ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় টেলিভিশন বিতর্ক করেছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক মার্থা রাডাৎস ও সিএনএনের অ্যান্ডারসন কুপারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ সময় গতকাল (সোমবার) সকাল ৭টায় (স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায়) মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস নগরীর ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় বিতর্কটি শুরু হয়। সিএনএন/ ওআরসির জরিপে দ্বিতীয় বিতর্কেও জয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।
জরিপে দেখা যায়, হিলারি পেয়েছেন ৫৭ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৪ শতাংশের সমর্থন। এর আগে প্রথম বিতর্কেও জয়ী হন হিলারি ক্লিনটন। দ্বিতীয় মুখোমুখি বিতর্কে প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা ভালো করেছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এবারও তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের কাছে পরাজিত হয়েছেন। সিএনএন/ওআরসির জরিপে এমনটাই বলা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই দুই প্রার্থী স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশে সোমবার সকাল) দ্বিতীয়বার মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন। সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। সিএনএনসহ অধিকাংশ মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটে ৯০ মিনিটের এই বিতর্ক সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। দ্বিতীয় বিতর্ক ছিল ট্রাম্পের জন্য অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াই। কিন্তু সেই বিতর্কেও তিনি হিলারির কাছে হেরে গেছেন। বিতর্কের পর সিএনএন/ওআরসির প্রকাশ করা এক জরিপে বলা হয়, হিলারি সুস্পষ্টভাবে জয়ী হয়েছেন। জরিপ অনুযায়ী ৫৭ শতাংশ মনে করেন, হিলারি জয়ী হয়েছেন। ৩৪ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন।
সিএনএন/ওআরসির জরিপ অনুযায়ী প্রথম বিতর্কেও হিলারি জয়ী হয়েছিলেন। তখন তার জয়ের পক্ষে ৬২ শতাংশ মত পড়েছিল। সিএনএন বলছে, প্রথম বিতর্কের তুলনায় দ্বিতীয় বিতর্কে হিলারি ভালো নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিতর্কে যেমনটা আশা করা হচ্ছিল, তার চেয়ে ভালো করেছেন ট্রাম্প। অশ্লীল ও আপত্তিকর একটি ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে গত তিন দিন ট্রাম্প নিজের দলের নেতাদের কাছেই তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছেন। একের পর এক শীর্ষ নেতারা ট্রাম্পের প্রতি নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অনেকেই ট্রাম্পকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোরও অনুরোধ করেছেন। ট্রাম্প নিজে অবশ্য সরে দাঁড়ানোর সব দাবি এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় বিতর্ককে ট্রাম্পের জন্য শেষ সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন ভাষ্যকারেরা। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।
দ্বিতীয় বিতর্কেও ধরাশায়ী
প্রেসিডেন্ট হলে হিলারিকে জেলে পাঠাবেন ট্রাম্প
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি জয়ী হলে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ইমেইল সার্ভার কেলেঙ্কারির জন্য জেলে পাঠাবেন। মিসৌরির সেন্ট লুইস ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় দফা বিতর্কে ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচনে জয়ী হলে হিলারির ইমেইল কেলেঙ্কারির বিষয়ে বিশেষ একজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেবেন। বারাক ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯-২০১৩ পর্যন্ত সময়ে হিলারি ব্যক্তিগত সার্ভার থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল লেনদেন করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করেছেন বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। ওই সময় হিলারির আদান-প্রদান করা ৩০ হাজার ৬৮টি ইমেইল নিয়ে তদন্ত করে এফবিআই। এর মধ্যে দুই হাজারের বেশি ইমেইলে গোপনীয় তথ্য পাওয়া গেছে জানালেও হিলারি যে জেনেশুনে এ কাজ করেছেন তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয় এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে।
ওই ঘটনার উল্লেখ করে বিতর্কে হিলারিকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন, আপনার অবশ্যই লজ্জিত হওয়া উচিত। প্রতিক্রিয়ায় হিলারি বলেন, ট্রাম্পের মতো মনমানসিকতার কেউ হোয়াইট হাউজে নেই বলে তিনি স্বস্তিবোধ করছেন। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আপনাকে জেলে যেতে হবে। দুই প্রার্থী এর আগে প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হন ২৭ সেপ্টেম্বর। জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সেই বিতর্কে অধিকাংশ ভোটার হিলারিকেই জয়ী বলেছেন। দ্বিতীয় বিতর্কের ঠিক দুদিন আগে নারীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যের পুরনো এক টেপ ফাঁস হওয়ায় নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। নিজ দলের বহু নেতার সমর্থন এরই মধ্যে হারিয়েছেন তিনি।
গত রোববার দেড় ঘণ্টার বিতর্কের এক পর্যায়ে সেই টেপের প্রসঙ্গ আসে। ট্রাম্প বলেন ফাঁস হওয়া অডিও টেপ নিয়ে তিনি বিব্রত, তবে সেজন্য তিনি ভোটারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ২০০৫ সালের ওই টেপে এনবিসি টিভির উপস্থাপক বিলি বাশের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, তুমি যদি তারকা হও, তবে মেয়েদের নিয়ে যা কিছু করতে পার। ওই কথোপকথনে বিবাহিত এক অভিনেত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে উদগ্র আগ্রহের কথাও বলতে শোনা যায় ট্রাম্পকে, যিনি বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে ঘর করছেন। মেলানিয়া বলেছেন, ট্রাম্পের ওই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যে স্বামীকে তিনি চেনেন, তার সঙ্গে একে মেলানো যায় না। তারপরও তিনি আশা করছেন, আমেরিকার জনগণ ট্রাম্পকে মাফ করে দেবে। বিতর্কে ফাঁস হওয়া ওই টেপকে লকার রুমের কথা বলে উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। নারীদের প্রতি তার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে বলেও মন্তব্য করেন এ রিপাবলিকান প্রার্থী।
এ প্রসঙ্গে বিতর্কে হিলারির স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকেও টেনেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, আমারটা কেবল কথা, আর বিল ক্লিনটনতো করে দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে হিলারি বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যই দেখিয়ে দেয়, কেন তিনি হোয়াইট হাউজের জন্য অনুপযুক্ত। ওই ভিডিও তাকে উপস্থাপন করে না বলে দাবি করছেন ট্রাম্প; কিন্তু আমার ধারণা, যারা এটি শুনেছেন তারা বুঝতে পারছেন, এটি কেবলমাত্র তাকেই উপস্থাপন করে, বলেন হিলারি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কের আগে আগে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণের অভিযোগকারী তিন নারী- পলা জোনস, জুয়ানিতা ব্রডরিক ও ক্যাথলিন উইলির সঙ্গে দেখা করেন ট্রাম্প। এদের মধ্যে পলা ১৯৯১ সালে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ আনেন। দোষ স্বীকার বা ক্ষমা না চেয়ে ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারে ওই ঘটনার মীমাংসা করেছিলেন আরকানসাসের তখনকার গভর্নর ক্লিনটন। এরও আগে ১৯৭৮ সালে ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন জুয়ানিতা; আর ১৯৯৩ সালে হোয়াইট হাউজের সাবেক কর্মী ক্যাথলিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আনেন। তাদের কারও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। হিলারির সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্কের আগে ট্রাম্প ক্যাথি শেলটনের সঙ্গেও দেখা করেন। ১২ বছর বয়সে ধর্ষিত হওয়া ক্যাথির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন হিলারি। তখনকার শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিলারির কারণেই প্রমাণিত হওয়ার পরও ধর্ষক অভিযোগ কম শাস্তি পেয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বিতর্কের সময় এ চার নারী দর্শক সারির সামনে বসা ছিল বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়। হিলারির মুখোমুখি হওয়ার আগে ট্রাম্পের এ ধরনের কর্মকা-কে লোক দেখানো অ্যাখ্যা দিয়ে হিলারি শিবির বলছে, এ প্রবণতা প্রতিযোগিতাকে ধ্বংসের তলানিতে নিয়ে যাবে। বিবিসি, রয়টার্স।
অভিভাবকদের তিক্ত বিতর্কের
পর চেলসিয়া ও ইভাঙ্কার
শুভেচ্ছা বিনিময়
ইনকিলাব ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের দ্বিতীয় দফার বিতর্কে অংশ নিয়ে ডেমোক্রেটিক দলীয় হিলারি ক্লিন্টন ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প পরস্পরে করমর্দন না করলেও সে পথে হাঁটছেন না তাদের মেয়েরা। হিলারির মেয়ে চেলসিয়া এবং ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা তাদের বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিরোধ তাদের কন্যাদের স্পর্শ করতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে না। গতকাল দেড় ঘন্টার বিতর্কে অংশ নিতে গিয়ে হিলারি ও ট্রাম্প পরস্পর হাত পর্যন্ত মেলাননি। কিন্তু তাদের কন্যারা পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ভুলেননি। তারা সামনা-সামনি সাক্ষাৎ করে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানান। কন্যারা পরস্পরকে সৌহার্দ্যমূলক স্পর্শ করেন। অবশ্য বিতর্কের শুরুতে পরস্পর করমর্দন না করলেও শেষে করমর্দন করেছেন তাদের অভিভাবকরা।
বিতর্কস্থল ত্যাগের আগে চেলসিয়া ও ইভাঙ্কাকে কয়েকটি কথা বিনিময় করতেও দেখা গেছে। তাদের এই সম্পর্ক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসে যাবার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে গত বেশ কয়েক মাস ধরে উত্তাপ ছড়ালেও হিলারি ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক আবহ তাদের কন্যাদের স্পর্শ করতে পারবে না বলেই মনে হয়। সূত্র : পিপলস পলিটিক্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন