শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেল আরো ৫ জনের

পুরান ঢাকায় আতঙ্কের নাম কেমিক্যাল গোডাউন পুড়ে ছাই অসংখ্য পরিবারের স্বপ্ন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্কের নাম কেমিক্যাল (রাসায়নিক) গোডাউন। কিছুদিন পরপর লাগা কেমিক্যালের দোকান অথবা কারখানায় আগুন লেগে মরছে মানুষ। পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য পরিবারের স্বপ্ন। সর্বশেষ গতকাল সোয়ারীঘাটের কামালবাগে রোমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজনের প্রাণ গেছে। তবে এই আগুনের শেষ কোথায় বলতে পারছেন না কেউ। কারণ প্রতিবার অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত হয়। কিন্তু কমিটির সুপারিশ আর আলোর মুখ দেখে না।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১টায় সোয়ারীঘাটের একটি জুতার কারাখানায় আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ৮টি ইউনিট। প্রায় দুই ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার কারণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। নিহত শ্রমিকদের লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চকবাজার থানার ওসি মো. আবদুল কাইউম জানান নিহতরা হলেন- চাঁদপুরের মনির হোসেন, বরিশালের আব্দুর রহমান, মানিকগঞ্জের আমিনুল, শেরপুরের কামরুল ইসলাম ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের মো. শামিম মিয়া। সবাই কারখানার শ্রমিক। এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কারখানায় বার্মিজ ও স্পন্সের জুতা তৈরি হতো। কারখানাটিতে জুতা তৈরিতে ব্যবহৃত রাবার, প্লাস্টিক ও কেমিক্যালভর্তি অনেক ড্রাম ছিল। এসব দাহ্য পদার্থের কারণেই আগুন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার অবস্থান কামালবাগের আবাসিক এলাকার সন্নিকটে। দুই তলা বিশিষ্ট ভবনটিতে প্রবেশের সময় নিচতলায় কেমিক্যালভর্তি একাধিক ড্রাম রয়েছে। এছাড়া উপর-নিচে জুতা তৈরিতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও রাবার পড়েছিল। আগুনে এসব প্লাস্টিক ও রাবারসহ গোটা গোডাউন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে কারখানার পাশে মদিনা বাজার নামে একটি কাঁচাবাজারও সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ভবনটি মূলত দোতলা হলেও একতলার ওপর পাটাতন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের থাকার জন্য খোপ তৈরি করা হয়েছিল। সেখান থেকেই নিহত পাঁচ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুড়ে যাওয়া জুতার কারখানার আশপাশে একাধিক কেমিক্যালের দোকানও রয়েছে।
আগুনে পড়ে যাওয়া কারখানার পাশে অপর একটি কারখানায় বৃহস্পতিবার রাতে নাইট ডিউটিতে ছিলেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, রাত ১টার দিকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি, কারখানাটি দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুনের তাপ অনেক বেশি হওয়ায় এর আশপাশে যাওয়া যাচ্ছিল না। কারখানার পাশে মদিনা ট্রান্সপোর্ট মার্কেটের সুভারভাইজার মো. রফিক বলেন, ১০ থেকে ১২ বছর আগে রফিক হাজী জমি লিজ নিয়ে কারখানাটি তৈরি করেন। রফিক হাজীর বাসা চকবাজারের রহমতগঞ্জের হাজী রোডে। রাতে মার্কেটের নাইট গার্ড ফোনে আগুন লাগার কথা জানান। সকালে এসে দেখি কারখানাটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। ইউনিটের প্রধান ইন্সপেক্টর মো. সাইফুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, বেশকিছু কেমিক্যাল সদৃশ আলামত সংগ্রহ করেছি। এগুলো সিআইডির রাসায়নিক ল্যাবে পরীক্ষার পর বলা যাবে আসলে এগুলো দাহ্য পদার্থ ছিল কি না।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সহকারি উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে প্রচুর পরিমাণে রাবার জাতীয় কাঁচামাল পাওয়া গেছে। রাবার এক ধরনের পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ। এছাড়া ডিওপি তেল মজুদ ছিল, যা দাহ্য পদার্থ। তবে আগুনের প্রকৃত কারণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, একেকটি আগুন ট্র্যাজেডি ঘটে আর সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুই বাস্তবায়ন হয় না। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। ৯ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে মারা যান ৭১ জন। দুই বছর পর এবার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানসনের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ যায় ৪ জনের। সর্বশেষ সোয়ারীঘাটে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেল আরো ৫ জনের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন