শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আজ মধ্যরাত থেকে সারাদেশে ইলিশ আহরণ ২২ দিন বন্ধ

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে আজ মধ্যরাত থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন উপকূলের প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় দেশের একক বহত্তম মৎস্য প্রজাতি ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে। একই সময়ে সারাদেশে ইলিশের পরিবহন ও বিপণনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ‘মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০’এর অধীন এ লক্ষ্যে সরকারী প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা লব্ধ সুপারিশের আলোকে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছরই আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার দিনসহ আগে ও পরের পাঁচ দিন করে মোট ১৫ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সর্বশেষ গবেষণার সুপারিশের আলোকে চলতি বছর পূর্ণিমার দিন ছাড়াও আগের চার দিন ও পরের ১৭ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।
ইলিশ সারা বছরই প্রজনন ক্ষেত্রসহ দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ডিম ছাড়লেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরেই ৬০-৭০ ভাগ মা ইলিশ ডিম প্রজনন করে থাকে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গেছে। পূর্ণ বয়স্ক ইলিশ শ্রোতের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ৭২ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলে। বিজ্ঞানীদের মতে, সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের ৫০-৬০% বাংলাদেশে, ২০-২৫% মায়নমারে এবং অবশিষ্ট ১০-১৫% ভারত আহরিত হয়ে থাকে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান ১%-এরও বেশি। মৎস্য সম্পদে একক প্রজাতি হিসেবে এর অবদান প্রায় ১২-১৩%।
আমাদের মৎস্য বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে দেশের উপকূলের প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘ইলিশ প্রজননস্থল’ হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে থেকেই মা ইলিশের দল ঝাঁকে-ঝাঁকে সাগর মোহনা হয়ে ভাটি মেঘনার ভোলা ও লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্যবর্তী ঢালচর, মনপুরা, মৌলভীর চর, কালির চর ও পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদী এলাকার প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছুটে এসে প্রজনন করে থাকে। ফলে ইলিশের মূল প্রজনন ক্ষেত্র, উপকূলের ঐ ৭ হাজার বর্গকিলোমাটার এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরণই বন্ধ থাকছে মোট ২২ দিন।
মৎস্য অদিদফতর এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলা-উপজেলায় অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধ-শতাধিক কর্মকর্তাকে বরিশাল বিভাগের ৪২টি উপজেলায় প্রেসনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এরা স্থানীয় জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে প্রয়োজনীয় স্থানে দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটগণ পুলিশ, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন নদ-নদীতে অভিযান পরিচালনা করবেন। প্রয়োজনে নৌবাহিনীর ও বিমানবাহিনীরও সহায়তা গ্রহণ করা হতে পারে। কোন অবস্থাতেই প্রজনন এলাকায় জাল ফেলতে দেয়া হবে না। পাশাপাশি সারাদেশেই ইলিশ আহরণসহ পরিবহন ও বিপণনও বন্ধ থাকবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত।
গত অর্থ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। যা আগামী বছর ৪ লাখ টনের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছেন। তবে চলতি মওসুমে সাগর থেকে মা ইলিশের দল কিছুটা আগাম উপকূলীয় এলাকা হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে উঠে আসায় গত মাসাধিককাল যাবৎ প্রচুর মা ইলিশ ধরা পড়েছে। বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আগাামী বছর ইলিশ উৎপাদনে এর কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকার কথাও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য বিজ্ঞানীগণ। তাদের মতে, এবার বর্ষার শেষভাগে এসে সারাদেশে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের সাথে প্রতিবেশী দেশ আকস্মিকভাবে ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকায় অসময়ের পানি বৃদ্ধিসহ তীব্র স্রোতের কারণেও ঝাঁকে ঝাঁকে প্রচুর ইলিশ সাগর মোহনা হয়ে উজানে ছুটে আসে। আর তা গত মাসাধিককাল যাবৎই জেলেদের জালে ধরাও পড়েছে নির্বিচারে। বিগত কিছুদিনের ধরা পড়া ঐসব ইলিশের প্রায় শতভাগই ছিল ডিমওয়ালা। এর ফলে আজ মধ্যরাতের পর থেকে শুরু হওয়ায় মূল প্রজননকালে ইলিশের সংখ্যা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবার আশংকা প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য বিজ্ঞানীগণ। এতে করে আগামী বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ইলিশ উৎপাদনের যে আশা রয়েছে তাতে কিছুটা ঘাটতি সৃষ্টি হলেও আশ্চর্যের কিছু নাও থাকতে পারে।
আমাদের জিডিপিতে ইলিশের একক অবদান ১%-এর মতো। আর গোটা মৎস্য সেক্টরে এ মাছের অবদান ১২%-১৩%। মৎস্য অধিদফতরের মতে, দেশের ৪০টি জেলার ১৪৫টি উপজেলার দেড় হাজার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জেলে ইলিশ আহরণের সাথে জড়িত। এর ৩২% সার্বক্ষণিক ও ৬৮% খ-কালীন ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত। এছাড়াও ইলিশ বিপণন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, জাল ও নৌকা তৈরিসহ মেরামত কাজেও আরো প্রায় ২০-২৫ লাখ মানুষ কাজ করছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগেরই প্রায় দেড় লক্ষাধিক জেলে এ পেশার সাথে জড়িত বলে মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে। যার ৬৫% সার্বক্ষণিকভাবে ইলিশ আহরণে জড়িত। দেশে উৎপাদিত ইলিশের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরে বর্ণাঢ্য নৌ-র‌্যালি
চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ‘মা ইলিশ ধরবো না, দেশের ক্ষতি করবো না’; ‘মা ইলিশ রক্ষা করো, দেশের সম্পদ বৃদ্ধি কর- এ সেøাগানে মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরে নৌ-র‌্যালিসহ ব্যাপক জনসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে।
মেঘনা নদীর হাইমচরের কাটাখালী থেকে হাজার হাজার জেলে ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে নৌ-র‌্যালি বের করে। নৌ-র‌্যালিটি প্রায় ২০ কিলোমিটার নদী সীমানা প্রদক্ষিণ শেষে চরভৈরবী এলাকায় গিয়ে সোমবার বিকেলে শেষ হয়।
ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুরসহ দেশের ২৭ জেলার নদীতে ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জনসচেতন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই নৌ-র‌্যালি বের হয় ।
এর আগে সকালে হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূর হোসেন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে উপজেলা কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। এতে সরকারি-বেরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন