শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ বাণিজ্য পরিষদ গঠন হবে

রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে ঢাকায় ইইউ’র প্রতিনিধিরা

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও এ থেকে উত্তরণের উপায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে দেশের প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার ও মত প্রকাশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। একইসঙ্গে ইইউ’র এ প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নতুন নির্বাচনের প্রস্তাব দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
তিন দিনের সফরের সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে সফরসূচিতে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কোনো সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রাখা হয়নি।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়রাম্যান সংসদ সদস্য জ্যাঁ ল্যামবার্ট। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন Ñ লেবার পার্টির সংসদ সদস্য রিচার্ড হাওতি, দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কবিষয়ক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটের সংসদ সদস্য আইভান স্টিফেনস এবং দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য ও যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য সাজ্জাদ করিম।
ইইউ প্রতিনিধিদলটি গতকাল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসংয়ের সঙ্গে বৈঠক দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। সন্ধ্যায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধিদলটি আজ বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। তবে ঢাকা ছাড়ার আগে তারা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পর এবারই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কোনো প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এলো। এর আগে ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি কেমন তা দেখতে জ্যাঁ ল্যাম্বার্টের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ২০১৪ সালের মার্চে ঢাকা সফর করেছিল।
ইইউর সঙ্গে যৌথ বাণিজ্য পরিষদ করবে বাংলাদেশ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল বা যৌথ বাণিজ্য পরিষদ গঠন করবে বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এই কাউন্সিল গঠিত হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আরো বেশি হারে ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের মধ্যে আটটি দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে রয়েছে। ইইউর পক্ষে ওই আটটি দেশ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্য হবে। আর বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি যেন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ বেসরকরি উদ্যোক্তাদের সংগঠনগুলোকে এই কাউন্সিলের সদস্য করা যায়, সে বিষয়ে ইইউ’র সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান তোফায়েল আহমেদ। বৈঠকে বাংলাদেশে যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলোতে ইউরোপের দেশগুলোকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি সম্পর্কে তার কাছে জানতে চেয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি তাদের বলেছি যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি শতভাগ বিনিয়োগবান্ধব। এখানে বিনিয়োগের নিশ্চয়তা ও উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। বিনিয়োগকৃত অর্থের মুনাফা শতভাগ বিনিয়োগকারীরা নিতে পারেন বলেও তাদের আশ্বস্ত করেছি।
কেউ যদি কোনো দেশে ট্যাক্স দিয়ে বাংলাদেশে কোনো পণ্য রপ্তানি করে বা বিনিয়োগ করে, তাহলে বাংলাদেশে তাকে আর নতুন করে ট্যাক্স দিতে হয় না। এ তথ্য প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা সম্পর্কে ইইউ প্রতিনিধিরা জানতে চাইলে মন্ত্রী তাদের বলেছেন, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স খুব শক্তভাবে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো তদারকি করছে। ৯৮ শতাংশ কারখানায় আন্তর্জাতিক মানদ- নিশ্চিত হওয়া গেছে, মাত্র ২ শতাংশ নিয়ে এখন কাজ চলছে, যা পূরণ করতে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে বলেও ইইউ প্রতিনিধিদলকে নিশ্চিত করেছেন তোফায়েল আহমেদ।
ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বাণিজ্যিক সুবিধা, যার আওতায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো অস্ত্র ছাড়া সব পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি না থাকলে কী হবে, এই প্রশ্ন উঠেছে। আমরা এটা আলোচনা করেছি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্য পদ্ধতি আছে। অন্য অনেক দেশকে ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা দেয়। আমরা ২০২১ সালে আপগ্রেডেশনের পরিকল্পনা করছি। প্রশ্নটা তখন উঠবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন