রাজধানী ঢাকা অস্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত হয়েছে। দূষিত, বিষাক্ত ও বিপজ্জনকÑ বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন ঢাকার মানুষ। ভয়াবহ বায়ুদূষণের কারণে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন রাজধানীবাসী। দূষিত বাতাসের ফলে নানা রোগ ব্যাধি ছড়াচ্ছে, অকাল মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। চরম উষ্ণতার কারণে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এছাড়া ঢাকা এখন বিশ্বের শীর্ষ দূষিততম নদীর শহর হিসেবেও পরিচিত। ২০১৯ ও ২০২০ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শীর্ষে। এরপর করোনা মহামারির কারণে নির্মল বাতাসের শহর হয় ঢাকা। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও দূষিত বাতাসের শহরে তালিকায় শীর্ষে ঊঠে আসছে রাজধানী ঢাকা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি বাতাসের গুণগত মানের নতুন গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে। সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, নতুন মানদণ্ডে নির্ধারিত দূষণের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেলে জনস্বাস্থ্যের ওপর বড় ঝুঁকি নেমে আসবে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে নির্মল বায়ুর শহরে নাম লিখিয়েছিল রাজধানী শহর ঢাকা। ওই মাসে ঢাকায় বায়ুর মানের সূচক ৫০-এর নিচে নামে, যা ছিল স্বাস্থ্যকর। এর আগে বেশিরভাগ সময়ে বায়ু মান সূচক ছিল ২০০-এর বেশি, যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর।
করোনার প্রভাবে সারা দেশে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ থাকায় নির্মল বায়ু পাওয়া সম্ভব হয়েছিল সে সময়। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই আবার পুরোনো ধারায় ফিরতে শুরু করেছে ঢাকার বায়ুর মান। এগিয়ে যাচ্ছে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার উপরের দিকে। গত কয়েক দিনের পর্যবেক্ষণে এমনটাই দেখা গেছে।
জুলাই মাসে ঢাকা দূষিত নগরীর তালিকায় ২৩তম স্থানে ছিল, বর্তমানে উঠে এসেছে অষ্টম স্থানে। ১৪ অক্টোবর এই চিত্র দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুর মান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’-এ। অর্থাৎ এ দিনের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার চেয়ে বেশি দূষিত বাতাস রয়েছে বিশ্বের মাত্র সাতটি শহরে।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ থেকে ১৪ তারিখ এই ১০ দিনে ঢাকা শহরে গড়ে বায়ুর মানমাত্রা ছিল ১৬২.৮ মাইক্রো গ্রাম, যা মানমাত্রার নির্দেশনা মতে ‘অস্বাস্থ্যকর’।
বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুর মান সূচকে শূন্য থেকে ৫০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ‘ভালো’। ৫১ থেকে ১০০ হলো ‘পরিমিত’, ১০১ থেকে ১৫০ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’, ১৫১ থেকে ২০০ ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০০ থেকে ৩০০ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে গেলে সেটা ‘বিপজ্জনক’ বলে গণ্য করা হয়।
বায়ুদূষণ বাড়ার জন্য যে কারণগুলোকে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করছেন তার মধ্যে রয়েছে, প্রাকৃতিক কিছু বিষয় (আবহাওয়া ও জলবায়ু), নগর পরিকল্পনার ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা, আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব। আর বায়ুদূষণের উৎস হিসেবে তারা চিহ্নিত করছেন, সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তায় চলাচলরত গাড়ির কালো ধোঁয়া, ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, ইটের ভাটা ও শিল্প কারখানা, উন্মুক্তভাবে আবর্জনা পোড়ানো, বস্তি এলাকায় বর্জ্য পোড়ানো এবং আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সভাপতি প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান ইনকিলাবকে বলেন, আবহাওয়া জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে খুব গরম পড়েছে। প্রচণ্ড রোদের কারণে সবকিছু শুকিয়ে গেছে। যার ফলে বাতাসে ধুলোবালু বেশি উড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। যার ফলে মানুষের চলাচল বেড়েছে। অন্যদিকে ঢাকামুখী মানুষের যে চাপ আগে ছিল, সেটা আবারও ফিরে এসেছে। এজন্য বায়ুর মান খারাপ হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে কনস্ট্রাকশনের কাজ পুরোদমে চলছে। বর্ষাকালে যে কাজগুলো মোটামুটি বন্ধ থাকে, তার সবই এখন শুরু হয়েছে। এখান থেকে ধুলো বাতাসে উড়ে। অক্টোবর থেকে ইট উৎপাদন শুরু হয়। সেখানে প্রচুর ধোঁয়া তৈরি হয়। এটিও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন