বিশেষ সংবাদদাতা : ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারের কারণে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) গ্রাহকদের অনেকেই বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) তথ্যানুযায়ী, তাদের ৭ লাখ ৫৩ হাজার ট্রান্সফরমার রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব ট্রন্সফরমারের মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার রয়েছে ওভারলোডেড। এ কারণে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির পাশাপাশি সিস্টেম লসসহ প্রায়ই নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন গতকাল বুধবার ইনকিলাবকে বলেছেন, ওভারলোডেড ট্রন্সফরমারের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে ৫.৪ পারসেন্ট ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড রয়েছে। বাকি যেসব ট্রান্সফরমার ওভারলোডের রয়েছে, এগুলোও মুক্ত করার জন্য ৭০ হাজার ট্রান্সফরমার ক্রয় করা হবে। এজন্য একনেকে একটি প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। আশা করি সহসাই প্রকল্পটি অনুমোদন হবে।
এদিকে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো তাদের ওভারলোডে ট্রান্সফরমার সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অনেক এলাকায় অধিক ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার খুলে নিয়ে কম ভোল্টেজ এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এ ধরনের ট্রান্সফরমারের কারণে পবিস আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে তারা। আর ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড হওয়ার কারণে নতুন নতুন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। এমন অবস্থায় ট্রান্সফরমার ওভারলোড মুক্ত করা জরুরি বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতিরা। তারা জানান, গ্রামপর্যায়ে অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কারণে বিতরণ ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড হয়ে পড়ছে।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. মোকলেস গনি ইনকিলাবকে বলেন, টাঙ্গাইলে ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারের সংখ্যা খুবই কম। আগামী এপ্রিলের মধ্যে তার এলাকায় ওভারলোডেড কোনো ট্রান্সফরমার থাকবে না।
জানা যায়, পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় ৭০ হাজার বিতরণ ট্রান্সফরমার ক্রয় বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হলে ডিসেম্বর ২০১৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিআরইবি। বিআরইবি’র ৬১টি জেলার ৭৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এলাকায় তা বাস্তবায়ন হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ওভারলোডেড বিতরণ ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি সিস্টেম লস কমানোসহ বর্ধিত বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর ফলে পবিসগুলোর অপারেশনাল ও আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হবে।
বিআরইবি জানায়, প্রতিটি আবাসিক গ্রাহকের লোড ১ কিলোওয়াট অতিক্রম করেছে। অতিরিক্ত গ্রাহক সংযোগের কারণে ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড হচ্ছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পের আওতায় চার হাজারটি ওয়ান ফেজ ১০ কেভিএ, ১৯ হাজারটি ওয়ান ফেজ ১৫ কেভিএ, ২৩ হাজারটি ওয়ান ফেজ ২৫ কেভিএ ও ১০ হাজারটি ওয়ান ফেজ সাড়ে ৩৭ কেভিএ বিতরণ ট্রান্সফরমার ক্রয় করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও ৫ হাজার ওয়ান ফেজ ৫০ কেভিএ, দুই হাজার ওয়ান ফেজ ৭৫ কেভিএ, পাঁচ হাজার থ্রি ফেজ ১০০ কেভিএ ও দুই হাজারটি থ্রি ফেজ ২০০ কেভিএ বিতরণ ট্রান্সফরমারও কেনা হবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ বিতরণকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফলতার সাথে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে ঘাটতি জনবল নিয়েই দ্রুততার সাথে প্রতিষ্ঠানটি তার গৃহিত সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের মধ্যেই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চায়। আর ২০২১ সালের মধ্যে বিআরইবি তার গ্রাহক সংখ্যা নিতে চায় ১ কোটি ৯০ লাখে।
এছাড়াও ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে সকল পেন্ডিং শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যেও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ব্যাপারে বিআরইবি’র চেয়ারম্যান বলেন, যেসব সমিতির কর্মকর্তাগণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংযোগ দিতে ব্যর্থ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে এখন বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রয়েছে। আগামীতে বাপবিবো প্রতিমাসে ৫ লাখ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে। সে সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন