বিশেষ সংবাদদাতা : বিএনপি ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশি কোনও অতিথি এলেই দেখা করে গণতন্ত্র নেই বলে নালিশ করে আসে। তারা গণতন্ত্রের ডেফিনেশন (সংজ্ঞা) কী, বলতে পারে কিনা আমার সন্দেহ। গণতন্ত্র বানান করতে পারবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে যারা বিদেশিদের অভিযোগ করেছে, এদেশে তাদের কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, বিদেশিদের কাছে কান্নাকাটি করে কোনও লাভ নেই। আমরা দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি, উন্নয়ন করে যাব। গতকাল শনিবার গণভবনে দলের জাতীয় কমিটির এক সভার শুরুতে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেইÑ এ কথা আজ শুনতে হয়! আশ্চর্য লাগে, কাদের মুখ থেকে এ কথা শুনতে হয়! যারা ৭৫-এর পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, জিয়া ক্ষমতায় এসে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, আর্মি রুলস লঙ্ঘন করেছে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে অবৈধ সংগঠন করেছে, সেই সংগঠন বিএনপির মুখ থেকে গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দেশবাসীকে তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দিয়েছে, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে, মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, যুদ্ধপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে জাতীয় পতাকার মর্যাদা ক্ষুণœ করেছে, তাদের বিচারও বাংলার মাটিতে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে, জনরোষে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, তাদের মুখ থেকে আজ গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র আছে বলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, আন্দোলন আমরাও করেছি। আমাদের আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা ছিল, তাই সফল হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে। মানুষ কিছু পায়।’ প্রসঙ্গত, দলের সম্মেলন উপলক্ষে দীর্ঘ চার বছর পর জাতীয় কমিটির সভা আহ্বান করা হয়।
আর কত, নতুন নেতৃত্ব পেলে খুশি হই
তিন যুগ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর কাউন্সিলের আগে আবারও নতুন নেতা নির্বাচনের তাগিদ দিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় কমিটির সভার শুরুতেই ৭০ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বলেন, ৮১ থেকে ২০১৬; ৩৫ বছর। আর, কত? নতুন নেতা নির্বাচন করেন।
এর আগে গত ২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমার তো ৩৫ বছর হয়ে গেছে। আমাকে যদি রিটায়ার করার সুযোগ দেয়, তাহলে আমি সব থেকে বেশি খুশি হব। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা সমস্বরে ‘না না’ বলে ওঠেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা তখন বলেন, আমি থাকব। দল ছেড়ে তো আমি যাচ্ছি না। যদি নতুন নেতা নির্বাচিত করা হয়, তাহলে সব থেকে বেশি আনন্দিত হব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ সম্মেলনে তাকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন হাসিনা। তারপর তিনি ১৯৯১ সালে ভোটে হারের পর সভানেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার ঘোষণা দিলেও নেতা-কর্মীদের চাপে পদে থেকে যান। ১৯৮১ সালের পর ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯ এবং ২০১২ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন।
কমিটির সভায় শেখ হাসিনা অবসর চাওয়ার পর বক্তব্যের একেবারে শেষের দিকে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু চারা রোপণ করেছিলেন। সেটা মহীরুহ হয়েছে। আপনারা আবার নতুন চারা রোপণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে অবসর চাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মো. নাসিম বলেছিলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিনবার ক্ষমতায় এসেছে। বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর চোখে একটি রোল মডেল হিসেবে অবস্থান করছে। সুতরাং তিনিই নেতা। তিনি পুনরায় দলের সভাপতি হবেন। তার বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং সভাপতি মনোনীত ২১ জন সদস্য এবং প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা থেকে মনোনীত বা নির্বাচিত একজন করে সদস্য নিয়ে আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটি গঠিত হবে। জাতীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ১৬৬ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন