ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় কার্যক্রম পরিচালনাকারী এয়ারলাইনসগুলোকে আগামী চার সপ্তাহ ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএসি)। যদিও এসব ফ্লাইটে ভ্রমণ করা প্রতিটি যাত্রীই ঢাকা থেকে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নিয়েছিল। বর্তমানে ঢাকা-গুয়াংঝু রুটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস মাসে দুটি ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস মাসে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ফলে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যত বন্ধ হয়ে গেল বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে গুয়াংজু নামার পর কোভিড-১৯ পরীক্ষায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস উভয়ের ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে ১১ জনের বেশি কোভিড শনাক্ত হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি এয়ারলাইনসই চার সপ্তাহের জন্য ফ্লাইট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। এ কারণে ২৩ অক্টোবর থেকে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত গুয়াংঝুগামী সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের। একইভাবে সে সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইটও। যদিও ঢাকা থেকে যাওয়ার আগে প্রতিটি যাত্রীই কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়েছিলেন। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ প্রদর্শনের পরই যাত্রীদের বোডিংয়ের অনুমতি দিয়েছিল এয়ারলাইনস ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের গত বছর জুনে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, চীনে অবতরণের পর কোনো ফ্লাইটের পাঁচজন যাত্রী কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে সেই এয়ারলাইনসকে শাস্তি হিসেবে এক সপ্তাহের জন্য ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখতে হয়। আর শনাক্তের সংখ্যা যদি ১০ জন বা তার বেশি হয় তবে ওই এয়ারলাইনসকে শাস্তি হিসেবে চার সপ্তাহ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় না চীনা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে এ ধরনের ঘটনা বারবার হলে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই এয়ারলাইনসটি ফ্লাইট বন্ধের ঝুঁকিতে পড়বে—এমন নির্দেশনা জারি রয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষের।
এ প্রসঙ্গে ইউএস-বাংলার জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে জানান, বর্তমানে চায়নাগামী প্রায় সব যাত্রীই সে দেশের নাগরিক। আর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি যাত্রীকেই কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ নিয়েই ঢাকা ছাড়তে হয়। কোভিড পরীক্ষাটি এয়ারলাইনস বা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ করে না। সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হাসপাতাল রয়েছে। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই এয়ারলাইনসগুলো যাত্রীদের বোর্ডিং করে। এ অবস্থায় কোনো যাত্রী চায়না যাওয়ার পর কোভিড শনাক্ত হলে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে প্রত্যক্ষভাবে এয়ারলাইনসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এর আগে গত বছর জুনে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে চীনের গুয়াংঝু পৌঁছার পর চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটের যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ১৭ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন চীনের নাগরিক। সেই সময় চার সপ্তাহ ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় এ এয়ারলাইনসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ চীনেই প্রথমে ধরা পড়েছিল, পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে মহামারী আকার ধারণ করে। এ মহামারীতে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য সব দেশের ফ্লাইট চলাচল গত বছর টানা তিন মাস বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় চীনের সঙ্গে ফ্লাইট চলছিল। আবার করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হলে চলতি বছরও বন্ধ হয়ে যায় চীনের ফ্লাইট। পরে গত এপ্রিল থেকে আবারো চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন