স্টাফ রিপোর্টার : টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিদেশি অতিথির সাক্ষাৎবঞ্চিত হলেন জাতীয় সংসদের গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। বহু চেষ্টা তদবির করেও এবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং’র সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হন তিনি। শি জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ না পাওয়ায় জাপার ভিতরে ও বাহিরে চলছে তোলপাড়। পার্টিও তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শীর্ষ নেতারাও দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান। তারা বলছেন, বেগম রওশনের নেতৃত্বের কারণেই দলের এই হাল হয়েছে। দলের নেতারাই প্রশ্ন তুলছেন দেশের জাতীয় সংসদের বিরোধী দল কোনটি? বিরোধী দলের দলীয় নেতা কে? চীনের প্রেসিডেন্টের কাছে বিএনপি যদি প্রধান বিরোধীদল হয় তাহলে জাতীয় পার্টির পরিচয় কী? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে এবং জাপার রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করা হচ্ছে।
কোনো বিদেশী অতিথি দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এলে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতার সাথে সাক্ষাৎ হবে এটাই নিয়ম। কিন্তু সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে তা কার্যকর হচ্ছে না। গত বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দমোদর মোদী। সফরের আগে প্রচার হয় মোদীবিরোধী দলের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করবেন। দেখা গেল ভিন্নচিত্র। বিরোধী নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক দূরের কথা মোদী সাক্ষাৎ দিতে আগ্রহ দেখাননি। সরকারের হস্তক্ষেপে জাপার কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের অনুরোধে নামে মাত্র সাক্ষাৎ করেন মোদী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরকালেও সাক্ষাৎ পায়নি এ দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্টের আগমনকে ঘিরেও জাপার প্রত্যাশা ছিল বিরোধী দল হিসেবে রওশন এরশাদের সাথে বৈঠক হবে। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এতে করে দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দারুণভাবে হতাশ। শুক্রবার রাতে চীনের প্রেসিডেন্টের সম্মানে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ নৈশভোজের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদসহ দলের এমপিরা আমন্ত্রণ পান। কিন্তু জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হয়েও চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে না পারার মনোকষ্টে অসুস্থতার ভান করে ওই ভোজেও অংশ নেননি রওশন এরশাদ। উল্লেখ, দুই বছর আগে বিরোধী দলীয় নেতা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিদেশী অতিথিদের সঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বৈঠকের আয়োজনের অনুরোধ করেন।
শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে এসে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। সে বৈঠক চীন যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে পাত্তাই দেননি। অথচ চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে আসার প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং কিছুদিন আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথে তার বারিধারার বাসভবনে বৈঠক করেন।
এবিষয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, এতে জাতীয় পার্টির গুরুত্ব বা সুনাম খর্ব হয়েছে। ভবিষ্যতে যাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাদেরকেই বিদেশীরা গুরুত্ব দেয়। সেই মোতাবেক তারা সেইসব দলের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখে। জাতীয় পার্টিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিদেশীরা আমাদের মূল্যায়ন করছে না তা এখানে পরিষ্কার। তাছাড়া জাতীয় পার্টি যে বক্তব্য দিচ্ছে তা জনগণ গ্রহণ করছে না। আমরা আমাদের রাজনীতি স্বচ্ছ করতে পারছি না। সঠিক রাজনীতি দিতে পারছি না। যার কারণে আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারছি না। জাতীয় পার্টির কেন্দ্র ও তৃর্ণমূলের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে প্রসঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিতর্কিত ভূমিকার কারণে শুধু দেশের মানুষ নয়; বিদেশীদের কাছেও জাতীয় পার্টি গুরুত্বহীন তার প্রমাণ পাওয়া গেল। এ ঘটনায় আমরা আহত হয়েছি। অবাক হয়েছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা বরাবরই কূটনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে থেকে যাচ্ছি। এটা ভাল লক্ষণ নয়। দলের নেতাকর্মীরা দারুণভাবে হতাশ। চীনের প্রেসিডেন্ট রওশন এরশাদকে সাক্ষাৎ না দেয়ায় দেশবাসীর কাছেও জাপার ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, দলের নেতারা প্রশ্ন করে জানতে চান রওশন এরশাদের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট দেখা করলেন না কেন? জবাব দিতে পারি না। সিনিয়র নেতাদের এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নীরব থাকেন। আর বেগম রওশন এরশাদ অসুস্থতার ভান করে সব ব্যর্থতা ঢেকে রাখতে চান। সরকারের তল্পিবাহক জাপা এখন কর্পোরেট হাউজ। জাপা কোনো রাজনৈতিক দল নয় সে বার্তার মাধ্যমে চীনের প্রেসিডেন্ট জাতীয় পার্টির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে গেলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন