শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জিম্মিদশার অবসান

বাসভাড়া ২৭ শতাংশ ও লঞ্চ ভাড়া ৩৫.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি বাস-লঞ্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার রাজধানীর ৯৫ শতাংশ বাস সিএনজিতে চলে ঢাকার পরীক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা কর্মস্থলে যেতে যুদ্ধ করেন তেলের দাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

বাস মালিক সমিতির প্রত্যাশিত ২৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। আর বিআইডব্লিউটিএ’র বৈঠকে লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বৃদ্ধির পর নৌ-ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এর মধ্যদিয়ে দেশে তিন দিনের জিম্মিদশার অবসান হলো। বাস ও লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা দাবি করেছিলেন তারা ‘ধর্মঘট’ ডাকেননি। ধর্মঘট না ডাকলে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন কেমন করে? এ প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে। বাস ধর্মঘটের পথ ধরে নৌ-ধর্মঘট এবং ট্রাক মালিকরা পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণকে জিম্মিদশায় ফেলতে বাস-লঞ্চ ধর্মঘট ছিল সাজানো নাটক। বাস-লঞ্চ মালিক ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা তেলের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন ঠেকাতে এই নাটক মঞ্চস্থ করলেন। সে জন্যই বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধের পর সরকারি পর্যায় থেকে গণপরিবহন চালানোর কোনো রকম উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাভার্ডভ্যান-ট্রাক প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণায় অটল রয়েছে। তাদের দাবি তেলের দাম কমাতে হবে।

এর আগে অঘোষিত ধর্মঘটের চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েন দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসা লাখ লাখ পরীক্ষার্থী জিম্মিদশায় পড়েন। রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ছোট ছোট পরিবহনগুলো যাত্রীদের জিম্মি করে ৪ থেকে ১০ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করে। বাধ্য হয়েই লাখ লাখ পরীক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ অধিক ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেন। অতঃপর ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির পর বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পর বাস ধর্মঘট তুলে নেয়া হয়। ২৭ শতাংশ বাসভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণার পর মালিকদের গাড়ি চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান।

বিআরটিএ’র অফিসে গতকাল দিনভর বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সারাদেশে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। আর ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন রুটের বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ২ টাকা ৫ পয়সা। এই হিসাবে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ এবং ঢাকায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ছে। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বাসের সর্বনিম্ন ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৫ টাকা।

এর আগে ২০১৫ সালে নগর পরিবহনে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৬০ পয়সা ছিল। আর ২০১৬ সালে দূরপাল্লায় ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা। ধর্মঘটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখে গতকাল বিআরটিএ’র সঙ্গে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ বৈঠক করে। অতঃপর সংবাদ সম্মেলনে বাসভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়। বাস মালিক সমিতির নেতা এনায়েত উল্লাহ খান বলেন, সোমবার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমাদের নজরদারি থাকবে। এখন থেকেই গাড়ি চলাচল শুরু হবে। তিনি ধর্মঘট প্রত্যাহার করে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানান। এ সময় বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, এ ভাড়া কার্যকর হবে সোমবার থেকে। সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

ভাড়ার এই নতুন হার ডিজেলচালিত বাসের জন্য প্রযোজ্য জানিয়ে তিনি বলেন, সিএনজিচালিতে বাসের ভাড়া এক পয়সাও বাড়ানো যাবে না, তাদের জন্য এই ভাড়া প্রযোজ্য নয়, আগের রেটে নেবে।

দীর্ঘ সাড় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকের পর বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে এসে ভাড়ার নতুন হার ঘোষণা করেন।

কর্মস্থলে যাওয়ার যুদ্ধ : হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘটের টানা তৃতীয় দিনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ মোকাবিলা করেছেন রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ। কর্মস্থলে যেতে যানবাহনের জন্য পথে পথে অনেকটা যুদ্ধ করতে হয়েছে তাদের। গতকাল সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত খোলা থাকায় রাজধানীর প্রতিটি বাস স্টপেজ ও মোড়ে ছিল হাজারো মানুষের ভিড়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে কোনো পরিবহন পাননি। রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করলেও তা ছিল অপ্রতুল। ভাড়া হেঁকেছে দ্বিগুণ-তিন গুণ। বাধ্য হয়েই তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে যান কর্মজীবী মানুষ। অনেকে বাধ্য হয়ে দীর্ঘপথ হেঁটে কর্মস্থলে রওনা হন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রচুর রিকশা ও সিএনজি চলাচল করছে। তবে ভাড়া কয়েক গুণ বেশি। আর মোড়ে মোড়ে হাজার হাজার মানুষ যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। মাঝে-মধ্যে দু-একটি বিআরটিসি দোতলা বাস চলাচল করলেও তাতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ওই বাসে উঠতে অনেককে শারীরিক যুদ্ধ করতে হয়েছে। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে উঠলেও বাদুড়ের মতো ঝুলেছিলেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, কাকরাইল, উত্তরা, বিমানবন্দর, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শাহবাগ, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর, মহাখালী এলাকার মোড়ে মোড়ে শ’ শ’ মানুষ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন। রিকশাও ছিল তুলনামূলক কম। যাত্রী বেশি দেখে রিকশাচালকরা ভাড়া হাঁকছেন কয়েক গুণ বেশি। দীর্ঘক্ষণ পর পর বিআরটিসি দোতলা বাস আসতে দেখলেই হামলে পড়লেন অফিসগামীরা। যুদ্ধ করে অনেকে উঠতে পারলেও অনেকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিলেন। কর্মজীবী মহিলাদের দুর্ভোগ ছিল আরো অসহনীয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. মোর্শেদ আলম রাজধানীর রায়েরবাগ থেকে কর্মস্থল বসুন্ধরা যান আট গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে। আগে যেখানে বাস ভাড়া লাগত ২০ টাকা সেখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভাগাভাগি করে এসেছেন ১০০ টাকায়। টানা তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ দূরপাল্লার বাস, এতে চাপ বেড়ে যায় ট্রেনে। রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে অফিসগামী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। টিকিটের জন্য হাহাকার দেখা গেছে। আরিফুর রহমান বেসরকারি একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার অফিস মহাখালী। যাত্রাবাড়ী থেকে তিনি নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার সঙ্গে যাত্রাবাড়ীতে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। আরিফ বলেন, গতকালও তিনি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে অফিসে গেছেন। ভাড়া দিতে হয়েছে ৩শ’ টাকা। এটি তার নিয়মিত ভাড়ার অন্তত ৫ গুণ। তিনি বলেন, তিনি স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী। যা আয় করেন, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে অফিসে যাওয়া-আসা কি সম্ভব?

রাজধানীর ৯৫ ভাগ বাস সিএনজিতে চলে : বাস মালিক সমিতির সঙ্গে বিআরটিএ বৈঠকের পর ঘোষণা দেয়া হয়েছে শুধু ডিজেল দিয়ে চালিত গণপরিবহনের ভাড়া ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো। সিএনজিচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া আগের মতোই থাকবে। সরকারের দায়িত্বশীল আমলারা এ ঘোষণা দিলেও ভুক্তোভোগীদের প্রশ্ন সিএনজিচালিত আর ডিজেলচালিত বাস নির্ধারণ করবে কে? বাস মালিকরা সব বাসই ডিজেলে চলে দাবি করে নতুন ভাড়া আদায় করবে।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার সব রুটে সাড়ে ১২ হাজারের মতো বাস চলাচল করে। এর মধ্যে মাত্র ৬২৬টি বাস ডিজেলচালিত। বাকি প্রায় ১২ হাজার (৯৫ শতাংশ) বাসই সিএনজিচালিত। আবার সারাদেশে চলাচল করা ৭৮ হাজার বাসের মধ্যে ৪৬ হাজার ৮০০ বাস চলে গ্যাসে। গ্যাসে চালিত বাসের ভাড়া বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তারাও সব বাসের ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করছেন।

বিআরটিএ ও বুয়েটের তথ্যমতে, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাসই চলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে। দূরপাল্লার বাসের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের চলাচলও গ্যাসনির্ভর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছাড়া দূরপাল্লার অন্য বাসের ৬০ শতাংশ গ্যাসে চলাচল করে। তবে পণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব গাড়িই ডিজেলে চলে। ভাড়া বাড়ানোর থেকে ডিজেলের দাম কমানোর বিষয়ে জোর দিচ্ছেন পণ্যবাহী ট্রাকের মালিকরা। পণ্য ও গণপরিবহন মালিক সমিতির সূত্র বলছে, বর্তমানে পণ্য পরিবহন খাতে তিন লাখ ৫১ হাজার ৭৩টি নিবন্ধিত গাড়ি আছে। এর মধ্যে বাস ও মিনিবাস রয়েছে ৭৮ হাজার। এসবের প্রায় ৪০ শতাংশ ডিজেলে চলে। বাকি ৬০ শতাংশ বাস চলে গ্যাসে।

ঢাকায় বিআরটিএর অনুমোদিত বাস রয়েছে ১২ হাজার ৫২৬টি। বুয়েটের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এসব বাসের ৯৫ শতাংশই চলে গ্যাসে। সেই হিসাবে ঢাকায় মাত্র ৬২৬টি বাস ডিজেলে চলাচল করে। বাকি ১১ হাজার ৯০০ বাস গ্যাসে চলে। আর ঢাকা থেকে দূরপাল্লায় চলাচল করে ১৬ হাজার বাস। এর মধ্যে গ্যাসে চলে ১১ হাজার ২০০ বাস। আর ডিজেলে চলে ৪ হাজার ৮০০ বাস। অন্যদিকে সারাদেশে চলাচল করা ৭৮ হাজার বাসের মধ্যে গ্যাসে চলে ৪৬ হাজার ৮০০ বাস। আর ডিজেলে চলে ৩১ হাজার ২০০ বাস। জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ভাড়া বৃদ্ধি বা ডিজেলের দাম কমানোর এই মারপ্যাঁচে ভুগছে সাধারণ মানুষ। কারণ ঢাকায় চলা ৯৫ শতাংশ বাসে ভাড়া বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এগুলো সব গ্যাসে চলে। যেসব বাস ডিজেলে চলে সেগুলো সরকারকে চিহ্নিত করতে হবে।

বাস মালিক সমিতির আবেদনে যা ছিল : জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে একটি আবেদন দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব। সেই আবেদনে দাবি করা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দূরপাল্লার রুটে ছয়-সাত বছর ধরে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি। করোনাকালেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বাসভাড়া বৃদ্ধির জন্য আবেদনটি করেন।

পরিবহন মালিকদের আবেদন দেয়ার পরদিন শুক্রবার থেকে ধর্মঘটে যান পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এই অচলাবস্থা কাটাতে ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে নতুন ভাড়া নির্ধারণের জন্য বৈঠক হয়। বৈঠকের কার্যপত্রে মালিক সমিতির আবেদনের কথা ছাড়াও আরো পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। তাতে সবশেষ ভাড়া বাড়ানোর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। আগে নির্ধারিত ভাড়ার বর্ণনা করে কার্যপত্রে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি ডিজেলচালিত আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটে চলাচলকারী ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া (ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া) প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করে গেজেট জারি করা হয়। ২০১৬ সালের ৪ মে ডিজেলের মূল্য ৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হলে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা বাসের ভাড়া ১ টাকা ৪৫ পয়সার পরিবর্তে ১ টাকা ৪২ পয়সা পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি কিলোমিটার যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। এছাড়া ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলাগুলোর (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা। বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা ৭ টাকা ও ৫ টাকা।

ট্রাক মালিকদের হুমকি : পণ্য পরিবহনে চলমান ধর্মঘট অব্যাহত রাখার হুমকি দিয়েছে ট্রাক মালিকরা। কাভার্ডভ্যান-ট্রাক প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। গতকাল রাজধানীর সাতরাস্তায় নিজেদের কার্যালয়ে এই তথ্য জানান সংগঠনটির অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দুল মোতালেব।

সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন কাভার্ডভ্যান-ট্রাক মালিকরা। এগুলো হলো ডিজেল ও কেরোসিনের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার, যমুনা ও মুক্তারপুর সেতুর বর্ধিত টোল প্রত্যাহার এবং টোলের নামে দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার চাঁদাবাজি বন্ধ করা। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন তারা।

সংগঠনটির অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দুল মোতালেব বলেন, জ্বালানি তেলের সঙ্গে সারাদেশের প্রতিটি খাত জড়িত। তেলের দাম বাড়লে সব জায়গায় এর প্রভাব পড়ে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত সরকারের। লোকসান দিয়ে গাড়ি চালাব না। তাই আমরা পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছি। আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমস্যার সমাধান করতে চাই।

লঞ্চ ভাড়া ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি : ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাসের পর বৃদ্ধি করা হয়েছে লঞ্চভাড়া। লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে চলমান লঞ্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়ে সরকারের সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের বৈঠকে ভাড়া বাড়ানো ও ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।

লঞ্চভাড়া ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার পরিবর্তে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল, বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা ও লঞ্চ মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর লঞ্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
টুটুল ৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
পুরো দেশটাই এখন জেলখানা
Total Reply(0)
HM Mosharraf Hosain ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২২ এএম says : 0
ধন্যবাদ গরীবের আরো একধাপ গরীব হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
Total Reply(0)
Shohidul Islam ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৩ এএম says : 0
তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকার গ্যাস চালিত বাস কেন বন্ধ? এর প্রতিকার কে করবে? আমাকে কেউ আফ্রিকার একটা ভিসা দেন। আমি আফ্রিকা গিয়ে বাঁচতে চাই।
Total Reply(0)
Prabir ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৪ এএম says : 0
একদিন আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাইতো, তাতে এতো ভোগান্তি হইতো না।
Total Reply(0)
Shahed Anwar ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৫ এএম says : 0
ভারতে বাস ভাড়া বাংলাদেশের থেকে অনেক কম। আবার তাদের তেলের দাম বাংলাদেশের থেকে বেশী।
Total Reply(0)
Mamun Md. Golam Mostafa ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
বাস মালিক শ্রমিক আর ওদের সাজানো মঞ্চের পরিবেশনা দেখছি!
Total Reply(0)
Tanu Joarder ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
সরকার তেলের দাম বাড়ালো পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়ালো সংশ্লিষ্ট সবাই যার যার লাভ বুঝে নিলো আর অসহায় জনগণ যাদের ট্যাক্সে আার রেমিটেন্সের টাকায় দেশ চলে তারা নির্লিপ্ত ভাবে চেয়ে চেয়ে দেখলো!
Total Reply(0)
Sayek Khan ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৮ এএম says : 0
সাধারণ মানুষের কথা কেউ একবার ভাবলো না, সাধারন মানুষের সাথে কেউ মিটিংও করল না।
Total Reply(0)
Shaheb Ali ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৯ এএম says : 0
আরো একদাপ এগিয়ে গেছে ডিজিটাল উন্নয়ন। জনগণের গলায় ফাঁসী
Total Reply(0)
M.A. Monsoor ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৯ এএম says : 0
সবার যোগসাজশে নাটকের শেষে পকেট খালি হবে জনগণের।
Total Reply(0)
Zakiul Islam ৮ নভেম্বর, ২০২১, ৮:১৫ এএম says : 0
গনবিচ্ছিন্ন সরকার ঠিক কাজটিই করেছেন । নির্বাচিত হওয়ার জন্য ভোট লাগেনা । কি সুন্দর নাটক মঞ্চথ করলেন , সরকার এবং মালিক পক্ষ ।বলির পাঁঠা জনগন । দেশ চালানোর চাবি মাফিয়াদের হাতে ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন