রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নেই সিটিস্ক্যান ও এমআরআই মেশিন তবুও চলছে ঢামেক

প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : দেশের চিকিৎসাসেবার কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দু’মাস যাবত নেই সিটিস্ক্যান ও এমআরআই মেশিন। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই মেশিন দু’টি ছাড়াই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। মেশিন দু’টি বিকল হওয়ায় রোগীদের একদিকে যেমন মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তেমনি অস্বাভাবিকভাবে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মতে, রোগীদের বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়। এতে গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি টাকা। একই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ভোগ। তাদের মতে, মেশিন নষ্ট হওয়ায় রোগী নিয়ে বাইরের ক্লিনিক ও হাসপাতালে যাওয়া-আসা করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্বজনরাও। এদিকে নষ্ট মেশিনের সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণীর দালালচক্র। তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বারবার তাগিদ দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা কার্যকর হচ্ছে না। রেডিওলজি এবং ইমেজিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, মেশিনটি নষ্ট হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই রোগীদের সেবা প্রদান করা যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালের একটি যন্ত্র নষ্ট হলে তা ঠিক করতে নানা ধরনের আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয়। এসব করতেই অনেকটা সময় চলে যায়।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) প্রফেসর ডা. সামিউল ইসলাম সাদী ইনকিলাবকে বলেন, দু’সপ্তাহের মধ্যেই নতুন একটি সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই মেশিন দেয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলে। হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিনটি মেরামত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এটাও প্রদান করা হবে। এখন থেকে দুটো সিটি স্ক্যান মেশিনে কার্যক্রম চলবে। একই সঙ্গে দুটো এমআরআই মেশিন হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। নষ্ট এমআরআই মেশিনটি মেরামতের পরে নিতে পারবে অন্যথায় নতুন একটি মেশিন দেয়া হবে। তিনি জানান, নতুন মেশিন দুটির শিপমেন্ট ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। গত জুন মাসের মধ্যে টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। যদিও মেশিন বসানোর স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের নতুন ভবনে একটি সিটি স্ক্যান ও ১টি এমআরআই মেশিন বসানোর পরিকল্পনা আছে বলে জানান ডা. সামিউল ইসলাম সাদী।
এদিকে কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান এবং ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) মেশিন নষ্ট হওয়ায় রোগীরা সেবা বঞ্চিত হলেও হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে ক্যান্সার নির্ণয়ের মেমোগ্রাফি মেশিন থাকতেও সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা। আড়াই বছর ধরে খুবই উন্নতমানের এ মেশিনটি অব্যবহৃত পড়ে আছে। জানা গেছে, শুধুমাত্র একজন মহিলা টেকনোলজিস্ট না থাকায় এ মেশিনটি পড়ে আছে। মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক মেমোগ্রাফি পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বলা হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন ঢাকা মেডিকেলের রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সিটি স্ক্যান মেশিনের কক্ষের সামনের কলাপসিবল গেটে তালার নিচে কাগজে লেখাÑ ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিটি স্ক্যান মেশিনটি বন্ধ’। এদিকে মেশিন নষ্টের সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণীর দালালচক্র। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক টেকনিশিয়ান বলেন, ঢাকা মেডিকেল থেকে যারা বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই করার জন্য রোগী পাঠাচ্ছেন, তারা ওই ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিক থেকে ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন। এর সুযোগ নিচ্ছেন হাসপাতালের আনসাররাও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই থেকে ইমেজিং বিভাগে সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট থাকায় রোগীরা সহজলভ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে পারছেন না। মেশিনটি ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিয়ে থাকে। ভর্তি ও বহির্বিভাগের রোগী মিলিয়ে দিনে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০ সিটি স্ক্যান করা হয় এ মেশিনে। মেশিন নষ্ট থাকায় তাদের বেসরকারি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে উচ্চ মূল্যে সিটি স্ক্যান করাতে হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেলে মাথা ও বুকের সিটি স্ক্যান করাতে ২ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। কিন্তু বাইরের যে কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে বা ক্লিনিকে এ পরীক্ষা করাতে মাথার জন্য ৪ হাজার এবং বুকের জন্য ৭ হাজার টাকা গুনতে হয়। কোনো রোগীর ‘হোল এবডোমিন’ সিটি স্ক্যান করাতে যেখানে ঢামেক হাসপাতালে লাগে ৪ হাজার টাকা, সেখানে অন্যত্র লাগে ১২ হাজার টাকাÑ সাধারণ গরীব রোগীদের পক্ষে যা একেবারেই অসম্ভব। এছাড়া মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের শুধু সিটি স্ক্যান করতে ঢাকা মেডিকেল থেকে যেতে অ্যাম্বুলেন্স বা সিএনজি খরচ হয় আরও ৫০০ থেকে হাজার টাকা।
একই অবস্থা এমআরআই মেশিনের ক্ষেত্রেও। প্রতিদিন গড়ে ২০ জন রোগী এমআরআই সেবা পেতেন। যদিও প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ রোগীর চাপ থাকে। ঢাকা মেডিকেলে এমআরআই ফি ৩ হাজার হলেও বাইরের বেসরকারি হাসপাতালে এ ফি সাড়ে ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা নেয়া হয়। আবার ঢাকা মেডিকেলে প্রতিদিন দুই থেকে চারজন গরীব রোগী বিনা ফিতে এমআরআই সুবিধাও পেতেন। সেখানে রোগীরা গত দু’মাস ধরে পরীক্ষাটি করাতে পারছেন না। এখন ঢামেক হাসপাতালের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে পরীক্ষাটি বাইরের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হচ্ছে তাদের।
সূত্র মতে, ঈদ-উল আযহার ছুটির আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানায় আগুন ও ভবন ধসের পর আহত অনেক শ্রমিককে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে গুরুতর আঘাত পাওয়া শ্রমিকদের সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করা নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। হাসপাতালের দু’টি যন্ত্রই অচল থাকায় পরীক্ষার জন্য তাদের অন্য হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২ হাজার ৬০০ শয্যার হাসপাতালটির ইনডোরেই প্রতিদিন রোগী থাকে সাড়ে ৩ হাজারের মতো। এছাড়া বহির্বিভাগে নতুন এবং পুরনো রোগী মিলিয়ে আরও ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার রোগী হয়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকে প্রায় ১ হাজার রোগী। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার রোগীর সমাগম হয় এ হাসপাতালে। এর মধ্যে আঘাতজনিত সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুইশ’ রোগী ভর্তি হয় নিউরোসার্জারি বিভাগে। সিটিস্ক্যান ও এমআরআইয়ের জন্য তাদের যেতে হয় অন্য কোনো হাসপাতালে। ইমেজিং বিভাগের একজন টেকনিশিয়ান পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, দুটো মেশিন নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বিভাগীয় প্রধানদের জানানো হয়েছে। বিভাগীয় প্রধান হাসপাতাল পরিচালককে দুটো মেশিন মেরামত করে দেওয়ার কথা বলেছেন। আজও তা মেরামতের উদ্যোগ না নেয়ায় রোগীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা মেডিকেলে রোগীর অনুপাতে কমপক্ষে তিনটি করে সিটিস্ক্যান ও এমআরআই মেশিন দরকার। কিন্তু এখন একটিও কার্যকর না থাকায় ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে চিকিৎসা সেবায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আবদুল গনি বলেন, সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই মেশিনটি মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। মেরামতের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা নতুন একটি সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন পেয়ে যাচ্ছি। অন্যটিও মেরামত শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাবো।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন