বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অনিরাপদ পূর্বাচল

পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য না থাকায় বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, খুন

স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধীনে বরাদ্ধকৃত ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লটের জিপিএস পরবর্তী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন নতুন এ শহরের প্লট মালিকরা। আবার অনেকে প্লট প্রাচীর নির্মাণ করলেও দিন-দুপুরে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী। এমনকি প্লটের পানীয় জলের গভীর নলকুপ চুরির ঘটনাও বেড়েই চলছে। পাশাপাশি পুলিশের টহল না থাকায় বাড়ছে এ অঞ্চলে ছিনতাই, চাঁদাবাজি এমনকি খুনের মতো ভয়াবহ ঘটনা। তবে পুলিশের দাবি, পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য নিয়োজিত নাই।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্লটের মালিকের কাছে স্থানীয় চাঁদাবাজ চক্র প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন বলে দাবি করছেন মূল খরচের ৩ থেকে ৬ গুণ টাকা। অধিক আর্থিক ব্যয় বহনে মালিকরা রাজি না হলেই তাদের প্লটের উন্নয়ন কাজ থেমে যায় ওই সন্ত্রাসীদের বাঁধার মুখে। কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নিলেও রাতের আধারে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হতে হয়। ভেঙে ফেলা হয় প্লটের প্রাচীর।

এমন এক ভুক্তভোগী মালিক রাজধানীর বাড্ডার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, বরাদ্দ পাওয়া ২নং সেক্টরের প্লটটিতে স্থানীয় রাসেল গংদের ৩ গুণ বেশি মূল্য দিয়ে কাজ করাতে হয়েছে। এর আগে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করতে চাইলে প্লটের প্রাচীর ভেঙে দেয় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তার ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বাচল উপশহর এলাকায় ১ থেকে ২৩নং সেক্টর পর্যন্ত প্রায় ১২টি সংঘবদ্ধ চক্র প্লটের কাজ করিয়ে দেয়ার নাম করে বাড়তি টাকা আদায় করছে। ওই চাঁদাবাজ চক্র প্লটের কাজের কথা বলে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে সুযোগ বুঝে মালিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে।

স্থানীয় ঠিকাদার শাহীন আলম ভুইয়া জানান, পূর্বাচলের যে কোন প্লটের কাজ শুরু করলেই এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজ প্রথমে কাজ চায়। এসব কাজের ব্যয় দেখানো হয় স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ৪ থেকে ৬ গুণ বেশি। ফলে তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলেই রাতের বেলায় চালানো হয় হামলা। তাই নতুন নির্মাণ করা প্রাচীর ভেঙে দেয়ার ভয়ে কোন কোন প্রাচীরের কাজ বন্ধ রাখা হয়। অনেকে বাধ্য হয়েই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরও তাদের কাছেই নতি শিকার করেন।

সম্প্রতি পূর্বাচল ১৭নং সেক্টর পিংলাইন এলাকার ঠিকাদার মো. রাসেল তার ২০৬নং রাস্তার ৪২নং প্লটে জিপিএস পরবর্তী সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে যায়। এ সময় ধামছি এলাকার শুক্কুর আলীর ছেলে চিহ্নিত চাঁদাবাজ সুমন, একই এলাকার সাত্তারের ছেলে রতন, সাইদের ছেলে রাশিদুল, আসামের ছেলে মানিক, আবুর ছেলে কায়েম, আরজুর ছেলে ফাহিমসহ ২৫-৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদল ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় তার মামাত ভাই মিঠুকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে। গত বুধবার সকালে পূর্বাচলের জয়বাংলা চত্ত্বর এলাকায় একাধিক প্লটে থাকা সাবমারসিবল পাম্প চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই অঞ্চলের গরুর খামারিরাও রয়েছেন চরম আতঙ্কে।

অপর একটি সূত্রে জানা যায়, পূর্বাচলের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লটের উন্নয়ন কাজ করতে সরঞ্জামাদী সরবরাহ, বিদ্যুৎ ও পানি সঙ্কট রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের নামে আকাশ ছোঁয়া দামের চুক্তি করতে হচ্ছে স্থানীয় একটি চক্রের সাথে। এসব কাজের সাথে প্লট মালিকদের বনিবনা না হলেই চাঁদা সংক্রান্ত অভিযোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। তাছাড়া ইটা, বালি ও পাথর সরবরাহের জন্যও রয়েছে প্রভাবশালী অপর একটি চক্র। তাদের অধীনে রয়েছে আবার সন্ত্রাসী বাহিনী।
পূর্বাচলে পুলিশি টহল কম থাকায় দিন দুপুরে এসব চাঁদাবাজের দল আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব জানান দেয়। পরিত্যক্ত পতিত প্লটেই ঝুপড়ি ঘর করে তাতেই তাদের আস্তানা গড়ে তুলেছেন। এসব আস্তানায় সারাদিন জুয়ার আড্ডা হলেও রাতের বেলায় চলে মাদকসেবীদের আমোদ রজনী।

অভিযোগ রয়েছে, পূর্বাচলকে নির্জন পেয়ে নিরাপদ ভেবে উপজেলার বেশিরভাগ মাদক কারবারিরা গড়ে তুলেছেন আস্তানা। ফলে পূর্বাচলের স্থানে স্থানে চলে চোলাই মদের রমরমা ব্যবসা। উপজেলার বাড়িয়া ছনি, গুতিয়াব, পিতলগঞ্জ, মধূখালী, বাগবের ও টিনর এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরাও রয়েছে পূর্বাচলের চুরি কাজে জড়িত।
একইভাবে বেড়েছে খুনের ঘটনাও। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হৃদয় নামে অটোরিকশা চালককে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ৮ অক্টোবর পূর্বাচল নতুন শহরের ৭ নম্বর সেক্টরের ২১৯ নম্বর রোড থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুব ভোলাবো ইউনিয়নের তাওরা গ্রামের দুখু মিয়ার ছেলে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ওসি এ.এফ.এম সায়েদ বলেন, রাজউকের অধীনে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লটের কাজে চাঁদা দাবি সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাইরের ক্রেতা প্লট মালিকরা চাঁদাবাজির শিকার হলেও অভিযোগ না করায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এ অঞ্চলকে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। তবে পূর্বাচলের মতো এতো বড় জায়গা স্বল্প পুলিশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন