জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে বৈশ্বিক কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন পরিবেশকর্মীরা। বৈশ্বিক জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে শনিবার বৃষ্টির মধ্যেও বিক্ষোভ চালিয়ে যান তারা। তাদের অভিযোগ, জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে জরুরি পদক্ষেপের ঘাটতি রয়েছে।
প্যারিস থেকে সিডনি, নাইরোবি থেকে সিউল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী কয়েক ডজন শহরেও শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। গ্লাসগো শহরে বিক্ষোভ আয়োজক ও পুলিশ বলেছে, তারা কপ ২৬ সম্মেলন কেন্দ্রের আশপাশে ৫০ হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শনিবার সকালে অস্ট্রেলিয়ার এডিলেড থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়ে সেটি ছড়িয়ে পড়েছে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো পর্যন্ত। ৩১ অক্টোবর থেকে গ্লাসগোতে শুরু হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন। উন্নত বিশ্ব যথেচ্ছভাবে পরিবেশের ক্ষতি করেছে এবং এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোকে। ২০১৫ সালে প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ঠেকাতে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ধনী দেশগুলো তার বাস্তবায়নও তারা করেনি। তাই এবার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ধনী দেশগুলোকে চাপপ্রয়োগ করতে চাইছেন জলবায়ু কর্মীরা।
বিবিসি জানিয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ করেছে। গ্লাসগোতে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ। শিক্ষার্থী, জলবায়ুকর্মী, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকরা নগরীর পশ্চিমের কেলভিনগ্রোভ পার্ক থেকে জর্জ স্কয়ার পর্যন্ত মিছিল করেন। তাদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল ‘পুঁজিবাদ এই গ্রহকে হত্যা করছে।’ তাদের দাবি, পুঁজিবাদি প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু সঙ্কট তৈরি করছে। পরে সমাবেশে অনেকে জলবায়ু বিচার চেয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন কৃষকদের কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং খাদ্য সঙ্কট তৈরি করছে তা তুলে ধরেন বক্তারা। তুরস্ক, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, ফিলিপাইন ও নেদারল্যান্ডসে বিক্ষোভ হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন, গ্লাসগো, কার্ডিফ, ম্যাঞ্চেস্টার, লিভারপুল ও ব্রিস্টলে বিক্ষোভ হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের গার্ডেন রিমেম্বারেন্সে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ করেছেন।
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখার বিষয়টি টিকিয়ে রাখতে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা গ্লাসগো সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। ১২ দিনের কপ সম্মেলনের ইতিমধ্যে অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কয়েকটি দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর অঙ্গীকারে সই করেছে। কয়লার ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য পৃথক চুক্তিসহ মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানো ও জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের অঙ্গীকার করেছে কয়েকটি দেশ।
জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে গ্লাসগোতে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। এদিন বিক্ষোভে যোগ দেন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। বিক্ষোভে অংশ নেয়া হাজারো মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, কপ-২৬ সম্মেলন যে ব্যর্থ, তা আর অজানা কিছু নয়। এটিকে এখন আর জলবায়ু সম্মেলন বলা যায় না; বরং এটি পরিবেশ রক্ষার নামে লোকদেখানো উৎসব ছাড়া কিছুই নয়। জলবায়ু সম্মেলনকে সবুজ মুছে ফেলার উৎসব বলেও কটাক্ষ করেন গ্রেটা। কপ ২৬ সম্মেলনের শুরুতে শতাধিক দেশের উচ্চপর্যায়ের নেতারা এই দশকে মিথেন নিঃসরণ অন্তত ৩০ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা দীর্ঘ মেয়াদে কমানো সম্ভব হবে না। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, দূষণকারী ধনী দেশগুলো বরাবরই তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন