বগুড়াকে বলা হয় উত্তরাঞ্চলের রাজধানী। বগুড়া হয়েই রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে যাতায়াত করতে হয়। বগুড়ার দই বলতে জিভে পানি আসবেই। বাইরে থেকে কেউ বগুড়ায় এলে দই না নিয়ে ফিরেছেন- এমন কথা কেউ শুনেনি। অপরদিকে বগুড়ার কেউ বাইরে গেলে অফিসের বস, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গেলে সঙ্গে দই থাকবেই।
বগুড়ার ১২টি উপজেলাতেই এখন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান দই প্রস্তুত করছে। সমগ্র জেলাতেই দই বা একযোগে দই মিষ্টির সেলিং পয়েন্ট এবং শো’রুমের সংখ্যা ছয় শতাধিক হবে। আর দিনে গড় বিক্রির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। মাসে ১৫০ কোটি এবং বছরে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার দই বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়ার দইয়ের চাহিদার কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক শহরেই এখন শো’রুম বা বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এটি একদিকে যেমন আশাপ্রদ খবর অন্যদিকে আশঙ্কারও বটে! টানা চার দশক ধরে দই ব্যবসার সাথে জড়িত একটি ঘোষ পরিবারের এক সদস্য জানান, দুই দশক আগেও বগুড়ায় ১০/১৫টি প্রতিষ্ঠান দই উৎপাদন ও বিপণনের সাথে জড়িত ছিল। তখন দইয়ের উৎপাদন পরিমাণে কম হলেও মানের কোন কমতি ছিল না।
তিনি বলেন, মূলত বগুড়ার দইয়ের সুনামও ওই সময়েই সারাদেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। শোনা যায় বগুড়ার নবাববাড়ির সন্তান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে দই খাইয়ে মুগ্ধ করেছিলেন। আইয়ুব খান আবার বৃটেনের রাণী এলিজাবেথকে দই পাঠিয়ে কূটনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন।
দইয়ের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ও কালোটাকার মালিক নিরাপদ খাত হিসেবে নেমে পড়েছে দইয়ের ব্যবসায়। এরা ১ কেজির দামে যে দই বিক্রি করছে তাতে প্রকৃত দই থাকছে ৭০০ গ্রাম। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার চেয়েও কম। আগে ১ কেজির ১টি সরা বা বারকির দই বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে ৮/১০ জনকে খাওয়ানো যেত। বর্তমানে মাত্র ৪/৫ জনকেও তুষ্ট করা যায় না। ক্রেতাদের এমন অভিযোগ বর্তমানে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছে যে, ৮/১০ দিন পর্যন্ত দই একই রকম থাকে সেজন্য প্রিজারভেটিভ হিসেবে ফরমালিন ব্যবহার করছে এক শ্রেণীর কিছু দই প্রস্তÍুতকারক। বগুড়ার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে একাধিক দই এর শো’ রুম রয়েছে। যাত্রীরা এখান থেকে দই নিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যান। আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় দই প্রস্তুতকারক ওজনে কম দেওয়াসহ ফরমালিন মিশিয়ে জালিয়াতি করে চলেছে। ভোক্তা অধিকার বিধি অনুযায়ী দই ও মিষ্টির দাম নির্দিষ্ট স্থানে লেখা থাকার কথা। আর সেটি বড় দু’চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউই মানছে না। ফলে দই ও মিষ্টান্ন সামগ্রী উৎপাদনে এখন নিম্ন মানের গুঁড়াদুধ ব্যবহার হয়। মূলত বস্তার গুঁড়া দুধের ব্যবহারই হয় বগুড়ায় দই উৎপাদনে। সবচেয়ে মারাত্মক হল প্রিজারভেটিভ এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বগুড়া পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শাহ আলী জানান, অচিরেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দই-মিষ্টিতে অসৎ ব্যবসায়ীরা ফরমালিন মেশায় কি না সেটি তদন্ত করা হবে। একই সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালনো হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন