বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিল্পপতি শাহনেওয়াজের জামিন নামঞ্জুর : রিমান্ড শুনানী রোববার

এবার খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : বিনাপ্রয়োজনে আইসিইউতে রোগী রেখে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায়, অবৈধ ব্ল্যাড ব্যাংক পরিচালনা, সঞ্চারিত মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত, ওষুধ ও প্যাথলজিক্যাল সামগ্রী রাখাসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার দায়ে খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত ১২ অক্টোবর দুপুর আড়াইটার দিকে র‌্যাব-১ ও ৬ এর যৌথ অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে র‌্যাব-১’র নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ফিরোজ আহমেদ এই জরিমানা করেন। উক্ত অপরাধে অভিযুক্ত হাসপাতলের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ গাজী মিজানুর রহমানসহ ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়। দ-িত অর্থ অনাদায়ে গ্রেফতারকৃত পাঁচজনকে তিন মাসের কারাদ- দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে খ্যাত ডা. গাজী মিজান বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন খুলনার সভাপতি। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- হাসপাতালের পরিচালক ডা. সুভাষ কুমার সাহা (৬২), উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম মাহবুবুল হক (৬৩), প্যাথলজি ইনচার্জ জেমস তরুণ সরকার (৮১) ও ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. বাহারুল ইসলাম (২৫)।
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর খুলনার রূপসায় শাহনেওয়াজ সী ফুড নামক হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানীর মধ্যে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ ও তা তৈরির উপকরণ, স্যালাইন ও কসমেটিক্সসহ শিল্পপতি কাজী শাহনেওয়াজকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাবের এই যৌথ টীমটি। পরপর দুই রাঘব বোয়ালকে আইনের মুখোমুখী করায় বর্তমানের র‌্যাবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ খুলনা অঞ্চলবাসী।
র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অভিযান শুরু হয়। অভিযানকালে হাসপাতালের ছয়তলার প্যাথলজি থেকে ২৩বাগ রক্ত, বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্টসহ (প্যাথলজি পরীক্ষার কেমিক্যাল) অন্যান্য ওষুধ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিবর্তে টেকনিশিয়ান স্বাক্ষর করা প্যাথলজি রিপোর্ট নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতেই উদ্ধার করে র‌্যাব।
র‌্যাব-১ এর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ফিরোজ আহম্মেদ জানান, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকের অনুমোদন না থাকলেও এখানে অবৈধভাবে ব্লাড ব্যাংক পরিচালনা করা হচ্ছিলো। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়ায় প্রয়োজন না হলেও রোগীকে আইসিইউতে রেখে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয় বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্যাথলজি রিপোর্টে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিবর্তে টেকনিশিয়ানের স্বাক্ষরকৃত রিপোর্ট রোগীকে দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ থেকে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্লাড জব্দ করা হয়।
র‌্যাব-৬’র পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও অভিযান পরিচালনাকালে- সোনাডাঙ্গার ডেল্টা মেডিকেল হলের পরিচালক গোপালগঞ্জের ইউএ খালিয়ার ছোটপদ গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর মোল্লার ছেলে মোঃ মোল্লা নাসির উদ্দিন (৫২) কে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তার ফার্মেসী থেকে রেজিস্ট্রেশন বিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ এবং স্বাভাবিক পরিবেশে না রাখা ওষুধ জব্দপূর্বক ধ্বংস করা হয়। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের খুলনা হেলথ গার্ডেন, ডায়াগনষ্টিক ও কনসালটেশন সেন্টারের স্বত্বাধিকারী খন্দকার আহসান উল্লাহ (৪০), প্যাথলজি টেকনলজিষ্ট মোঃ হাফিজুর রহমান (২৪) কে এক লাখ টাকা করে মোট ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় উক্ত হাসপাতাল থেকে অনুমোদন বিহীন এক ব্যাগ রক্ত, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঈৎবধঃরহরহব জবড়মবঁঃ, পুনব্যবহারের জন্য উরংঢ়ড়ংরনষব ঊহফড়ভৎধপযরধষ ঞঁনব-১০ পিচ, বিভিন্ন মেয়াদ উত্তীনণ সুতা, মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন প্রকার ইনজেকশন উদ্ধার পূর্বক ধ্বংস করা হয়। এস অভিযানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাকৃত ১৩ লাখ টাকা চালান মোতাবেক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিস্ময় প্রকাশ করে র‌্যাব-৬ পরিচালক বলেন, এসব অভিজাত হাসপাতালে এ ধরনের অনিয়মে হতবাক হলাম। অভিযানে সহযোগিতার জন্য খুলনাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
অপরদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে নকল ওষুধ কারখানায় গ্রেফতার কাজী শাহনেওয়াজের জামিন আবেদন করেন আসামীপক্ষের আইনজীবী। শুনানী শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপসা থানার এস আই মোঃ সাজেদুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ৫দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। আগামী রবিবার রিমান্ড আবেদন শুনানীর জন্য দিন ধার্য্য করেছেন। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন