শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নিহত জঙ্গি বাবলুর পিতাকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ

একজনের লাশ নিল পরিবার

প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ছাতক উপজেলা সংবাদদাতা : গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের পাতারটেকে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী ‘অপারেশন শরতের তুফান’ নামের অভিযানে নিহত সাত জঙ্গির একজন হচ্ছে সাইফুর রহমান ওরফে বাবলু (২৫)। সে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মনিরজ্ঞাতি (ডিমকা) গ্রামের মতিউর রহমান ওরফে ময়না শাহ ও হুসনে আরা দম্পতির একমাত্র ছেলে। বুধবার রাতে ময়না শাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে প্রথমে ছাতক থানায় ও গতকাল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে অর্ধ ডজন জঙ্গির সন্ধান মিলেছে। বাবলুর বাবা একজন গরু ব্যবসায়ী। এ ব্যবসায় অর্জিত টাকায় চলত তাদের একমাত্র পুত্র বাবলুর লেখাপড়ার ব্যয়, দু’বোন ও মা-বাবাসহ ৫ সদস্যের পরিবার। তবে সিলেটের রায়নগর এলাকায় জনৈক লন্ডন প্রবাসীর ২য় স্ত্রী হন তার এক খালা। তার বাসায় থেকেই সে সার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজে লেখাপড়া করেছে। লেখাপড়ার ব্যয়ভারও বহন করেন তিনি। বাবলু সেখান থেকেই জঙ্গি কানেকশনে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বাবলু কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিল তা জানা যায়নি। তবে দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সে বুকের উপর হাত বেঁধে নামাজ পড়ত। হয়তো আহলে হাদিছ নামের সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাইফুর রহমান বাবলু গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউপির পীরপুর শুকুরুন নেছা চৌধুরী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সিলেট রায়নগর এলাকার সার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হয়। এ স্কুল থেকেই ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কোচিং করতে ঢাকায় চলে যায়। পরে তার মা-বাবাকে জানায়, সে পড়ালেখার পাশাপাশি ঢাকায় একটি ভালো চাকুরি করছে। মা-বাবা তাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নে ছিলেন বিভোর। কিন্তু তাদের সে আশা অবশেষে দুরাশায় পরিণত হয়। যখন গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের অভিযানে নিহত জঙ্গিদের পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেন পরিবারের সদস্যরা। জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকায় এখন এক নজর তার মুখ দেখতেও নারাজ আত্মীয়-স্বজন ও মা-বাবা। জানা গেছে, বাবলু গোয়াশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এসময় থেকে ডিমকার পাশের সেনপুর গ্রামের বাবলুর বাল্যবন্ধু আব্দুছ সালামের পুত্র আব্দুল বাছিত (২৩) এর সাথে চলাফেরা করত। বাবলু ঢাকায় যাবার পর বাছিতকেও সেখানে নিয়ে যায়। পরে দু’জনই নিখোঁজ হয়ে পড়ে। বর্তমানে বাছিত কোথায় রয়েছে এলাকার কেউ বলতে পারছে না। অবশেষে প্রায় দু’মাস আগে বাড়ির সাথে বাবলু সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর আগে ফোনে প্রায়ই মা-বাবার খোঁজ-খবর নিয়েছে। নিখোঁজের বিষয়টি তার মা-বাবা ইউপি চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে অবহিত করেন। নিহত হওয়ার পর তার পকেটে জন্ম নিবন্ধ সনদের একটি ফটোকপি পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী ছাতক থানা পুলিশ ১০ অক্টোবর বাবলুর বাড়িতে গিয়ে তার মাকে বিষয়টি অবহিত করলে নিহত ৭ জঙ্গিদের মধ্যে ৫ নম্বর সিরিয়ালে বাবলুর লাশের ফটো দেখে পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা মতিউর রহমান ওরফে ময়না শাহ জানান, যেহেতু খারাপ কাজে গিয়ে ছেলেটি নিহত হয়েছে সেহেতু সে আমার ছেলে নয়। তার লাশও তারা গ্রহণ করবেন না বলে জানান। এ ব্যাপারে মা হুসনে আরা বেগম বলেন, নিজ হাতে ছেলেকে তিনি ছোট থেকে বড় করেছেন। যারা তার ছেলেকে এ পথে নিয়েছে, এ জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। জঙ্গিদের মদদদাতারা যেন আর কোনও মায়ের বুক খালি করতে না পারে। ১২ অক্টোবর রাতে বাবলুর পিতা ময়না শাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে প্রথমে ছাতক থানায় ও পরের দিন ১৩ অক্টোবর সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ-এর কাছে পাঠানো হয়। এখানে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বাবলুর মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজনসহ গ্রামের অনেক পরিবার ভয়ে ও আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ, সাবেক সদস্য শামীম আলম নোমান, ফয়সল উদ্দিন, মঈনুল ইসলাম প্রমুখ  বলেন, সাইফুর রহমান বাবলু লেখাপড়ার জন্য বেশিরভাগ সময় সিলেটে থাকত। এলাকায় তার পরিচিতি ছিল অনেক কম। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির জানান, বাবলুর রাজনৈতিক পরিচয় কি ছিল তা জানা যায়নি। কারণ বাড়িতে ছিল না। তবে এলাকাবাসী বলেছেন, বাবলু বুকে হাত দিয়ে নামাজ পড়ত। তবে সে আহলে হাদিছের সদস্য হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। ছাতক থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আশেক সুজা মামুন জঙ্গি বাবলু নিহত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
বাবলুর লাশ
গ্রহণ করবেন না পরিবার
বাবলুর লাশ গ্রহণ করবেন তার পরিবার। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা মতিউর রহমান ওরফে ময়না শাহ জানান, যেহেতু খারাপ কাজে গিয়ে ছেলেটি নিহত হয়েছে সেহেতু সে আমার ছেলে নয়। তার লাশও তারা গ্রহণ করবেন না বলে জানান। নিহত বাবলুই ছিল তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান। কন্যা সন্তানও রয়েছে আরো দু’জন। থানার ওসি আশেক সুজা মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জঙ্গি বাবলু নিহত হওয়ার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
টাঙ্গাইলে নিহত জঙ্গি আহসান হাবিব রাবির ছাত্র
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের কাগমারা এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে নিহত জঙ্গি আহসান হাবিব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিল। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলাধীন দক্ষিন রাজাপুর গ্রামে চলছে দাফনের প্রস্ততি। সে ঐ গ্রামের আলতাফ হোসেনর পুত্র। আহসান হাবিবের পিতা নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবি সহকারী উক্ত আলতাফ হোসেন এ রিপোর্ট লেখার সময় বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুত্রের লাশ নেয়ার জন্য টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। পাশাপাশি গ্রামে চলছে দাফনের প্রস্ততি। লাশ এসে পৌঁছালে বুধবার রাতেই পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিকসুত্রে জানানো হয়েছে।  
পারিবারিকভাবে জানানো হয়েছে আলতাফ হোসেনের দুই সন্তান। এক ছেলে আহসান হাবীব এবং অন্যটি কন্যা সন্তান। আহসান হাবিব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করতো। ২০১৩ সালে যখন সে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তখন চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার এক বন্ধুর সাথে অস্ত্রসহ রাজশাহী শহরের জিরো পয়েন্টে গ্রেফতার হয়। সে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ৩বছর পরিবারের সাথে স্বশরীরে যোগাযোগ না থাকলেও ফোনে কিছুটা যোগাযোগ ছিল। কিন্তু গত দেড় বছর থেকে সম্পূর্নভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এব্যাপারে তার পিতা রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছিলেন। তিনি গত মঙ্গলবার জানতে পারেন ৮ অক্টোবর টাঙ্গাইলের কাগমারা এলাকায় জঙ্গী সংগঠনের গোপন বৈঠক চলাকালীন সময়ে র‌্যাবের অভিযানে আহসান হাবিবসহ দুইজন নিহত হয়েছে।
আহসান হাবিবের চাচা রাণীনগর উপজেলা মো: শরীফ হোসেন জানান আমার বড় ভাই ( আহসান হাবিবের বাবা) আলতাফ হোসেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার ভাতিজা ছিল খুব মেধাবী ছাত্র। আমরা কখনো জানতে পারিনি যে আহসান হাবীব নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন