শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডিসেম্বরে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার শঙ্কা

বাড়ছে বায়ুদূষণ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণের উর্ধ্বগতির কারণে দেশে যখন লকডাউন দেয়া হয়েছিল তখন ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু লকডাউন তুলে দেয়ার পর রাজধানীতে ফের ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে এই দূষণ। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন এভাবে দূষণ অব্যাহত থাকলে এবং অবস্থা পরিবর্তনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আসছে শীতের মৌসুমে (ডিসেম্বর) দেশে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা প্রয়োজন হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী গতকাল সোমবার ঢাকার বায়ুদূষণের মানমাত্রা ছিল ১৬১। যা বিশ্বের বায়ুদূষণের শহরগুলোর মধ্যে ছিল ৩ নম্বরে। এ সময় ১৮৮ মানমাত্রা নিয়ে শীর্ষে ছিল চীনের বেইজিং শহর। ১৮১ মানমাত্রা নিযে ভারতের কলকাতা ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। বায়ুদূষণের এই মানমাত্রা অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর বাতাসের অবস্থা ছিল অস্বাস্থ্যকর। এই অবস্থা পরিবর্তনের এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী শীতের শুষ্ক মৌসুমে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

অথচ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই একই প্রতিষ্ঠান (এয়ার ভিজ্যুয়াল) চলতি বছর ১৭ এপ্রিল ঢাকার বায়ু দূষণের মান যাচাই করেছিল। সেদিন বায়ু দূষণের মানমাত্রায় ঢাকার পয়েন্ট ছিল ১০২ এবং দূষণীয় শহরগুলোর মধ্যে অবস্থান ছিল ৮ নম্বরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেয়া লকডাউন ওঠে যাওয়ার পর থেকে ঢাকার বাতাসে দূষণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। মাঝে কয়েক দিন বৃষ্টির কারণে ধুলাবালি কম হওয়ায় দূষণ কম ছিল। এখন তা আবার অনেক বেড়ে গেছে। সামনে শীতকাল। ফলে ওই সময় এমনিতেই ধুলাবালি বেড়ে যায়। এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে শীতকালে তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে সেটাই এখন শঙ্কার কারণ।

বায়ুদূষণ নিয়ে গত প্রায় ২যুগ ধরে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ঢাকার বাতাসে ধূলোবালি এবং শিল্পকারখানার ধোঁয়া বেড়ে যাওয়ায় বাতাসের মান দিনদিন খারাপ হচ্ছে। অনাবৃষ্টির ফলেও বাতাদের মান খারাপ হয়। বাতাসের মান খারাপ হলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুকিতে পড়ে শিশুরা।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের শিকার দরিদ্র নারী, শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে সীসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীতে ৯ থেকে ১০ বছর বয়সী ২৫০ জন শিশুর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ কাশি, ছয় শতাংশ অ্যাজমা অথবা শ্বাসকষ্ট এবং ৫ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু মাইগ্রেন অথবা মাথাব্যাথায় ভুগছেন। পাশাপাশি ৫৫ শতাংশ শিশু, যাদের আগে কোন ধরণের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা ছিলো না, তারা এখন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না।

শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. নাজমা ইয়াসমীন ইনকিলাবকে বলেন, বায়ু দূষণের কারণে রাজধানীর শিশুরা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বায়ুদূষণের ফলে রাজধানীর শিশুরা শ্বাসকষ্ট অ্যাজমা, মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা জনিত সমস্যা বাড়ছে। এছাড়া বায়ূদূষণ দীর্ঘমেয়াদী হলে শিশুরা ক্যান্সার এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। শধিু শিশুরাই নয় বায়ু দূষণের কারণে রাজধানীতে সব বয়সী মানুষের শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়েছে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, লকডাউনে যখন বাতাসের দূষণ কমে এসেছিল তখনই বলেছিলাম এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। কারণগুলো আমরা সবাই জানি। যেসব কারণে বাতাসের দূষণ বাড়ে তার সবকিছুই এখন পুরোদমে চলছে। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় মানুষ এখন বাইরে বের হচ্ছে, গণপরিবহন, ইটভাটা, রাস্তা মেরামতসহ বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে সরকার উদ্যোগ না নিলে আবারও দূষণমাত্রার দিক থেকে ঢাকা প্রথম অবস্থানে উঠে আসবে। এখনই সচেতন না হলে, বায়ুমান সূচক যদি টানা ৩ দিন ৩০০ পয়েন্টের ওপরে যায়, তাহলে বাতাসের দূষণগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা বা রেড এলার্ড জারি করতে হবে। এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে শীতকালে সেটা সেখানে গিয়েই দাঁড়াবে। এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী ডিসেম্বরে স্বাস্থ্যগত রেড এলার্ড জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে উদ্যোগ নিতেই হবে। আমরা বারবার ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট চূড়ান্ত করার কথা বলছি। কিন্তু পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেটি ফেলে রেখেছে। সবকিছু দেখে মনে হয়, এ ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন