শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তদন্তের জালে প্রতারকরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুধু তাই নয়, অনলাইনে লোক ঠকানোর নানা ব্যবসার খবর পেয়ে তদন্তের জাল আরও বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একাধিক তালিকা করে প্রতারকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছেন। সবশের্ষ গত শুক্রবার মিডিয়ার পরিচিত মুখ হুমায়ুন কবির নিরব ওরফে আরজে নিরবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া হুমায়ুন কবির নিরব ওরফে আরজে নিরব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের হেড অব সেলস অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া অনলাইনে প্রতারক চক্রের আরো শতাধিক পেজ নজরদারিতে রযেছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্র।

এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস থেকে একটি কোম্পানির ১৮ জন কর্মীকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আটককৃতরা বারিধারা ডিওএইচএস থেকে গাজীপুরের পূবাইলের একটি রিসোর্টে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আটক করে ডিবি পুলিশ। এক পর্যায়ে আটকদের স্বজনরাও মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষে উপস্থিত হন।
পরে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, তারা যে কোম্পানিতে কাজ করেন, সেটি অনুমোদনহীনভাবে অনলাইনে সুদের ব্যবসা চালাচ্ছিল। তাদের কয়েকজনকে আটক করে যাচাই করা হচ্ছে। পরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সাতজনকে রেখে বাকি ১১ জনকে ডিবি ছেড়ে দেয়। তাদের মধ্যে দুইজন চায়না নাগরিক বলে জানা গেছে।
ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যে ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে, তারা সবাই বারিধারা ডিওএইচএসএর নিউ মিরাকল ফিনটেক বিডি নামে একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে একটি বাসে (কোস্টারে) করে তারা পূবাইলের অরণ্যবাস রিসোর্টের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু তারা না পৌঁছায় স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। অরণ্যবাস রিসোর্টের মালিক মাহাবুবুর রহমান জানান, ওই কোম্পানির কর্মীরা দিনভর থাকার বুকিং দিয়েছিল। রাতে থাকার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছিল। তাদের খাবার প্রস্তুত ছিল, রুমগুলোও খালি ছিল। কিন্তু তারা রিসোর্টে আসেননি।
নিখোঁজদের একজন দেবাশীষ দে’র ভাই দেব্যোজিৎ দে বলেন, তার ভাই দেবাশীষ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হয়। সকাল ১০টা থেকে তার মা দেবাশীষকে ফোন করলে ফোন বাজছিল, কিন্তু কেউ ধরছিল না। তখন তার বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে আদাবর থানায় যান অভিযোগ দিতে। আদাবর থানার ডিউটি অফিসার এসআই মাধব চৌধুরী বলেন, ছেলে নিখোঁজের অভিযোগ নিয়ে দেবাশীষের বাবা দুলাল চন্দ্র দে থানায় এসেছিলেন। তাকে ঘটনাস্থলে থানায় যেতে বলা হয়।
নিখোঁজদের একজন জান্নাতুল ফেরদৌস ইতির বাগদত্তা শারিদ হাসান বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় তিনি গিয়ে ইতিকে অফিসের সামনে রেখে আসেন। এর ঘণ্টাখানেক পরে কথা হয়। তখন ইতি জানিয়েছিলেন তারা উত্তরায়, পূবাইলের পথে গাড়ি চলছে। এরপর সারাদিন আর খোঁজ-খবর নেই। নিউ মিরাকেল’র মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক নাজমুস সাকিবের স্ত্রী সিনথিয়া গুলশান থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তবে তাকেও ক্যান্টনমেন্ট থানায় যেতে বলা হয়। রাত ৮টার দিকে পরিবারগুলো অভিযোগ করার জন্য ক্যান্টনমেন্ট থানায় যান। সেখানেই তারা জানতে পারেন, নিখোঁজরা মিন্টো রোডে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন। ইতির বোন মনি আক্তার বলেন, তিনি পুলিশের কাছ থেকে জেনেছেন তার বোন মিন্টো রোডের ডিবি হেফাজতে রয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট থানা থেকে ডিবি অফিসের উদ্দেশে রওনা দেন।
এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রতারক চক্রের সাত সদস্যের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া সাত আসামি হলেন- চীনা নাগরিক হি মিংশি ও ইয়াং সিকি, মজুমদার ফজলে গোফরান, আহসান কামাল, হিমেল অর রশিদ, নাজমুস সাকিব ও জেরিন তাসনিম বিনতে ইসলাম।
এর আগে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় বলা হয়, আসামিরা সরকারি অনুমোদন ছাড়া থান্ডার লাইট টেকনোলজি লিমিটেড, নিউ ভিশন ফিনটেক লিমিটেড ও বেসিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করত। আইনগত অনুমোদন ছাড়া তারা গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ করে। গ্রাহকরা এসব অ্যাপস ইন্সটল করার মাধ্যমে অ্যাপে গ্রাহকের অজান্তে ক্যালেন্ডারের ইভেন্ট পড়া, গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারণ, মোবাইলের কন্টাক্ট পড়াসহ মোবাইলের এক্স্যাক্ট লাইভ লোকেশন নির্ণয়, ফোনের স্ট্যাটাস এবং তথ্য সংগ্রহ, ফোনে সংরক্ষিত মেসেজ পড়া, পরিবর্তন করার অনুমতি নিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের পারসোনাল ডাটা সিকিউরিটির চরম হুমকিতে পড়ে।
আরও বলা হয়, আসামিরা অনলাইন অ্যাপস যেমন- টিকালা, ক্যাশম্যান, র‌্যাপিড ক্যাশ, আমার ক্যাশের মাধ্যমে জামানতবিহীন লোন দেওয়ার নামে অতিরিক্ত হারে সুদের কারবার করে। এ সকল অ্যাপসের সার্ভার চীনে অবস্থিত এবং সেখানে থেকে পরিচালিত হয়। কিছু চীনা নাগরিক বাংলাদেশি নাগরিককে সহায়তার নামে এসব অ্যাপের মাধ্যমে জামানতবিহীন স্বল্প সুদে লোন দেওয়ার প্রলোভনে গ্রাহক আকৃষ্ট করে। তাদের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহকরা লোন নিয়ের স্বল্প সুদের পরিবর্তে উচ্চহারে সুদ দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। প্রতারণার শিকার একজনের অভিযোগ পেয়ে ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, এরা অনলাইন সুদের ব্যবসা করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তদের মধ্যে দুইজন চায়নার নাগরিক।
তিনি আরো জানান, তারা বাংলাদেশিদের ব্যবহার করে ২ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে একমাসে ৪ হাজার টাকা নেয়। মাইক্রোক্রেডিট দেখিয়ে অনলাইন প্লাটফর্মে অনুমোদিত এই ব্যবসা বিদেশিরা এসে মহজনী ব্যবসার মতো করছে। এটার কোনো অনুমোদন নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা জড়িত নয়, তাদের ছেড়ে দিয়ে জড়িতদের আটক করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ডিবির প্রধান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন