পবিত্র কোরআন অবমাননা, পুজা মণ্ডপে হামলা এবং রংপুরের পীরগঞ্জে মাঝিপাড়ায় দুর্বৃত্তের অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ এখনো উত্তপ্ত। একদিকে মণ্ডপে হামলা প্রতিবাদ সমাবেশ, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কর্মসূচিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে; অন্যদিকে পবিত্র কোরআন অবমাননার প্রতিবাদ চলছেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে এই প্রতিবাদ বিতণ্ডা। এরোই মধ্যে বিভিন্ন জেলায় ৭১টি মামলা এবং প্রায় ৫শ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষায় বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন কর্মসূচি পালন করছেন। সরকার কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অথচ পুজা মণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনের নামে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস-ইসকন উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছে। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে; বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, বাংলাদেশের দুর্গাপুজায় হামলার ঘটনার পর আমাদের (বিজেপি) ভোট বাড়বে? আমরা জিতব সামনের ভোটগুলোয়? জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ায় হামলা মামলায় অর্ধশত এবং কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনি ও নোয়াখালীর ঘটনায় গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের সর্বস্তরের মানুষ রাজধানী ঢাকা ছাড়াও জেলা-উপজেলায় সমাবেশ ও মানববন্ধন করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন। বসতবাড়ি, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে নানা জায়গায় আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ ডাক দেওয়া হয়। অথচ বাংলাদেশের পুজা মণ্ডপে হামলা ইস্যুকে পুঁজি করে ভারতের বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর দেখলে সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠে। তবে ভারতের কিছু কিছু গণমাধ্যম এটাও বলছে যে বিজেপি আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতেই বাংলাদেশের ইস্যু নিয়ে বেশি প্রচারণা করছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত করে যারা এ সব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রতি এ সব ইস্যুতে মতবিনিময় করতে আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অ্যাকশন নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সীমান্তের ওপারে বিষ ছড়ানো হচ্ছে : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃর্ণমূরের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের ঘটনা ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেখানে লেখা হয় ‘আমরা বিস্মিত, ভারতের যে প্রধানমন্ত্রী ভোট টানার অঙ্কে বাংলাদেশে পুজো দিতে গিয়ে প্রচার সারলেন, তিনি প্রথম থেকে নিষ্ক্রিয় কেন? নাকি বাংলাদেশের হিন্দুনিগ্রহ দেখাতে পারলেন, সেই সুড়সুড়ি দিয়ে এই বাংলায় হিন্দু-আবেগ উসকে ভোট করার চেষ্টা? বাংলাদেশের ঘটনায় যথাযথ তদন্ত চাই।’ এছাড়াও এই ইস্যুতে বিজেপির ভূমিকা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূলে মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য়। প্রথম পাতায় ‘শকুনের রাজনীতি বিজেপি’র শিরোনামে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের হিংসা নিয়ে বিজেপি কোনও রাজনৈতিক চাল দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। নাহলে কেন শুভেন্দু অধিকারী বলবেন, বাংলাদেশের ঘটনার পর আমাদের (বিজেপি) ভোট বাড়বে? আমরা জিতব সামনের ভোটগুলোয়? তাহলে তো স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সমীকরণ ঠিক কী?
কোলকাতা থেকে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিদিন এ লেখা হয়, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দায় সরব আমেরিকা। এই মর্মে এক বিবৃতি জারি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চলা নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেছে মার্কিন বিদেশ দপ্তর। অষ্টমীর রাতে বাংলাদেশের একাধিক পুজোমণ্ডপে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। তারপরই দ্রুত ছড়াচ্ছে সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুন। সত্তরের দশকে খান সেনার সেই অত্যাচারের নারকীয় অধ্যায় যেন আবার অভিনীত হচ্ছে দেশটিতে। রংপুর, কুমিল্লা, ফেনি-সহ একাধিক জায়গায় ঘরবাড়ি পুড়েছে হিন্দুদের। এহেন ঘটনার প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে মার্কিন বিদেশ দপ্তরের শীর্ষকর্তা বলেন, বিশ্বের সকল মানুষের নিরাপদে নিজেদের উৎসব পালনের অধিকার রয়েছে। বিগত দিনে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হওয়া হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে আমেরিকা। এদিকে, আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দুদের নেতা প্রাণেশ হালদার মার্কিন বিদেশ দপ্তরের কাছে হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু উপর চলা নির্যাতন জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি কাছেও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। মন্দিরে হামলার ঘটনার পরই ভারতের বিদেশমন্ত্রক উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশে থামেনি হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা। শনিবার রাতে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে তিনি শেখ হাসিনা সরকারকে খানিকটা কড়া বার্তাই দেন।
ঢাবিতে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ : সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবিতে প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ-মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। পুড়ছে বাংলাদেশ, দেখতে কি পাও? এমন প্রশ্ন সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানানো হয়।
অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিবাদী পথনাটকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর চালানো সহিংসতার চিত্র ফুটিয়ে তোলেন শিক্ষার্থীরা। সাম্যের গান গেয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, একটা বিশেষ গোষ্ঠী সোনার বাংলায় অরাজকতা করছে।
রুখে দাও সাম্প্রদায়িকতা, সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার এই মিছিলে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের গ্রেফতার ও সাজা নিশ্চিতের দাবি জানান তারা। বলেন, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের ১৫টি জেলায় যা ঘটেছে তা আমাদের দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে দিয়েছে। কোনো অবস্থাতেই এসব সন্ত্রাসীদের উঠে দাড়াতে দেওয়া যাবে না।
এদিন সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও ছাত্র ইউনিয়ন। শিক্ষার্থীরা এ সময় সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের এক সম্প্রীতি সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেছেন, কারো ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত করা ইসলামের শিক্ষা নয়। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ ধর্মীয় আবেগ অনুভূতিকে পুঁজি করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে, সন্ত্রাসের সৃষ্টি করছে। বগুড়া শহরের সাতমাথা মুজিব মঞ্চে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক একেএম আসাদুর রহমান দুলু ও সাগর কুমার রায়, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট তবিবুর রহমান রহমান তবি, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন নবাব ও শাহাদৎ আলম ঝুনু, সুলতান মাহমুদ খান রনি, নাসরিন রহমান সীমা, মাশরাফি হিরো, রুহুল মমিন তারিক, এসএম শাহজাহান, খালেকুজ্জামান রাজা, হেফাজত আরা মিরা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়াান শফিক ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম রাজ প্রমুখ।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা করেছে ছাত্রলীগ। পরে নগরীর টাউন হল থেকে একটি শান্তি শোভাযাত্রা শুরু হয়ে গাঙ্গিনাপাড় এলাকা ঘুরে ফের টাউন হলে এসে শেষ হয়। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: আল আমিন ও সাধারন সম্পাদক মো: হুমায়ূন কবির নেতৃত্বে এ কর্মসূচী পালিত হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সুজন মাহমুদ, জুয়েল রানা, মাহমুদুর রাহমান সজল, মাহফুজুল ফাহাদ, মনিরুজ্জামান রাজিব, মুসফিকুর আহমেহ প্রকাশ, আব্দুল গাফফার, আহাদ উল্লাহ রিফাত, কাউছার আজম রানা, মুহিমিনুল হাসান বাহার প্রমূখ। সম্প্রীতি সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, বাঙালির হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে কোন ষড়যন্ত্রকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।
রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মঙ্গলবার পীরগঞ্জ উপজেলার করিমপুর গ্রামের মাঝিপাড়া জেলে পল্লী এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেছেন, পীরগঞ্জে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এবার পীরগঞ্জের ৯৮টি মণ্ডপে শান্তিপূর্ণ ভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপন হয়েছে। ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় পূজার সময়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পূজা শেষে হঠাৎ এ ধরণের নাশকতামূলক ঘটনার কিভাবে ঘটলো, এটার গোড়ায় আমাদের যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, রামনাথপুরের মাঝিপাড়ায় উত্তেজনা ছড়ানোর খবর আমরা পাওয়ার আগে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পেয়েছিলেন। পীরগঞ্জ থানার ওসি তার ফোর্স নিয়ে সেখানে গিয়েছিল। এরই মধ্যে মাঝিপাড়ায় আক্রমণ না করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িতরা বড় করিমপুরে তারা কিছু কিছু বাড়িতে বিচ্ছিন্ন ভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্তের মধ্যদিয়ে প্রকৃত যারা অপরাধীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রাণী, পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে ১০০ বান্ডিল ঢেউটিন, গৃহনির্মাণ বাবদ ৩ লাখ টাকা এবং শুকনো ও অন্যান্য খাবারের ২০০ প্যাকেট বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জাননিয়ে বলা হয়েছে, প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি মিনিকেট চাল, ১ কেজি দেশি মসুরের ডাল, ১ কেজি লবণ, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি চিনি, ১০০ গ্রাম মরিচের গুড়া, ২০০ গ্রাম হলুদের গুড়া ও ১০০ গ্রাম ধনিয়া গুঁড়াসহ মোট ৮টি আইটেম আছে।
চাঁদপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, চাঁদপুরে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষকে নিয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে চাঁদপুর সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে এ সমাবেশে ডা. দীপু মনি বলেন, নিজেকে মানুষ এরপর বাঙ্গালী ভাবতে শিখতে হবে। ধর্ম হৃদয়ে লালনকারীরা কখনো এটা নিয়ে বাড়াবাড়ী করতে পারে না। দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান,চাঁদপুর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা অজয় কুমার ভৌমিক, চাঁদপুর খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের নেতা মমিন্দ্র বর্মণ, তরপুরচন্ডী কাজি বাড়ি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মেহেদী হাসান রুহানী, চান্দ্রাবাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আল-আমিন প্রমূখ।
কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শান্তি সমাবেশ করেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার বৃষ্টির কারণে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের নিচে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা নাদের আলী মিয়া, গোলাম কিবরিয়া দাড়িয়া,কৃষ্ণ প্রষাদ মজুমদার, আব্দুল খালেক হাওলাদার, সাবেক মেয়র এইচ এম অহিদুল ইসলাম, মেয়র হাজি মোঃ কামাল হোসেন শেখ, আমিনুজ্জামান খানঁ মিলন, মতিয়ার রহমান হাজরা, রুহুল আমীন খানঁ, আতিকুজ্জামান বাদল, রুহুল আমীন হাওলাদার লিটু, মিজানুর রহমান বুলবুল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ, কবিরুল ইসলাম রুনী, এ্যডভোকেট বিজন বিশ্বাস প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে মানবন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সকালে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিঙ্কন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুসা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেনসহ আইনজীবী নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
কুড়িগ্রাম শহীদ মিনার চত্বরে জেলা যুবলীগের উদ্যোগে একই দাবীতে শহরে শান্তি সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু, মোস্তাফিজার রহমান সাজু, জেলা যুবলীগের আহবায়ক রুহুল আমিন দুলাল। এছাড়া ঘাতক দালাল নির্মল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দাবীতে মানববন্ধন করে। এসময় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র কাজিউল ইসলাম, জোটের আহবায়ক শ্যামল ভৌমিক, কবি জ্যোতি আহমদ, প্রতীমা চৌধুরী, দুলাল বোস।
উলিপুরে মন্দিরে ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনার, কুড়িগ্রামের উলিপুরে ক্ষতিগ্রস্ত দূর্গা মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেন ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটি। উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের পশ্চিম কালুডাঙ্গা ব্রাহ্মনপাড়া সর্বজনীন মন্দির, নেফরা শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির, ভূতের বাজার সার্বজনীন দূর্গামন্দির এবং থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা ভারতপাড়া সর্বজনীন দূর্গা মন্দির ও ফাঁসিদাহ বাজার সার্বজনীন দূর্গামন্দির পরিদর্শন করেন। এ সময় ভুক্তভোগি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সেদিনের বর্বরতার কথা তুলে ধরে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন। পরে তারা আগামী ২৩ অক্টোবর শনিবার উলিপুর শহীদ মিনার চত্বরে অনশন করার ঘোষণা দেন।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহনে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নাটোর প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশস্থলে এসে শেষ হয়। সেখানে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়নের এই ধারাকে নস্যাত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, এদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন জায়গা নেই। অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
লালপুর (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোরের লালপুরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে গোপালপুর কড়ইতলা থেকে একটি শান্তি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কড়ইতলায় এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সম্প্রীতি সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।
স্টাফ রিপোর্টার মাদারীপুর জানান, মাদারীপুর শহরে আওয়ামী লীগের সম্প্রীতি রক্ষার দাবীতে শান্তি র্যালী করেছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমী থেকে শান্তি র্যালী বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে শেষ হয়। র্যালীতে জেলা আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। র্যালীতে নেতৃত্ব দেন মাদারীপুর জেলা আ’লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান মুন্সি, কাজল কৃষ্ণ দে, পৌর মেয়র মো. খালিদ হোসেন ইয়াদ প্রমুখ। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া একই দাবীতে রাজৈর, শিবচর, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা আ’লীগের উদ্যোনে সম্প্রীতি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করা হয়।
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা হালিমা খাতুনের সভাপতিত্বে সহকারী কমিশনার ভূমি মেহেদী হাসান শাওনের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম এমপি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন কোন ধর্মই দ্বন্ধ হানাহানি সমর্থন করে না,সব ধর্মই শান্তির আহবান জানায়।বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ও ভাতৃত্ববোধের মধ্যে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীত রক্ষায় সকলকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে সচেতন ভূমিকা রাখতে তিনি আহবান জানান। সভায় সরকারি কর্মকর্তা,বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, ইমাম, পুরোহিত, শিক্ষক, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন