শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জাপান যেতে ঘর ছেড়েছিল তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

কড়া বিধিনিষেধে পরিবারের প্রতি বিরক্তি। করোনাকালে ঘরে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অপসংস্কৃতিতে আসক্তি। দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলো লেখাপড়ার প্রতিও। সঙ্গে উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের স্বপ্ন- এসব চিন্তা থেকেই ঘরছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজধানীর পল্লবীর তিন কলেজছাত্রী। তারা কক্সবাজার থেকে নৌপথে জাপানে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে দেশছাড়ার আগেই তাদের উদ্ধার করে র‌্যাব।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তারা বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও নিজেদের সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে যায়। কেউ যাতে সন্দেহ না করে, সেজন্য কলেজ ড্রেস ও ব্যাগ নিয়ে বের হয় ওই ছাত্রীরা। তিন তরুণী হলো- স্নেহা আক্তার (১৬), কাজী দিলখুশ জান্নাত নিশা (১৫) ও কানিজ ফাতেমা (১৬)। প্রায় এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর তাদেরকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে র‌্যাবের কর্মকর্তারা। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা ঘরে আবদ্ধ ছিল। এসময়ে তারা বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি তারা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে এক নারীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়। তিন বান্ধবী হাফসার সঙ্গে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার থেকে নৌপথে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে।
র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক আরও জানান, হাফসার পরামর্শে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা নিজেদের ইমেইল, ফেসবুক ও ব্যবহৃত মোবাইল গাবতলীতে নষ্ট করে ফেলে। এটা করার অন্যতম কারণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন তাদের অবস্থান চিহ্নিত না করতে পারে। এরপর তারা বাসে করে কুমিল্লা ময়নামতি যায়। পথিমধ্যে তারা নিজেদের পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে নিজেদের চুল কেটে ফেলে এবং পশ্চিমা বেশভূষা ধারণ করে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে তারা কেডস্, পোশাক ও একটি মোবাইল কেনে। কিন্তু মোবাইল কিনলেও তারা সিম না কিনে ওয়াইফাই ব্যবহার করে।
এদিকে, গত শনিবার (২ অক্টোবর) রাতে নিখোঁজ শিক্ষার্থী দিলখুশ জান্নাত নিশার বড় বোন অ্যাডভোকেট কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি আসামি করেন- মো. তরিকুল্লাহ (১৯), মো. রকিবুল্লাহ (২০), জিনিয়া ওরফে টিকটক জিনিয়া রোজ (১৮) ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়নকে (১৮)। এ ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়, যার প্রেক্ষিতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও কক্সবাজারে থাকা র‌্যাব-৪ এর টিমের মাধ্যমে জানতে পারে, নিখোঁজ তিন তরুণী গত মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ছদ্মবেশে কক্সবাজার থেকে বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রাওনা দিয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আবদুল্লাহপুরের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে নিখোঁজদের উদ্ধার করে।
র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, বাসা থেকে বেরিয়ে তারা প্রথমে গাবতলী যায়। সেখানে নিজেদের মোবাইল ও ফেসবুক নিষ্ক্রিয় করে। পরে নৌকাযোগে নদী পার হয়ে আমিন বাজার এলাকায় গেলে হাফসার দুজন লোক কালো রঙের নোহা গাড়িতে করে তাদের অজ্ঞাত একটি জায়গায় নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে সিএনজিযোগে তাদের কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তিন বান্ধবী তাদের কথামত কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে চট্টগ্রামগামী কোনো ট্রেন না পেয়ে বাসে করে কুমিল্লার ময়নামতি যায়। পথে তারা নিজেদের পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে ও পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশভ‚ষা ধারণ করে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে তারা কেডস, পোশাক ও একটি মোবাইল কেনে। সেখান থেকে তারা পুনরায় বাসযোগে চট্টগ্রাম সিনেমা প্লেস বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দুটি মোবাইল কিনে বাসে করে কক্সবাজারে পৌঁছায়’ বলেন র‌্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল কিনলেও আত্মগোপনে থাকার জন্য তারা কোনো সিম কেনে না। ১ অক্টোবর কক্সবাজার পৌঁছে তারা ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারের কলাতলির একটি হোটেলে অবস্থান করে ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে। এরপর ২ অক্টোবর তারা কক্সবাজার সি-বিচ এলাকায় বেড়াতে গেলে হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ ও শফিক নামের দুজন তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। এ ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে হোটেল অবস্থান নেয় ও হোটেলের আশপাশে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে ছদ্মবেশে বাসে করে কক্সবাজার থেকে রওনা হয়। সেখান থেকে তারা ঢাকার আব্দুল্লাহপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছালে র‌্যাবের একটি দল তাদের উদ্ধার করে র‌্যাব-৪ কার‌্যালয়ে নিয়ে আসে।
হাফসা নামের নারীকে শনাক্তের ব্যাপারে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, হাফসার কোনো মোবাইল নম্বর অথবা অন্য তথ্য না থাকায় এখন পর্যন্ত তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে হাফসা ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৪৬ এএম says : 0
জাপানে না যাইয়া গার্মেনটসের কাজ করলে দেশের উন্নয়ন হবে,তোমাদের দেমাক কম।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন