দাওয়াতে দ্বীন ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। মানবজীবনে ইসলামের অস্তিত্ব নির্ভর করে দাওয়াতি কাজের ওপর। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তাঁদের সকলেরই দায়িত্ব ছিল মানুষের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সাধণ ও সফলতার বদ্ধ তালা একমাত্র দাওয়াতে দ্বীন খুলে দিতে পারে। দাওয়াতে দ্বীন ইসলামী সভ্যতা বিনির্মাণের প্রাথমিক সোপান। দাওয়াতে দ্বীন ইসলাম অনুশীলনের প্রেরণা যোগায়। দাওয়াতে দ্বীন উম্মাহর স্থবিরতা দূর করে। গতিশীলতা আনয়ন করে। দাওয়াত ব্যক্তি ও সমাজকে জাগিয়ে তুলে।
দাওয়াত জাতির বুকে স্বপ্ন জাগায়। আশার আলো দেখায়। জাহেলিয়াতের আঁধার কাটে। সত্যের সোনালী সূর্যোদয় দান করে দাওয়াতের মাধ্যমে। মানবতার বিবেক ও মানব উন্নয়ন ও বিকাশের দরজার তালা দাওয়াতি কাজই কেবল খুলে দিতে পারে। দাওয়াতি কাজ মানে ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজ। দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে। মুসলিম জাতির বিস্তৃতি লাভ করে। বর্তমান সময়ে ইসলামের দাওয়াত অন্যের নিকট পৌঁছাবার গুরুত্ব মোটেও গৌণ করে দেখার কোনো সুযো নেই। ইসলামের প্রথম প্রকাশ ঘটে দাওয়াতের মাধ্যমে। দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের অগ্রগতি ও বিকাশ সাধিত হয়। নির্মিত হয় ইসলামী সমাজ ও সভ্যতা। সৃষ্টির আদিকাল থেকে আমাদের আদি পিতা হযত আদম (আ.) এর মাধ্যমে ইসলামের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মদের (সা.) মাধ্যমে যে ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা প্রাপ্ত হয়েছিল এর রশ্মি গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে আল্লাহর পথে নিবেদিত প্রাণ, তাঁর প্রিয় নবী-রাসূলদের অক্লান্ত ত্যাগ, কুরবানি, পরিশ্রম ও ব্যাপক দাওয়াতি কাজ। উম্মাহর উত্থানে দ্বীনি দাওয়াতি কাজের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দাওয়াত ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। দাওয়াত অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা, ঈমানের পথে ডাকা, দাওয়াত মানে সত্য- সুন্দরের প্রকাশ, দাওয়াত মানে ইসলামের মহান বাণী প্রচার। দ্বীন অর্থ হচ্ছে জীবন ব্যবস্থা তথা ইসলাম। আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম।
দাওয়াতে দ্বীন হচ্ছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের পথে মানবতাকে অহবান করা। দাওয়াত মানে হচ্ছে মানব রচিত মতবাদ মূলোৎপাটন করা, দাওয়াত মানে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করা, মিথ্যার পুঁতিগন্ধময়তা দূর করা, দাওয়াত মুসলিম উম্মাহর সংশোধনের কথা বলে। দাওয়াত উম্মাহর শত্রুদের শনাক্ত করে। দাওয়াত মানে জান্নাতের রাস্তা দেখানো। মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন-‘ওই ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান কর্। (হামিম সিজদাহ : ৩৩)।
মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন-‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের প্রেরণ করা হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং নিষেধ করবে মন্দ কাজ থেকে। (সুরা ইমরান : ১)। আল্লাহ সুবহানাহু আরও এরশাদ করেন-‘হে রাসূল আপনি বলে দিন এটাই আমার রাস্তাা আমি জেনে বুঝে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি, এটা আমার কাজ এবং তাদের কাজ যারা আমার অনুসারি তথা আমার উম্মত। (সূরা ইউসুফ : ১০৭)। দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে রাস্তায় চললে প্রতি কদমে সাতশত নেকি হাসিল হয় এবং বেহেশতের পথে সাতশত দরজা বৃদ্ধি করা হয় আর তাঁর আমলনামা থেকে সাতশত গুনাহ মুছে ফেলা হয়। (কানযুল উম্মাল : ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা : ৩১৪)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-‘আল্লাহর রাস্তাায় এক সকাল বা সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও এর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু থেকে উত্তম। (বুখারি : ৫৯৬৭)। বর্তমানে উম্মাহর পতনের কারণও হল দাওয়াতি কাজের দূর্বলতা। সমাজের সকল প্রকার জাহেলিয়াত, কুসংস্কার ও সকল অশ্লীলতা মোকাবিলায় দাওয়াতে দ্বীনের বিকল্প নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন