গ্লাসগোয় আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর নেতারা। তার আগে রোমে আলোচনায় বসেছিলেন জি২০ দেশের নেতারা। পরিবেশ নিয়ে একাধিক বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি তারা। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি যে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হবে, সে বিষয়ে একমত হয়েছেন সকলেই। তবে এ বিষয়ে ঐকমত্য ও তা বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।
গোটাবিশ্বে দূষণ যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে এই শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যার প্রভাব ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হবে। এর আগে প্যারিস আবহাওয়া সম্মেলনেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে ধরে রাখার ব্যবস্থা হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
গ্লাসগোয় রোববার শুরু হয়েছে আবহাওয়া বৈঠক। সেখানে ফের পরিবেশ নিয়ে আলোচনায় বসেছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপ্রধানরা। আশা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকে আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে। রোমের বৈঠকনিয়ে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। কবের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হবে সে বিষয়ে কোনো লক্ষ্যমাত্রাই স্থির করা যায়নি জি২০ বৈঠকে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কীভাবে তা করা সম্ভব, এ বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
এখনো বহু দেশে কয়লার উপর নির্ভরশীল। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উপরেই বহু দেশের শিল্প নির্ভর করে। কীভাবে এই কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা যায়, কত দ্রুত বিকল্প শক্তির কথা ভাবা যায়, তা নিয়েও এদিন কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিটি দেশই জানিয়েছে, ক্রমশ কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনা দরকার।
বৈঠকের জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, ‘খানিকটা হতাশ হয়েই রোম ছাড়ছি। জি২০ বৈঠক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেল না। আশা করব, গ্লাসগোর বৈঠকে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে’। ইতালির প্রধানমন্ত্রীও সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য হতাশ নন। তাদের বক্তব্য, প্যারিস আবহাওয়া বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা বহাল রাখার কথা এবারেও সকলে বলেছেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি যে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে আটকে রাখতে হবে, সে বিষয়ে সমস্ত দেশই সহমত। কীভাবে তা করতে হবে, আগামী বৈঠকে তা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে বলেই তারা মনে করছেন।
বিশ্ব নেতাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতির আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। স্কটিশ শহর গ্লাসগোতে জাতিসংঘের আবহাওয়া সম্মেলনে উপস্থিত নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, তা না হলে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিরসনের যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। রোববার শুরু জি-২০ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, যদি গ্লাসগো ব্যর্থ হয় তাহলে পুরোটাই ব্যর্থ হবে। বরিস জনসন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ব্যর্থতা এড়াতে বিশ্ব নেতাদের কপ-২৬-এ বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গত রোববার থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। সম্মেলনে দুইশ’র বেশি দেশের কাছে জানতে চাওয়া হবে, কীভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে চান। সম্মেলনে আবহাওয়া পরিবর্তন মোকাবিলার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে দুই সপ্তাহের এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। সম্মেলন থেকে প্রায় দুইশর বেশি দেশকে অনুরোধ করা হবে যেন তারা কার্বন নিঃসরণে আরও উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা, রয়টার্স, পিটিআই, এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন