শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চীনা সহায়তায় সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর অনিশ্চিত

প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বহির্নোঙর-বহিঃসমুদ্র ও কক্সবাজার শহরের অদূরে মহেশখালী দ্বীপের সাথে লাগোয়া সোনাদিয়ায় (উপদ্বীপ) বঙ্গোপসাগরের মহিসোপানের মুখে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর বা ডীপ সী পোর্টের বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আর্থিক, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সার্বিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের এই মেগা প্রকল্পে সম্পৃক্ত হতে চীন অনেক আগে থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু চীনের এ ব্যাপারে আগ্রহকে কাজে লাগানোর কোন উদ্যোগই এখন অবধি নেয়া হয়নি। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশকে যুক্ত করে একটি কনসোর্টিয়াম ধাঁচে অর্থায়নের দিকেই তাকিয়ে আছে। সেই কনসোর্টিয়ামে ভারতের প্রস্তাবেরও প্রত্যাশা রয়েছে। তবে এ ধরনের কোন কনসোর্টিয়ামের জন্য এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বা সাড়া মিলেনি। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন এবং সামুদ্রিক বাণিজ্যের বিশ্বায়নের (ব্লু-ইকোনমি) জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী, অত্যাবশ্যক ও উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এই মেগা প্রকল্পটি অনিশ্চিত অবস্থায় ঝুলে আছে।
আগামী ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দুই দিনের ঢাকা সফরকালে বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া পয়েন্টে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নে চীনা সহায়তার বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। পোর্ট-শিপিং সার্কেলের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মেগাপ্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের বৃহৎ সমুদ্রবন্দর অবকাঠামো বাংলাদেশের জন্য সময়ের প্রয়োজনেই অপরিহার্য।
আন্তর্জাতিক শিপিং যোগাযোগ ও বাণিজ্যের ক্রমাগত চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে এক দশক পূর্বে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের পরিপূরক হিসেবে কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপদ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি সরকারের অগ্রাধিকারমূলক মহাপ্রকল্পের বিবেচনায় রাখা হয়। এর ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়। ৫টি ধাপে এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে বন্দর বিশেষজ্ঞরা প্রাক্কলন করেছিলেন। তারা দৃঢ়তার সাথে বলেন, ব্যয় বা বিনিয়োগের তুলনায় বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক ও ভূকৌশলগত অবস্থানের কারণে গভীর সমুদ্রবন্দর হবে নিশ্চিত লাভজনক। বিনিয়োগ উঠে আসবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই। অথচ গভীর সমুদ্রবন্দর (ডীপ সী পোর্ট) প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এখন পর্যন্ত সরকার ও দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নের ব্যাপারে কোনোই অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটেও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ খাতে কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি। চীন সুনির্দিষ্টভাবে কয়েক দফায় প্রস্তাব দিয়ে এসেছে। তবে চীনের সাথে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এ যাবৎ নেয়া হয়নি কার্যকর কোন পদক্ষেপ। অথচ চীন সরকার বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে একাধিকবার আশ্বাস প্রদান করেছে। ইউনান প্রদেশ, কুনমিং সিটিসহ চীনের পশ্চিমাঞ্চলের পণ্যসামগ্রী শিপিং পরিবহন সুবিধা পেতে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরটি ব্যবহারের জন্য চীন গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে।
মহাপ্রকল্পে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মিত হলে দেশি-বিদেশি আমদানিকৃত তথা বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই সমুদ্রবন্দর ব্যবহারকারী দেশসমূহের জন্য প্রতিবছর এক কোটি টিইইউএস কন্টেইনারবাহী ট্রান্সশিপমেন্ট এবং ট্রানজিশনাল পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। গভীর সমুদ্রবন্দরে ট্রানজিশনাল কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের তুলনায় শিপিং খরচ কমবে প্রতি মেট্রিক টন ও কন্টেইনারে এক থেকে দেড় হাজার ডলার হারে। ট্রান্সজিশনাল বা ট্রান্সশিপমেন্ট ডীপ সী পোর্ট হিসেবে এই সমুদ্রবন্দরের উপযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুধুই নয়; অস্ট্রেলিয়া, হংকং, চীন, মালয়েলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, থাইল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া ও ইউরোপের অনেক অঞ্চল থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামবে গভীর সমুদ্রবন্দরের কর্মকোলাহলকে ঘিরে। বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে বড় আকর্ষণ হবে পাহাড়-সাগর, নদ-নদী, উপত্যকা ঘেরা সবুজ ছায়া সুনিবিড়ি বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলটি। তবে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন অনিশ্চিত হলে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার মহাসুযোগ থেকে বাংলাদেশ সুবর্ণ সময় হারিয়েই খুব দ্রুত ছিটকে পড়বে।
চীন বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন ও এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সৃজনের ব্যাপারে ২০১০ সাল থেকেই সবুজ সংকেত দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের সময়ও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। তবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছ থেকে দাপ্তরিক প্রক্রিয়ায় এখনও তেমন অগ্রগতি বেরিয়ে আসেনি। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার সুবিশাল সমুদ্রবন্দর কলম্বোর পর ইতোমধ্যে বর্ধিত অবকাঠামো নিয়ে ‘হামবানটোটা’ গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হতেই এটি ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে এবং বাংলাদেশকেও সেই গভীর সমুদ্রবন্দর (হামবানটোটা) সুবিধা গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শ্রীলঙ্কান সরকারের তরফ থেকে। চীন শ্রীলঙ্কায় এই গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। চীনা সহযোগিতায় একইভাবে মিয়ানমারও অচিরেই একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পরিপূরক হিসেবে এবং বাংলাদেশের জন্য একমাত্র ও বিশ্বায়নে অপরিহার্য কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা অনিশ্চিত ঝুলে আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
নাসির উদ্দিন ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৫৪ পিএম says : 0
চীনের ব্যাপারে আগ্রহকে কাজে লাগানোর কোন উদ্যোগই এখন অবধি নেয়া হয়নি কেন?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন