স্টাফ রিপোর্টার : নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন, দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা এবং নির্বাচন কমিশনের উপর জনগণের আস্থা ফেরানোর তাগিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক নির্বাচনের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে ও সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠনের ওপর জোর দেয়ারও দাবি করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মত, নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কমিশনের ওপর জনগণের আস্থার অভাব। আস্থা ফেরাতে কমিশন পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি করেন বিশিষ্টজনেরা।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কমিশনের ওপর জনগণের আস্থার অভাব। যে দল পরাজিত হয়, তারা ফল বর্জন করে। কী কী করলে কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা তৈরি হবে, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। যারা হারবে, তাদের ফল মেনে নেয়ার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। ফল বর্জন করা যাবে না।
শামসুল হুদা বলেন, অনেক দেশে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিশন গঠন করা হয়। এটি একটি ভালো কৌশল। আমরা কমিশনার নিয়োগ আইনের যে খসড়া তৈরি করে দিয়েছিলাম, সেখানে এ কথা বলা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মত নিয়ে কমিশন গঠন করা হলে জনগণের আস্থা তৈরি হবে। তিনি আরো বলেন, জনগণের আস্থা থাকলেও সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাহায্য করেছিল বলেই কিছু কিছু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সাবেক সিইসি শামসুল হুদা জানান, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ঐতিহাসিক ভুল করেছে। সংসদ বর্জনও এক ধরনের অপসংস্কৃতি। এসবের কারণে গণতন্ত্রের ভিত নষ্ট হয়ে যায়। নিরপেক্ষ ও আস্থাযোগ্য কমিশন গঠন করতে হলে একটি পদ্ধতি বের করতে হবে। তাঁর মতে, সেটি করা হলে ইসির ওপর জনগণের আস্থা তৈরি হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইসির পুনর্গঠন হলে গণতন্ত্র উদ্ধার হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। ইসি সঠিকভাবে গঠন না হলে পরিণতি খারাপ হয়। কেয়ারটেকারের সময় যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। ইসির ওপরে আস্থা না থাকলে ভালো নির্বাচন হলেও বলবে ভালো হয়নি। সরকার ইসিকে সহযোগিতা না করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সঠিক নির্বাচনের জন্য সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে কমিশন গঠন করতে হবে। আর এ জন্য সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করতে হবে। যাতে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিরা কমিশনে নিয়োগ পান। অতীতে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সঠিক ব্যক্তিদের কমিশনে নিয়োগ না দেওয়ার কারণে সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন হলেও অনেক ক্ষেত্রে কমিশনের সদস্যরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। সুজন সংবিধান অনুসরণ করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে। এ ক্ষেত্রে সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত গত ইসির নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের খসড়া কাজে লাগানো যেতে পারে। খসড়াটি নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে এটিকে চূড়ান্ত করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান খসড়ার অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে সুজন। তাঁরাও পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। রাজনৈতিক বাগবিতন্ডা এড়াতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কমিটির সদস্য করার প্রস্তাব করে সুজন। তাঁরা মনে করে, এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলে বিতর্ক এড়ানো যাবে।
গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ইসি পুনর্গঠন নিয়ে মানুষের মনে সংশয় আছে। আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ আশঙ্কা করছে, সরকার হয়তো এমন কাউকে নিয়োগ দেবে, যারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। এ আশঙ্কা সরকারকেই দূর করতে হবে। যাদের নিয়োগ দেয়ার অভিজ্ঞতা আছে, নির্বাহী দক্ষতা আছে, তাদের নিয়েই কমিশন গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন