মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে ২৪ কোটি টাকার গবেষণা প্রকল্প
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের পিছিয়ে পড়ার পেছনে ৬ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে। কারণগুলো হচ্ছেÑ চামড়া সংগ্রহে সমন্বয়হীনতা, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা, ইটিপি না মেনে উৎপাদন যাওয়া, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, সরকার ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয় না থাকা এবং পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গবেষণার অভাব।
মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সরকার এ শিল্পের গবেষণার জন্য ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। চামড়া শিল্প গবেষণা ইন্সটিউটের মাধ্যমে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তাফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি পশুর চামড়া সঠিকভাবে যেন ছাড়ানো হয় তার উপর জোর দেন। এজন্য কসাইদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। তার মতে, চামড়া শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণমূলক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে।
জানা গেছে, তৈরি পোশাকের পরই দ্বিতীয় প্রধান রফতানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। কাঁচামাল হিসেবে দেশি চামড়ার ব্যবহার হওয়ায় সর্বোচ্চ মূল্য সংযোজন হয় এ খাতে। রফতানিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা এবং মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে এ খাত। তবে চামড়া শিল্পের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অংশ এখনও ১ শতাংশেরও কম। টানা দুই অর্থ-বছরে কমার পর গত অর্থ-বছরে সামান্য ব্যবধানে আয় বাড়লেও নাজুক অবস্থা কাটেনি। এত অনুকূল অবস্থায়ও কেন উঠে দাঁড়াতে পারছে না চামড়া ও চামড়া শিল্প, সে বিষয়ে একটি নিবিড় গবেষণা চালানোর সময় এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, চামড়া শিল্প এখন দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প খাত। ক্রমবর্ধমান এ খাতের উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখন দরকার সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা। গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, রফতানিতে ভবিষ্যতে গার্মেন্টস শিল্প খাতের আয়কেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে চামড়া খাতের। কারণ, গার্মেন্টস শিল্পের রফতানি আয়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ টাকাই বিদেশে চলে যায় তুলা, সুতা, রং, বোতাম, চেইন, কাপড় আমদানি খাতে। কিন্তু চামড়া খাতের শতভাগ টাকাই দেশে থেকে যায়। কারণ, এর প্রায় সবই দেশে উৎপাদিত হয়। তবে গবেষণার মাধ্যমে আরও নতুন প্রযুক্তি আনতে পারলে দেশ স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাবে।
কিন্তু এ খাতের অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চমানের পণ্য তৈরিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন। এছাড়া কাক্সিক্ষত সাফল্য পেতে পুঁজির অভাব রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংকই এই খাতে অর্থায়ন করতে চায় না বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সুবিধাজনক অবস্থান তৈরিতে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা, সস্তা বস্তা, নিজস্ব কাঁচামালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, তৈরি পোশাকে বহুমুখী পণ্যের ব্যবহারের সুযোগে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য চিহ্নিত প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং বর্ধিত বিশ্বচাহিদা কাজে লাগাতে চামড়া ও চামড়া খাতে বড় আকারের বিনিয়োগের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন