মাহফুজ মন্ডল ও আল আমীন মন্ডল : চারশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় যমুনা নদী থেকে ধরে আনা ৭০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছের দাম হাঁকা হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। ওই মাছ একজনের পক্ষে কেনার সাধ্য না থাকলেও একনজর দেখার সাধ সবারই ছিল। বুধবার সকাল থেকে বিকেল অবধি সেখানে ক্রেতা ও দর্শকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
পোড়াদহ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি ঐতিহাসিক স্থানের নাম। এটা বগুড়া শহর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে পোড়াদহ নামকস্থানে সন্যাসী পূঁজা উপলক্ষ্যে প্রায় ৪শ’ বছর পূর্ব থেকে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা হয়ে আসছে।
মেলার মূল আকর্ষণ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ, মিষ্টি, কাঠের তৈরি ফার্নিচার। এছাড়াও শিশুদের খেলনা, আসবাবপত্র, কৃষি সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য হাট-বাজারের মতই বেচাকেনা হয়। মেলায় নাগরদোলা, সার্কাসসহ শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
বুধবার মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মঙ্গলবার থেকেই মাছ, মিষ্টি ও কাঠের ফার্নিচার পৌঁছে। বুধবার ভোর থেকেই মূল আকর্ষণ বড় আকৃতির মাছ মেলায় আসতে থাকে।
মাছ ব্যবসায়ী আব্দুস সবুর জানান, যমুনা নদী থেকে এবার বাঘাইড় প্রজাতির ৭০ কেজি ওজনের একটি মাছ আনা হয়। প্রতি কেজির দাম ১৮০০ টাকা হিসেবে দাম হাঁকা হয় এক লাখ ছাব্বিশ হাজার টাকা। ৪০ জন ব্যক্তি এই মাছ কেনার পর তা কেটে কেটে ভাগ করে নিয়েছে বলে জানা যায়। মেলায় আসা অন্যান্য মাছের মধ্যে রয়েছে, প্রতি কেজি কুড়াল মাছ ৭৫০ টাকা, বোয়াল মাছ, ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা, রকেট মাছ ৩০০০ থেকে ৬০০ টাকা, গাং চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া মেলায় বিশাল আকৃতির আইড় মাছ, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ হরেক রকম মাছ দেখা গেছে। মাছ কিনতে বগুড়ার ১২ উপজেলার মানুষসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লক্ষাধিক মানুষ মেলায় আসেন।
এদিকে মেলা উপলক্ষ্যে যানবাহন ভাড়া ও চাঁদা আদায় বেড়েছে অস্বাভাবিকহারে। এ রুটের একজন যাত্রীর নিকট থেকে বছরের অন্যান্য সময় সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নেয়া হয় ১৫ টাকা। কিন্তু মেলা উপলক্ষে নেয়া হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সেই সাথে প্রতি সিএনজি অটোরিকশার চাঁদা ঐ রুটে অন্য সময় দিনে ৩৫ টাকা নেয়া হলেও এখন নেয়া হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। উল্লেখ্য, একই স্থানে পরদিন বৃহস্পতিবার হবে বউ মেলা। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার ও ফাল্গুন মাসের প্রথমদিন মেলা হয়ে থাকে। মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এক দিনের মেলা হলেও চলে তিন দিন পর্যন্ত। মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।
এলাকাবাসী জানান, ঈদ উৎসবে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত না দিলেও পোড়াদহ মেলায় দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে খাওয়ানো হয়। তাই আত্মীয়-স্বজনের পদভারে এখন পোড়াদহ এলাকা মুখরিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন