দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বহু প্রতিক্ষিত ‘পায়রা সেতু’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন। বাংলাদেশের নিজস্ব ৩৬৮ কোটি টাকা ছাড়াও কুয়েত উন্নয়ন তহবিল এবং ওপেক ফান্ডসহ সর্বমোট এক হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম ৪ লেনের ‘পায়রা সেতু’ নির্মাণের ফলে সারা দেশের সাথে পটুয়াখালী ও পায়রা বন্দরসহ কুয়াকাটার ফেরি বিহীন নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে। আজ রোববার সকাল ১১টার পরেই বরিশাল-পটুযাখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবসান হচ্ছে দীর্ঘ দিনের একটি বড় বিড়ম্বনার। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু এ অঞ্চলের মত সারাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায়ও এক অনন্য মাইলফলক হয়ে উঠবে অদূর ভবিষ্যতেই।
প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন করবেন। এর পরপরই সেতুটি সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এ সেতু চালু হলে রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে এবং দেশের উত্তরাঞ্চল থেকেও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরে পৌঁছা যাবে মাত্র ৭ ঘণ্টায়। সারা দেশের সাথে কুয়াকাটার দূরত্ব হবে কক্সবাজারের প্রায় অর্ধেক।
এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ ৪ লেনের এ সেতুটি পায়রা নদীর মূল অংশের ৬৩০ মিটার বক্স গার্ডারের ৪টি স্প্যানের ওপর নির্মিত হয়েছে। যার মূল অংশ ২০০ মিটার করে দুটি স্প্যানে ১৮.৩০ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে। ফলে পায়রা সমুদ্র বন্দরে উপকূলীয় পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান ছাড়াও নৌবাহিনীর বড় মাপের যুদ্ধ জাহাজসমূহ চলাচলও নির্বিঘ্ন থাকছে। এছাড়া সেতুর মূল অংশের দু’প্রান্তে ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্টে ৩০ মিটার করে ২৮টি স্প্যানে বর্ধিত অংশের ভার বহন করছে। সেতুটির ৩২টি স্প্যান এখন দাঁড়িয়ে আছে ৩১টি পিয়ারের ওপর। ২৮টি স্প্যানের ১২টি বরিশাল প্রান্তে এবং ১৬টি পটুয়াখালী প্রান্তে।
বাংলাদেশ, চীন ও কুয়েতের যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আইসিটি-কুনহুয়া-নারকো-ইপিসি-জেভি’র প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে চীনের লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ করেছে। ‘এক্সট্রা ডোজ প্রী-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটি নির্মাণে ২০১৩ সালে আহবানকৃত দরপ্রস্তাবে চীনের ‘লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড’ প্রায় সাড়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার সর্বনিম্ন প্রস্তাবনা দাখিল করে। কুয়েত এবং ওপেকের সম্মতিতে সর্বনিম্ন দরদাতা চীনা প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তির পরে ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে নকশা পরিবর্তনের কারণে দু’দফায় ব্যয় সংশোধন করে এক হাজার ২৬৮ মিটার সংযোগ সড়ক এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী শাসন ও টোল প্লাজাসহ প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।
তবে পায়রা সেতুর টোল বর্তমান ফেরি ভাড়ার তুলনায় ৩-৭ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করায় ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল হালিম জানান, পায়রা সেতুতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুরো সেতু সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। যেকোনো দুর্ঘটনায়ও সঙ্কেত মিলবে। তিনি আরও বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো সেতুতে যুক্ত করা হয়েছে হেলথ মনিটরিং ও পিয়ার প্রটেকশন সিস্টেম। এর ফলে মাত্রাতিরিক্ত ভারি যান সেতুতে উঠলে সঙ্গে সঙ্গে সঙ্কেত দেবে। একইভাবে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ও বজ্রপাতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ- যেগুলোতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে, সেসব ক্ষেত্রেও সঙ্কেত মিলবে। নদীতে কোনো কিছুর ধাক্কা থেকে রক্ষায় পিলারের চার পাশে নিরাপত্তা পিলার বসানো হয়েছে। এ ব্যবস্থার কারণে আশা করা হচ্ছে সেতুর স্থায়িত্ব বাড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন