বেনাপোল অফিস : বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের যশোর রোড ধরে গাড়িযোগে কলকাতায় যাওয়া বা আসা রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে যান চালকদের কাছ থেকে স্থানীয় পা-ারা দেদারছে চাঁদাবাজি করছে।
যাত্রীরা বলছেন, গাড়ি থামিয়ে তাদের কাছ থেকে জোর করে চলছে দুর্গাপূজার নামে চাঁদাবাজি। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বচসা এমনকি গাড়ি সাইড করে রাখার ঘটনাও ঘটছে। রোগীরাও চাঁদা শিকারিদের দৌরাত্মের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা কয়েকজন ট্রাকচালক জানান, হলুদ ট্যাক্সি, যেগুলো কলকাতা- পেট্রাপোল-কলকাতা সীমান্তে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে, এসব যাত্রীর ওপর বেশি জুলুম চলছে। ওই ট্যাক্সিগুলোর যাত্রীদের বেশিরভাগই বাংলাদেশী নাগরিক।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ভারতে বেড়াতে যাচ্ছেন। সে কারণে বেনাপোল চেকপোস্টে পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ উৎসব উপলক্ষে সীমান্তের দু’পারে কড়াকড়ি থাকলেও ভারতের অংশে রাস্তায় চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এ চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন মূলত বাংলাদেশী যাত্রীরা। ভারত-ফেরত বাংলাদেশীরা এ অভিযোগ করছেন।
তারা জানান, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে ঢোকার পর থেকে চাঁদাবাজি শুরু হয়। ভারতীয় কাস্টমস, ইমিগ্রেশন পার হয়ে বাস, রিকশা, থ্রিহুইলার, ট্যাক্সিযোগে কলকাতা যাওয়ার পথে হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর, মতিগঞ্জ, বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর, বারাসাতসহ কলকাতা পর্যন্ত সড়কে অন্তত ১৫-২০টি স্পটে ব্যারিকেড দিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদাবাজি হচ্ছে বনগাঁ রেলস্টেশনেও।
চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না সরাসরি চলাচলকারী বাসও। বিভিন্ন ক্লাব বা সংঘের ব্যানারে সক্রিয় এসব চাঁদাবাজ গ্রুপকে ঠেকাতে পুলিশও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। চাঁদাবাজরা নিজেদের ইচ্ছামতো চাঁদার অংক বসিয়ে রসিদ ধরিয়ে দিচ্ছে যাত্রীদের হাতে। চাঁদা না দিয়ে কারো ছাড় পাওয়ার উপায় নেই। একবার চাঁদা দেয়া হলেও সেই রসিদ দেখিয়েও রেহাই মিলছে না রাস্তার অন্য স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা চাঁদাবাজদের হাত থেকে।
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি যাত্রী বৈধভাবে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু পূজার ছুটিতে এপথ দিয়ে দিনে গড়ে চার হাজারের বেশি বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত যাতায়াত করছেন।
হয়রানির শিকার সোহাগ পরিবহনের যাত্রী রুখসানা চৌধুরী ও মলি আক্তার জানান, তারা রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পূজার চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
ভারতে চিকিৎসার জন্যে যাওয়া রাজধানীর উত্তরার আল মামুন বলেন, ‘ভারতে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েই ফিরছিলাম। কিন্তু হরিদাসপুর এসে দালাল ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
ওপারের চেকপোস্টের এক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক দলের প্রচ্ছন্ন ছায়ায় দুর্গোৎসবের নামে চাঁদাবাজি চলছে। চাঁদাবাজির ধরন দেখে মনে হয় দুর্গোৎসব পালনে যে অর্থ ব্যয় হবে তার একটি অংশ আদায় করা হচ্ছে বাংলাদেশী পর্যটকদের কাছ থেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন