কবিরা কি আর দশজন মানুষ থেকে আলাদা? তাদের কি তৃতীয় ইন্দ্রিয় থাকে? ওই ইন্দ্রিয়ের ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে ষড়যন্ত্র, পরিবেশ-পরিস্থিতি আগাম বুঝতে পারেন; যা অন্যেরা পারেন না? কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদী বিক্ষোভ করে পূজামণ্ডপে হামলা, বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতার মিছিল এবং পুলিশের ধরপাকড় নিয়ে যখন পরিবেশ উত্তপ্ত; তখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ‘ব্লেম গেইম’-এ একে অপরকে দায়ী করতে বক্তৃতা-বিবৃতি যুদ্ধে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমনি সময় ১৬ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জনতার অবস্থান’ ব্যানারে এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন নেতা পূজামণ্ডপে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে নানান ভাষায় বক্তৃতা দিলেও কবি রহমান মফিজ ভিন্ন ধরনের বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, সামনে ভারতের ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচন সামনে রেখে পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি অতীতে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের আগে এমন ঘটনার জন্ম দেয়া হয়েছিল। একজন কম পরিচিত কবির এই তথ্য যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাবনায় নতুন খোরাক জুগিয়েছে। কারণ যুগের পর যুগ ধরে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ বাংলাদেশে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। একে অপরের সামাজিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন; অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তেমন ঘটেনি। তাছাড়া বর্তমান সরকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরকারি চাকরিসহ সবক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এবার দুর্গাপূজায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নিজেও ৩ কোটি টাকা পূজা উদযাপনের জন্য অনুদান দিয়েছেন। তারপরও এমন অঘটনের রহস্য কি?
সৌহাদ্য-সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খ্যাতি সারাবিশ্বে। শহর থেকে গ্রামান্তর পর্যন্ত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক সমাজে বসবাস করেন। হঠাৎ করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র কেন? পর্র্দার আড়ালে কারা পবিত্র কোরআন অবমাননার মতো ঐদ্ধত্যপূর্ণ ঘটনা ঘটাল? বাংলাদেশে কুমিল্লার এক মণ্ডপে অপ্রীতিকর ঘটনা পর ভারতের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারণা, বিজেপি সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তৃতা-বিবৃতি, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের (ইসকন) থেকে জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি এবং বাংলাদেশের কিছু মুখচেনা মানুষের হম্বিতম্বি, হরতালের হুংকার ও অপপ্রচারে ইংগিত দেয়, হয়তো কবি সত্যিই তৃতীয় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের ঘ্রাণ পেয়েছেন।
ভারতের বিজেপি অনুগত গণমাধ্যমগুলোর প্রচারণা থেকে বোঝা যায় তারা বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে কালিমা লেপন করতে চাচ্ছেন। যে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে ধরা হয়, সেই দেশের বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলে ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে চলছে নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ দিল্লি লক্ষ্য করেছে। বাংলাদেশ সরকার এই পরিস্থিতির উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে, তা আশা করা যায়। এর আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশে হিন্দুদের মন্দির এবং দেবীমূর্তির ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ভিএইচপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মিলিন্দ পরান্দে বলেছেন, দুর্গাপূজা প্যান্ডেলে হামলার ঘটনা বরদাস্ত করা সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশের এই ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। মোদিকে চিঠি লিখে অবিলম্বে বাংলাদেশে থাকা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এছাড়াও কট্টোর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের (ইসকন) ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধা রমন দাস কলকাতা থেকে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংসতা’ শীর্ষক চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের প্রতিনিধি পাঠিয়ে ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে দাবি করা হয় ১৫ অক্টোবর নোয়াখালীর ইসকন মন্দিরে ২০০ মানুষ হামলা চালিয়েছে। তারা ইসকন সদস্যদের একজনকে হত্যা এবং অনেকজনের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালানো হয়। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশে দুর্গাপূজার এক মণ্ডপে কোরআন অবমাননা এবং পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার ঘটনার পর সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। ২২টি জেলায় পুলিশের পাশাপাশি বিজেবি মোতায়েন করে শান্তিপূর্ণ পূজা উদযাপন নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার পরপরই কঠোর হুঁশিয়ারি জানিয়ে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও ভারতে বিজেপি নেতাদের এমন হম্বিতম্বি চলছে। একই সঙ্গে হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ নামের সংগঠন চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতাল করেছেন। তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। রহস্য কি? সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারপরও এই ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে ভারতের বিজেপির নেতারা এবং বাংলাদেশের কিছু মুখচেনা ব্যক্তি ব্যাতিব্যস্ত কেন? পুলিশ কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিলে গুলি চালায়, লাঠি চালায় অথচ চট্টগ্রামে হরতাল পালনকারীদের কিছুই না বলা রহস্যজনক বটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী বছরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বিধান সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে গোয়া, মনিপুর, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে বিধান সভা নির্বাচন। নভেম্বরে হিমাচল এবং ডিসেম্বরে গুজরাটে বিধান সভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন ভারতের রাজনীতিতে এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে ওই রাজ্যে যে দল বিজয়ী হন, তারাই দিল্লিতে সরকার গঠন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় নির্বাচন হবে। এসব নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক ‘হিন্দুত্ববাদী কার্ড’ ব্যবহার করেই বিজেপি ভোটে জিততে চায়। কারণ নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই টার্মে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের ফ্যাসাদে ভারত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। তাছাড়া ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে ভারত। এমনকি দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীলরাও বিজেপির ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ কায়েমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এ অবস্থায় মুসলিমবিদ্বেষ তথা হিন্দুত্ববাদী কার্ড ব্যবহার করে বিগত নির্বাচনের মতো এবারও বিজয়ী হতে চায় আরএসএসের ভাববাদী দলটি। অনেকের শঙ্কা ভারতের কট্টোর হিন্দুদের সে দেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে বাংলাদেশে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হতে পারে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মোদির ফাঁদে পা না দিলেও আসামসহ কয়েকটি রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী কার্ড বিজেপিকে ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়েছে। এটা ঠিক ২০১৯ সালে হিন্দুত্ববাদী কার্ড বিজেপিকে কয়েকটি রাজ্যে সাফল্য দিয়েছে। তবে ২৯ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে সফলভাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়ে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার বিজেপির দাবি মিথ্যা ও মনগড়া প্রচারনা করেছে। বিজেপির এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চাতুরি পাকিস্তানের মতো ভারতের মানুষও ধরে ফেলেছিল। পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জী সতর্কতা এবং রাজ্যের সর্বসাধারণের সামাজিক সংস্কৃতির অবস্থানের কারণে মোদি ট্র্র্যাপে পা দেয়নি। আসামে যে মুসলিম খেদাও ধোঁয়া তুলে প্রতাশ্যা মতো সুলফ পায়নি।
বিজেপির চাতুর্য ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী চেতনার কারণে কার্যত ভারত ভৌগলিকভাবে একঘরে হয়ে গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বহুদিন থেকে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। দুই দেশের মধ্যে এখনো শেয়ানে শেয়ানে লড়াই চলছে। পাকিস্তান সীমান্তে ইট ছুড়লে উল্টো পাটকেল খাচ্ছে ভারত। নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র’ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে ভারতের সঙ্গে বিরোধ। দেশটি কয়েক বছর আগেই দিল্লির চোখ রাঙানিকে থোরাইকেয়ার করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশটি এখন ভারতকে পাত্তাই দিচ্ছে না। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক থাকলেও সেনাবাহিনী শাসিত দেশটি কার্যত চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এরই মধ্যে ভুটান সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে। ফলে ভুটানে খবরদারি কমে গেছে। লাদাখ নিয়ে চীনের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না। কাশ্মীরে ১২ বছর ধরে ইস্টার্ন কমান্ড নিরীহ কৃষকদের শুধু হত্যা করেছে। প্রচুর শক্তি ক্ষয় করেও কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের কবজায় আনতে পারেনি। এতোদিন আফগানিস্তানে গোয়েন্দাগিরি করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাড়া খেটেছে। এটা ঠিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে বেশি বিশ্বাস করে। তার ভারতের দৃষ্টিতে অন্যদের দেখার চেষ্টা করেছে। এ সুযোগে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছে ভারত। দেশটি আফগানিস্তানে বিনিয়োগও করে। কিন্তু মার্কিন সৈন্য চলে যাওয়া এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ায় আফগানিস্তান থেকে অপমানজনকভাবে বিতাড়িত হয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবাদের হাতে ‘নজিরবিহীন’ পরাজয় বুঝে উঠতে পারেনি মোদি। অর্ধশত বছর আগে আফগানিস্তানে নাকানি-চুবানি খেয়ে ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া (সোভিয়েত ইউনিয়ন) পাত্তালি গুটিয়েছে। ভৌগলিকগতভাবে আমেরিকা আটলান্ট্রিক মহাসাগরের ওপারে কয়েক হাজার মাইল দূরে। বাংলাদেশ ছাড়া প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ। ফলে আফগানিস্তান এখন ভারতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরূপ অবস্থানই শুধু নয়; নিজের দেশেও বিজেপি সুবিধা করতে পারছে না। অর্থনৈতিক খাতে নিদারুণ মন্দা দেখা দিয়েছে। আমেরিকার টাকা আর যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার গরিব দেশগুলোতে টিকা বাণিজ্যের ঠিকাদারি করেছে। কিন্তু নিজ দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা করুণ। করোনা মোকাবিলা করে অনেক দেশ অর্থনীতিকে সচল রাখতেও ‘হিন্দুত্ববাদী’ চেতনাকে উষ্কে দেয়ায় রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে বুদ্ধিজীবী, সুশীল এবং বিভিন্ন পেশাজীবীরা বিজেপির বিরুদ্ধে একাট্টা। অথচ বাংলাদেশ শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে অকাতরে মোদিকে সবকিছু দিয়ে গেছে। ভারতের অনেক রাজ্য মোদির বশ্যতা মেনে নেয়নি। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের তুচ্ছতাচ্ছিল হজম করতে হয়েছে। তবে বাংলাদেশের কাছে যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন। ট্রানজিট, নৌ-ট্রানজিট, ফেনির নদীর পানিসহ যা চেয়েছেন সবকিছুই পেয়েছেন। তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দেননি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এক সময় উত্তরপূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টারর্স খাতে ৭ রাজ্যে উন্নয়ন করতে পারেনি। স্বাধীনতাকামীরা স্বাধীনতার আন্দোলন করায় বিপর্যয়কর অবস্থা ছিল। ৭৪ বছরে যা করতে পারেনি বাংলাদেশের ট্রানজিট ব্যবহার করে ৫/৬ বছরে ৭ রাজ্যে সে উন্নয়ন করেছে ভারত। এতে বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৭ রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে। বাংলাদেশ সহায়তা করায় ৭ রাজ্যের পর্নো নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হাতে। এ জন্য বাংলাদেশের প্রতি ভারতের কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। সেটা তো করেনি, উল্টো মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙা বাঁধিয়ে সেই দাঙাকে পুঁজি করে সামনের নির্বাচনে বিজয়ী হতে চায়! অবশ্য ভারতের যে অভ্যন্তরীণ অবস্থা তাতে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষমতা দেশটির আর নেই। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটির বন্ধু রাষ্ট্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই বিজেপি ২০১৪ সালে নির্বাচনে ক্ষমতা এসে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের উদ্ধৃত আচরণের মাধ্যমে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীর প্রসঙ্গ টেনে তাদের উইপোকার সাথে তুলনা করে সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলেছে। এখন আগামীতে ভোটে জিততে সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলার নীলনকশা করছে। সেটা করতে আবার বেছে নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে!
দেশের ৩৩ পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যা এই মণ্ডপে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশ বাহিনীর জন্য বাড়তি চাপ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা দিয়েছে। তবে কোরআন অবমাননার পেছনের রহস্য উদ্ঘাটন করেনি। কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করায় পুলিশ পিটিয়েছে শুধু মিছিলকারী ও আন্দোলনকারীদের। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যারা মারা গেছেন তারাও মুসলিম। অন্যদিকে মণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চট্টগ্রামে হরতাল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে; নতুন করে অবস্থান কর্মসূচি দেয়া হয়েছে এবং রানা দাশ গুপ্ত নামের নেতারা হুমকি-ধমকি দিয়েই যাচ্ছেন; অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। হিন্দুদের স্বার্থের দোহাই দিয়ে এই নেতারা হুমকি-ধমকি দিলেও বাংলাদেশের সাধারণ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ওই গরিব হিন্দুদের নাম ভাঙিয়ে এই নেতারা সরকার থেকে ব্যাপক সুবিধা নিয়েছেন। আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে সর্বাধিক সুবিধা দেয়া হয়েছে হিন্দুদের। তারপরও রানা দাশ গুপ্তরা মণ্ডপে হামলার প্রতিবাদের নামে বাংলাদেশে সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন, সরকারকে চোখ রাঙাচ্ছেন।
বাংলাদেশের দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলা ভাঙচুরের পর গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধীদের কঠোর শাস্তি এবং সেই সাথে জোর কণ্ঠে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দেয়ার অঙ্গীকার করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতকেও সচেতন হতে হবে। সেখানে (ভারতে) এমন কিছু যেন না করা হয়, যার প্রভাব আমাদের দেশে এসে পড়ে, আর আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসে। শেখ হাসিনার এই আহ্বান একজন সফল দূরদৃষ্টসম্পন্ন রাষ্ট্র নায়কের মতোই। অথচ ভারতের বিজেপি সমর্থিত কিছু গণমাধ্যম, ইসকন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদে নামে কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চালিয়েই যাচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন