বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

১ কোটি ২৪ লাখ ছাড়িয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

ব্যাংকিং খাতের নতুন সংযোজন এজেন্ট ব্যাংকিং দিন দিন প্রসার লাভ করছে। বিশেষ করে গ্রামে এর প্রসার দ্রুত বাড়ছে। আর এ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বেশির ভাগ গ্রাহকই গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারে গড়ে ওঠা এ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রামীণ মানুষের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা প্রায় এক কোটি ২৪ লাখ, যা মোট অ্যাকাউন্টের ৮৩ শতাংশ। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ আমানত নেয়া হচ্ছে, বিপরীতে তাদের মধ্যে বিনিয়োগ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৩১ জুলাই শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট আমানত সংগ্রহ হয়েছে ২০ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। কিন্তু বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ১০৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা মোট আমানতের শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ৭২ কোটি টাকা। এ বিনিয়োগ মোট আমানতের শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে জানিয়েছেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত নেয়া যতটা সহজ, ঋণ দেয়া ততটা সহজ নয়; কারণ একজন গ্রাহক সহজেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বা তাদের আউটলেটে এসে অ্যাকাউন্ট খুলে আমানত রাখতে পারেন। কিন্তু ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এজেন্টদের নিকটস্থ ব্যাংকের মূল শাখা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। গ্রাহকের ঋণতথ্য যাচাই-বাছাই করে ঋণ বিতরণ করতে অনেক ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণ হয়। আবার অনেকসময় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকের ঋণ দেয়ার শর্ত পরিপালন হয় না।
এ কারণেই হয়তো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণ কম বলে তিনি মনে করেন।
তবে এ বিষয়ে ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) প্রেসিডেন্ট আলী রেজা ইফতেখার এর আগে জানিয়েছেন, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একজন গ্রাহক স্বাবলম্বী হলে তার অর্থনৈতিক লেনদেনও বাড়ে, এর সরাসরি প্রভাব পড়ে ব্যাংকিং খাতের ওপর। কারণ ওই গ্রাহক ব্যাংকের মাধমেই তার লেনদেন সম্পন্ন করে থাকেন। ফলে ব্যাংকের লেনদেন বেড়ে যাবে। এ কারণেই গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো শক্তিশালী করতে ও সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ আমানত নেয়া হয় তার বেশির ভাগই তাদের মধ্যে বিতরণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন নতুন নতুন এজেন্ট ব্যাংকিং ও আউটলেট অর্থাৎ উপশাখার লাইসেন্স দেয়ার সময় অন্যতম শর্তই দেয়া হচ্ছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে হবে। এর প্রধান কারণ হলো, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ আমানত নেয়া হচ্ছে তা থেকে কোনো কোনো ব্যাংক নামে মাত্রও ঋণ বিতরণ করছে না। এ কারণেই এখন নতুন লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণের শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে, ওই সূত্র জানিয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের প্রধান অন্তরায় হলো ঋণের সুদ। কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এনজিওরা ২০ শতাংশের বেশি সুদে তাদের গ্রাহকের মধ্যে ঋণ বিতরণ করছে। কিন্তু একটি এজেন্ট ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকের মূল শাখার মাধ্যমে। আর ব্যাংকের মূল শাখার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ শতাংশের বেশি সুদ আরোপ করতে পারে না। এজেন্টদের নিট মুনাফা কমে যৎসামান্য থাকে। ফলে এজেন্টরাও অনেকসময় ঋণ বিতরণে আগ্রহী হন না। ফলে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ব্যাংকমুখী হচ্ছে না। অর্থাৎ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দেয়ার অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া। তাদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ভেতরে নিয়ে আসা। এর অর্থ শুধু গ্রামীণ জনগণের কাছ থেকে আমানতই সংগ্রহ করা হবে না, পাশাপাশি গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ দিয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু এ উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণেই নতুন লাইসেন্স দেয়ার সময় ঋণ বিতরণের শর্ত জুড়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সরকারি বেসরকারি মিলে ২৮টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দিচ্ছে। এর মধ্যে জুলাই শেষে ২৬টি ব্যাংকের মোট এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দিয়েছে ১৩ হাজার ৮৬টি। আর আউটলেট নিয়েছে ১৭ হাজার ৩৩২টি। এর মধ্যে এজেন্ট ও আউটলেটের মোট সংখ্যা ৩০ হাজার ৫০০টি প্রায়। আউটলেট ও এজেন্ট মিলে গ্রামে রয়েছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজারটি। সবমিলে গ্রামে এজেন্ট ও শাখার সংখ্যার হার প্রায় ৮৭ শতাংশ। অপর দিকে মোট আমানতের প্রায় ৮০ শতাংশই এসেছে গ্রাম থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০ হাজার ৬৭১ কোটি টাকার আমানতের মধ্যে গ্রাম থেকেই এসেছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ মোট ঋণ গ্রামের মানুষের মধ্যে এ সময়ে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৭২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে গ্রামের আমানত গ্রামেই বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। অন্যথায় বড় গ্রাহকরা গ্রামের আমানতের অর্থ ঋণ নিলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে না। বাড়বে না ক্রয়-ক্ষমতা। এতে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন