স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল ২০১৬-এর ১৪ নম্বর ধারাটি মৌলিক অধিকার খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন বেসরকারি কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন-বাক-স্বাধীনতা সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই আইনের ১৪ অনুচ্ছেদ সংবিধানে স্বীকৃত চিন্তা, মত, বিবেক বিষয়ক মৌলিক অধিকার খর্ব করবে, যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষে বিলটিতে সম্মতি প্রদান না করার জন্য প্রেসিডেন্ট নিকট আহ্বান জানানো হয়। গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এ সব কথা বলেন। বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন আইন, ২০১৬’ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ ১৮টি বেসরকারি সংস্থা এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. সুলতানা কামাল বলেছেন, আইনটিতে স্বেচ্ছাসেবামূলক উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত ও বেসরকারি কর্মকা-কে নিয়ন্ত্রণে প্রয়াস রয়েছে। এছাড়া অযৌক্তিকভাবে একদিকে ব্যক্তি ও বেসরকারি সংস্থা এবং অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবামূলক ও দাতব্য কার্যক্রমসমূহকে নিয়ন্ত্রণে বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন আইন বাক-স্বাধীনতা সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই আইনের ১৪ অনুচ্ছেদ সংবিধানে স্বীকৃত চিন্তা, মত, বিবেক বিষয়ক মৌলিক অধিকার খর্ব করবে, যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষে বিলটিতে সম্মতি প্রদান না করার জন্য প্রেসিডেন্ট নিকট আহ্বান জানান তিনি।
সুলতানা কামাল আরো বলেন, এ আইনের খসড়া জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের দেখানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। আশা করা হয়েছিল আইনটি স্বৈরাচারী সরকারে আমলের তুলনায় অধিকতর গণতান্ত্রিক হবে। যাতে বেসরকারি খাত সরকারের সহায়ক হিসেবে অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহি হবে। এদিকে আইনটির ১৪ অনুচ্ছেদে সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সর্ম্পর্কে ‘বিদ্বেষমূলক ও অশালীন’ মব্য করলে সংশ্লিষ্ট এনজিও’র সনদ বাতিলের যে বিধান রাখা হয়েছে, তা অস্পষ্ট, অপব্যাখ্যাযোগ্য ও স্বেচ্ছাচারমূলক বলে মন্বব্য করেছেন সুলতানা কামাল। বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে অর্থায়ন, নারী ও শিশু পাচার, মাদক ও অস্ত্রপাচারমূলক অপরাধ নিয়ে অনুচ্ছেদ ১৪-তে অযৌক্তিভাবে বিধান করা হয়েছে। কারণ এসব অপরাধের জন্য প্রচলিত আইন রয়েছে। যার মাধ্যমেই শাস্তি প্রদান করা সম্ভব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংসদীয় কমিটি আমাদের সঙ্গে আলোচনায় যে খসড়া আইন নিয়ে বসেছিল সেখানে ১৪ ধারা ছিল না। মাদক, নারী ও শিশু পাচারের জন্য আলাদা আইন আছে। সেটি এই আইনে কেন আনা হলো?’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ১৪ ধারায় বলা আছে সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক অশালীন বক্তব্য দিলে প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এখানে বিদ্বেষ এবং অশালীন বক্তব্যের ব্যাখ্যা কী, তা সুস্পষ্ট না। সুতরাং এ আইনের অপব্যাখ্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে।
নারীনেত্রী খুশী কবির বলেন, এনজিওগুলোর মধ্যে কেউ জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সংযুক্ত কি না, তা নিয়ে আমরা খুবই সচেতন। ব্যক্তিগতভাবে কেউ জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সে জন্য একটি এনজিও দায়ী হতে পারে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ আইনের কারণে দাতারা শঙ্কিত। এনজিও ফোরাম শঙ্কিত। এটি একটি নিয়ন্ত্রণমূলক আইন। আলোচনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্র্যাক, গণসাক্ষরতা অভিযান, নিজেরা করি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ব্লাস্ট, বেলা, বাংলাদেশ নারী প্রগিত সংঘ, অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এইডসহ বেশ কয়েকটি এনজিওর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন