শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বসন্তের দোলা একুশের বইমেলায়

প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : মেলায় প্রতিটি গাছের নিচে ঝরাপাতা। ঝরাপাতা ছেড়ে গাছগুলো সেজেছে মধুর মঞ্জরিতে। কালই শুরু হচ্ছে ঋতুরাজের। বাসন্তী সাজের আমেজ এখনই দোলা দিচ্ছে অমর একুশে বইমেলায়ও। বসন্তের আগেই তরুণীরা মাথায় টায়রা ও বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে বইমেলায় এসেছেন। এই সাজে বই কেনার ফাঁকে ফাঁকে সেলফি তোলার হিড়িক তো চলছেই।
এদিকে বসন্তের মুহুর্তে এখনও ঠা-া শীতল পরিবেশ। হট্টগোলের বদলে শান্ত ছিমছাম পরিবেশ টিএসসি থেকে বাংলা একাডেমির পথে। স্নিগ্ধতা ঘিরে রেখেছে চারপাশ। হকারদের হট্টগোল নেই, নেই বিরক্তিকর ডাকাডাকি। বদলে যাওয়া বইমেলায় যেন এই শান্ত স্নিগ্ধ পথটি আমন্ত্রণ জানাচ্ছে প্রাণের উৎসবে মেতে উঠবার আমন্ত্রণ। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মেলায় পাঠকদের আনাগোনা বেশ ভালো।
এছাড়াও মেলায় ঘুরেফিরে বেড়ানো, আড্ডা দেবার জন্যও বেশ সুন্দর খোলা-মেলা জায়গা রয়েছে। বন্ধুদের দলে দলে আড্ডা জমে উঠেছে মেলার ফাঁকা স্থানগুলোতে। চলেছে বই নিয়ে আলোচনা। কিছু কিছু স্টলের সামনে পাঠকদের ভিড়ও জমে উঠেছিল। নতুন বই ও মোড়কের ছটায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল স্টলগুলো।
গতকাল বুধবার শুরু থেকেই মেলা প্রাঙ্গণ ছিল পাঠকের পদচারণে মুখর। এবারের মেলার বিশেষ দিক হচ্ছে, ছুটির দিন ছাড়াও সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও পাঠক-ক্রেতাদের ভিড়। বইয়ের বিকিকিনিও জমজমাট। মেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দুই প্রাঙ্গণই মুখর।
এদিকে সবাই অপেক্ষা করছিলেন মেলার দ্বিতীয় শুক্রবার অর্থাৎ আজ। তার পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন এবং এর পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। টানা এ তিন দিনই মেলায় থাকবে উৎসবের আমেজ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ বলেন, ‘বইমেলা শুধু উৎসব নয়, তা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ। প্রতিবছর এ সময়টার অপেক্ষা করি। বইমেলায় আসি প্রায় নিয়মিত। বইমেলা তো শুধু বই কেনার জন্য নয়। মানুষ আড্ডা দেবে, চা খাবে, এখানে বসেই নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে পড়তে থাকবে, এ দৃশ্য দেখতে পারা অসাধারণ ব্যাপার।’
এদিকে লেখক কুমের আলীর “অমলিন ভালোবাসা” উপন্যাস একুশে বই মেলার ছায়াবিথী প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করেছে। লেখক বইয়ের কিছু অংশ তুলে ধরে বলেন, এই মন তো সেটাই, যা আজ থেকে ষাটোর্ধ্ব বছর আগে ছিল। সে মনটার তো এক চুলও রদবদল হয়নি। এখনো মনটা তখনকার মতো ভালোবাসা, সুখ অনুভব করে। সে ভালোবাসা বিউটি বেগমের অন্তরে রয়েছে অমলিন ভাবে।
মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী : অমর একুশে গ্রন্থমেলাÑ অতীত থেকে বর্তমান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক বদিউদ্দিন নাজির। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুহম্মদ জাহাঙ্গীর, ড. জালাল আহমেদ এবং খান মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমদ।
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা আজ এক সাংস্কৃতিক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। এর অতীতে ফিরে তাকানোর পাশাপাশি বর্তমানের অভিজ্ঞতায় ভবিষ্যতের দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, যেন একুশে গ্রন্থমেলাকে যথার্থই জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগানো যায়।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন-’এর শিল্পীবৃন্দ। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী শাহীন সামাদ, কল্যাণী ঘোষ, বুলবুল মহলানবীশ, মাহমুদ সেলিম, হায়দার হোসেন, মাহমুদুজ্জামান বাবু এবং শেখ মিলন।
আজ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি শিশুপ্রহর ঘোষণা : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ উপলক্ষে শিশুদের অভিভাবকসহ স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনার সুবিধার্থে শুক্রবার এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। শিশুপ্রহরের সময়কাল সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১ টা।
আজকের অনুষ্ঠান : অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা সকাল ৯:৩০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। বিচারকম-লীর সদস্য হিসেবে থাকবেন আনিসুর রহমান তনু, ইয়াকুব আলী খান এবং সাগরিকা জামালী। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
এদিকে বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে নজরুলচর্চা : অতীত থেকে বর্তমান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রফিকউলাহ খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ভাষাবিদ, প্রাবন্ধিক ড. মাহবুবুল হক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মোহীত উল আলম এবং কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। সভাপতিত্ব করবেন প্রখ্যাত নজরুল গবেষক ইমেরিটাস প্রফেসর রফিকুল ইসলাম। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন