শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যানজটে অচল ঢাকা

প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার দুই মাস পরেও রাজধানীতে বৃষ্টি হচ্ছে। লঘূচাপের প্রভাবে আসময়ে এ বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে রাজধানীতে দেখা দিয়েছে আসহনীয় যানজট। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে কোন কোন এলাকায় কাদা-পানি মিলে একাকার হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বাড়তি ভোগান্তির। সকাল থেকেই নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। সারা শহরজুড়ে যানজট। গাবতলী থেকে সায়েদাবাদ, পুরান ঢাকা থেকে উত্তরা সবখানেই ছিল একই চিত্র। সড়কে দুইধারে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এক থেকে দেড় কিলোমিটার পথ যেতে সময় লেগেছে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। গাড়ি যেন এগুতে চায় না। বিশেষ করে বিকেলে অফিস থেকে ঘরে ফেরা মানুষ পড়েছিল চরম দূর্ভোগে।
যানজটের কারণে সময়মত পাওয়া যায়নি গাড়ি। মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই অনেককে যেতে হয়েছে নিজ নিজ গন্তব্যে। নগরবাসীর এ ভোগন্তির শেষ কোথায় কেউ জানেনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর মতিঝিল-পুরানা পল্টন-শাহবাগ-কারওয়ান বাজার সড়ক, পুরানা পল্টন-ফার্মগেট-মিরপুর সড়ক, মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী সড়ক এবং সাইন্সল্যাব-ধানমন্ডি সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। এছাড়া মগবাজার ও মালিবাগ সড়কের তীব্র যানজটের প্রভাব পড়েছে মহাখালী-উত্তরা ও গুলশান এলাকায়। এসব এলাকার সড়কের দুপাশে শত শত যানবাহন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ সময় পুরো রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়া গাড়িগুলো চলছিলো কচ্ছপগতিতে। বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, উত্তরা, খিলক্ষেত, কুড়িল-বিশ্বরোড হয়ে রামপুরা-মালিবাগ, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর, খিলগাঁও বিশ্বরোড, পান্থপথ, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, হাতিরপুল, নিউমার্কেট, আজিমপুর, গুলশান-১ ও ২, গুলশান এ্যাভিনিউ, সাত রাস্তার মোড়, নাবিস্কো, মিরপুর রোড, রোকেয়া সরণি, আসাদ গেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, জিগাতলা, আজিমপুর এলাকা দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে অবরুদ্ধ ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে বাংলামোটর, ইস্কাটনের সরু রাস্তায় মগবাজার, মালিবাগ অভিমুখী অসংখ্য গাড়ির জটলা। যানবাহনের সারি চলে যাচ্ছে নিউ ইস্কাটন পার হয়ে বাংলামোটরের কাছাকাছি। অন্যদিকে সাতরাস্তার মোড় হয়ে যে সমস্ত যানবাহন চলাচল করছে সেগুলোতো রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের যেন কোন তাড়া নেই। এভাইে কেটে গেল আড়াই থেকে তিন ঘণ্ট। গাড়ির চালক ও যাত্রীদের বিরক্তি তখন চরম সীমানায়। অনেকেই নেমে এলেন রাস্তায়। সিগন্যাল না ছাড়ায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে গালাগাল করছেন ইচ্ছেমতো। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের অবস্থা তখন গলদঘর্ম।
গতকাল দিনভর এ চিত্র ছিল রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগরে। মগবাজার চৌরাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিকের কনস্টেবল বলেন, আমাদের কি দোষ? গাড়ি আটকানোর জন্য সরকার তো আমাদের আলাদা বেতন দেয় না। কিন্তু সারা দিন ঘাম ঝরিয়ে যানজট নিরসনের জন্য হাড়ভাঙা খাটুনি খাটার পরও পাবলিকের গালাগাল শুনতে হয়।
নগরীর ব্যস্ত সড়কগুলোর মতোই যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছিল জনজীবনও। যাত্রাবাড়ি-টঙ্গী রুটে চলাচলকারী ছালছাবিল পরিবহনের যাত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সোলাইমান হোসেন জানান, আধ ঘণ্টার পথ যদি ৩ ঘণ্টা ব্যয় হয়, তাহলে মানুষ সারাদিন কাজকর্ম করবে কিভাবে? সাতরাস্তার মোড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল হাসেম সরদার। তিনি বলেন, এদেশ চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। যাওয়ার পথে ১৬০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে মতিঝিল গিয়েছি। এখন ফেরার সময় যানজটের কারণে গাড়িতে উঠে রাস্তায় বসে থাকতে আর ইচ্ছা হলো না। তাই বাধ্য হয়ে দিলকুশা থেকে পায়ে হেঁটে বনানী যাচ্ছি। এই ভোগান্তি শুধু আবুল হাসেম সরদারের নয়। এ ভোগান্তি ঢাকা শহরের হাজার আবুল হাসেমের।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী অধিকাংশ লোকজনকেই এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে হেঁটে ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন মতিঝিলের একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরাফাত হাওলাদার। তিনি বলেন, দিলকুশা থেকে বাসে উঠে গুলিস্তান আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। অথচ এই পথ হেঁটে আসতে সময় লাগে ১০ মিনিট। তাই সময় বাঁচাতে হেঁটেই যাচ্ছি।
প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী এই ঢাকাতে যানজট প্রতিদিনের চিরচেনা ঘটনা। যানজট নিরসনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অতীতে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগেও মেয়র প্রার্থীদের কণ্ঠে যানজট নিরসনের প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল। কিন্তু দুই মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেলেও পরিস্থিতির তেমন একটা পরিবর্তন ঘটেনি বলে নগরবাসীর দাবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন