিছু ব্যাংক ও এলসি মার্জিন বাবদ কমিশন/ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসের কারসাজির মাধ্যমে সুবিধা নিতেও আমদানীকারকদের উৎসাহিত করছে। কারণ ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে চাল/ডাল আমদানীর মাধ্যমে অনেক শুভংকরী চাল চলে। কিন্তু চাল আমদানী বন্ধ থাকায় এখন তা আর হচ্ছে না ।
তবে মোটা চালের ক্রেতারা বলছেন, আমরা আমদানী- রফতানী, এলসি- ওভার-ইন-ভয়েস আন্ডার ইন ভয়েস- এর নামে চলমান নানান শুভংকরী ফাঁকি জানি না, বুঝিনা , বুঝতেও চাইনা। আমরা শুধু চাই, সরকার চালের বাজারে সৃষ্ট অস্থিরতা দূর করে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনুক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন