অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বড় গ্রাহকদের কাছে হাজার কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে বছরের পর বছর ফেলে রেখে আদায় করতে না পেরে অবলোপন করার সংস্কৃতি থাকলেও ভোক্তা পর্যায়ের ছোট ঋণ বিতরন বন্ধ করে রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সাধারণ চাকরিজীবি বা ছোট পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘদিন থেকে ৩-৫ লক্ষ টাকা বিনা জামানতে ঋণ প্রদানের রেওয়াজ থাকলেও গত দুই বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ব ছয়টি বাণিজ্যক ব্যাংক ভোক্তা ঋণ বিতরন প্রজ্ঞাপন দিয়ে বন্ধ রেখেছে।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল এর কয়েকটি শাখা ঘুরে একই তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ মোতাবেক প্রধান কার্যালয় এই ঋণ বন্ধ করার জন্য পজ্ঞাপন জারি করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকগুলোর শাখা ব্যবস্থাপকরা।
উল্লেখ্য, বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলো ব্যাপকহারে ভোক্তা ঋণ প্রদান করা শুরু করলে ২০১৪ সালের জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভোক্তা ঋণ কমিয়ে আনতে একটি র্সাকুলার জারি করে। এতে লেখা ছিল: বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেসরকারী ব্যাংকগুলো শিল্পঋণের পরিবর্তে ভোক্তা পর্যায়ের ঋণে বেশী ঝুঁকছে। ব্যাপক হারে ঋণ প্রদান করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে না। যার ফলে জনগনের আমানত ঝুকির মধ্যর পড়ছে। এই সার্কুলারে জনগণের আমানত সুরক্ষার লক্ষ্যে সকল তফসিলি ব্যাংককে ব্যাপক হারে ভোক্তা ঋণ প্রদান কমিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে কোন প্রকার দিকনির্দেশনা প্রদান না করা হলেও তারা ভোক্তা ঋণ বিতরণ বন্ধ করে রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মো: শামস-উল-ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে গেলে জিডিপি গ্রোথ জনগনের দ্বার গোড়ায় পৌছাতে হবে। যার জন্য সমাজের নিচের-স্তর থেকে উদ্যোক্তা তৈরী করে আনতে হবে। এরজন্য ভোক্তা ঋণের বিকল্প কিছু নেই। ভোক্তা ঋণ বন্ধে কোন সার্কুলার থাকলে তা শীঘ্রই তুলে দেওয়া হবে। কারণ একজন ঋণ খেলাপির কাছে হাজার কোটি টাকা ফেলে রাখার চেয়ে ১০০ শত খেলাপী হওয়া অনেক ভালো। আর ভোক্তা ঋণ গ্রাহকরা কখনো ঋণ মারার কথা কল্পনাও করে না বলে আমার বিশ্বাস।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সম্প্রতি মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বলেন, সম্প্রতি কনজুমার ক্রেডিট বা ভোক্তা ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আগে যতটা নজরদারি করত সম্প্রতি তা করছে না। বলা যায়, ভোক্তা ঋণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটু উদার নীতি গ্রহণ করেছে। বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা নানা কারণে কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবস্থান পাল্টেছে। এ ছাড়া এসব খাতে চাহিদাও প্রচুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জানুয়ারির তুলনায় জুলাই মাসে গৃহ ও ভোক্তা ঋণে সুদহার কমিয়েছে এবি, ব্যাংক এশিয়া, কমার্স, ব্র্যাক, ঢাকা, ডাচ্বাংলা, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি, আইএফআইসি, ইসলামী, মিডল্যান্ড, মধুমতি, মেঘনা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল, এনআরবি গ্লোবাল, ওয়ান, প্রিমিয়ার, প্রাইম, পূবালী, শাহ্জালাল, এসআইবিএল, সাউথ ইস্ট, দ্য সিটি, ট্রাস্ট, ইউসিবিএল, ইউনিয়ন, উত্তরা, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, এইচএসবিসি, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও অরি ব্যাংক।
বর্তমানে গৃহ ঋণের সুদহার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে এসব ব্যাংক। আর ভোক্তা ঋণ বিতরণ করছে ১০ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে। ব্যাংক গ্রাহকভেদে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে জামানতের ধরন, গ্রাহকের আয়ের উৎস, বয়স ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন