কুড়িগ্রামে চলতি মৌসুমে পক্ষকাল ব্যাপী বন্যায় শুধুমাত্র কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৩১ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৯ জন কৃষক। এছাড়াও পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় মৎস্য বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৭৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২৬ জন মাছচাষী। পুকুর ডুবে গেছে ২৯১টি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা আমনের। সারা জেলায় এবার ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত ছিল। এর ফলে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৭৯৬ হেক্টর রোপা আমন এবং আংশিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫ হাজার ৪শ’ হেক্টর। শাকসবজি চাষিরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পানির নিচে থাকা ১ হাজার ১৯৫ হেক্টর সবজির মধ্যে ৬১ হেক্টর শাক-সবজি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। অপরদিকে ৬৭ হেক্টর বীজতলা পচে সম্পূর্ণ চাষের অনুপযোগী হয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদর, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও উলিপুর উপজেলা। উপজেলা ভিত্তিক ফসলের ক্ষতি হয়েছে সদরে ৭৯২ হেক্টর, চিলমারীতে ৫১৪ হেক্টর, নাগেশ্বরীতে ৪৯৫ হেক্টর, উলিপুরে ৩৯৮ হেক্টর, রৌমারীতে ৩০৮ হেক্টর, চর রাজিবপুরে ১৬২ হেক্টর, ফুলবাড়ীতে ১২৫ হেক্টর, ভুরুঙ্গামারীতে ১২০ হেক্টর ও রাজারহাটে ১০ হেক্টর। এর ফলে রোপা আমনচাষে ১ লাখ ৩৯০ জন কৃষকের ২৯ কোটি ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ৪ হাজার ৪৯৫ জন শাক-সবজি চাষির ১ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং ২৮ হাজার ৬৯৪ জন বীজতলা কৃষকের ৭০ লাখ ৩৫ হাজার টাকাসহ মোট ১লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৯ জন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় ৪৪ দশমিক ৬০ হেক্টর আয়তনের ২৯১টি পুকুর প্লাবিত হয়ে ৬৪ দশমিক ৬০ মে. টন মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬২ জন মাছচাষি। টাকার অঙ্কে মোট ক্ষতি হয়েছে ৭৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার জানান, এবারের বন্যায় গো-চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদি পশুর জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারীতে এই ক্ষতিটি বেশি হয়েছে। সরকার ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে ৩১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকার গো-খাদ্য প্রণোদনা দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, বন্যায় কৃষকদের একটা আগাম প্রস্তুতি থাকে। পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে অনেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। চর এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা স্থানীয় জাতের ধান ছিটিয়ে নতুন করে বপন শুরু করেছে। এছাড়াও সরকারিভাবে যে বীজতলা করে দেয়া হয়েছে, সেখান থেকেও কৃষক বীজ নিয়ে কাজে লাগাচ্ছে। এতে করে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত ৩৭০ মে.টন চাল ও ২০ লক্ষ টাকা এবং শিশু খাদ্য ১০ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকার উপ-বরাদ্দ উপজেলাগুলোতে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৩৩৩ নম্বরে সহযোগিতার জন্য ১ কোটি ৫৯ লাখ মজুদ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন