ছোট দোকান চালিয়ে ভালোই চলছিল শওকত আলীর সংসার। করোনার কারণে ছোট ব্যবসাটিও বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কয়েক মাস ধরে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড্ডা লিংক রোডে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন শওকত আলী। এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে তার কাগজপত্র নিয়ে যান।
মামলা না দিতে অনুরোধ করে পুলিশের কাছে গাড়ির কাগজপত্র ফেরত চান তিনি। কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে হতাশ হয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তবে পুলিশের দাবি, কাগজপত্র নিলেও শওকত আলীর মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেয়নি পুলিশ। মামলা দেয়ার আগেই তিনি গাড়িতে আগুন দিয়েছেন। এদিকে, শওকত আলীর মোটরসাইকেলে আগুন দেয়ার ভিডিওটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনা দুঃখজনক বলেছেন অনেকেই।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর নিচে মো. মিজান নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, বাস্তবতার করুণ চিত্র। মুকিমুল আহসান হিমেল নামের আরেকজন লিখেছেন, কতটা অসহায় হলে মানুষ এটা করতে পারে। অন্যদিকে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করে তা বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ)। গতকাল ডিআরডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ এ তথ্য জানান।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের ডিসি রবিউল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অফিস আওয়ারে গুলশানের লিংক রোডে যানজট হয়। মোটরসাইকেলগুলো রাস্তার পাশে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে রাখে, এতে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তাই দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট মোটরসাইকেল চালকদের কাগজপত্র নেন। কয়েকজনকে মামলা দেয়া হলেও শওকত আলীর মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেয়া হয়নি। মামলা দেয়ার আগেই তিনি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
ডিএমপি ডিসি (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, বাড্ডা থানা এলাকায় এক মোটরসাইকেল চালককে থামান দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট। কাগজপত্র ঠিক আছে কি না তা দেখতে চান। তখন ওই চালক কাগজপত্র না দিয়ে ক্ষিপ্ত আচরণ করেন। পরে তিনি নিজেই নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। প্রাথমিকভাবে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে মনে হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় কর্তব্যরত সার্জেন্টের দোষ আছে কি না সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
বাড্ডা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, শওকত আলীকে থানায় এনে ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছে, আগেও কয়েকটি মামলা হয়েছে তার গাড়ির বিরুদ্ধে। সোমবার যখন পুলিশ তার কাগজপত্র নিয়েছে, তখন তিনি হতাশা ও আবেগ থেকে গাড়িতে আগুন দিয়েছেন। শওকত আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ)-এর সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, বাড্ডার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। হয়রানির জন্য একজন চালক তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনাও যদি পুলিশকে নাড়া না দেয়, তাহলে কি আত্মহুতি দিলে তাদের বিবেক নাড়া দেবে? গাড়ি কোথাও ব্রেক করলেই সেখানেই ধরে ফেলে ট্রাফিক পুলিশ। সরকার আমাদের জায়গা নির্ধারণ করে দিক। তাহলে আমরা যত্রতত্র দাঁড়াবো না। আমাদের শহর অনুযায়ী যতটুকু জায়গা দেয়া যায় ততটুকু দেয়া হোক। যদি ১০টা স্পট দেয়া হয়, আমরা সেই ১০টাতেই দাঁড়াবো।
ডিআরডিইউ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা কয়েক দফা জানিয়েছি, কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠান আমাদের গ্রহণ করেনি। আমরা ষষ্ঠবারের মতো আন্দোলনে যাচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো। কোনও ভায়োলেন্সে বিশ্বাসী না।
ঘটনার ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই মোটরসাইকেলচালক মামলা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নিজের মোটরসাইকেলে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় আশপাশের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও তিনি তাদের বাধা দেন। এদিকে ঘটনার পর পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল ও শওকতকে বাড্ডা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, গত সপ্তাহেও আমাকে একটা মামলা দেওয়া হয়েছিল। সোমবার ট্রাফিক পুলিশ আবারও মামলা দিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। রাগ করতে গিয়ে নিজের গাড়িই জ্বালিয়ে দিলাম। পুলিশের কোনো দোষ নেই। ঢাকার কেরানীগঞ্জে স্যানিটারি পণ্যের একটি দোকান ছিল। করোনার কারণে গত দেড় বছর ধরে তার ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। একটি মোটরসাইকেল কিনে তিনি গত দুই-তিন মাস ধরে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন