শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ব্লগার নাজিমউদ্দিন হত্যার দায়ে ১ জন গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৩৬ এএম, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নাজিমউদ্দিন সামাদকে হত্যার তিনমাস আগে পরিকল্পনা করে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। হত্যার কয়েকদিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে বাসাভাড়া নেয় জঙ্গিরা। এরপর তারা সামাদের যাওয়া-আসার পথে কয়েকদিন তাকে অনুসরণ করে এবং ৬ এপ্রিল রাতে হামলা চালিয়ে হত্যা করে।
সোমবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। এর আগে রোববার রাতে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে এ হত্যাকা- জড়িত রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হান নামে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি ও ডিবি পুলিশ।
মনিরুল ইসলাম বলেন, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিমউদ্দিন সামাদ হত্যায় সন্দেহভাজন রশিদুন নবী আরও কয়েকটি হত্যা বা হত্যা চেষ্টায় জড়িত ছিলেন। মানবাধিকার কর্মী মাহবুব তনয় ও জুলহাস মান্নান হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা পুলিশের কাছে তিনি স্বীকার করেছেন। একইভাবে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে হত্যা চেষ্টাতেও জড়িত ছিলেন তিনি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নাজিমউদ্দিন সামাদকে হত্যার তিনমাস আগে পরিকল্পনা করে আনসার আল ইসলাম। নাজিমউদ্দিন মেসে থাকতেন। তাই বাসায় গিয়ে তাকে হত্যা করা সম্ভব নয় বলে মনে করে জঙ্গিরা। এ কারণে বাসায় আসা-যাওয়ার পথে নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। এরপর জঙ্গি সংগঠনটি মো. রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হান নাজিমউদ্দিন সামাদকে হত্যার নির্দেশ পায়। তার নেতৃত্বে ঘটনার কয়েকদিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে একটি বাসা ভাড়া নেয়া হয়। এরপর ৬ এপ্রিল রাতে রশিদুন নবীর নেতৃত্বে পাঁচ জঙ্গি সামাদকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত রশিদুন নবী হত্যাকা-ের বিষয়টি স্বীকার করেছে। দু’জন সামাদকে কুপিয়েছিল, তাদের মধ্যে এই রশিদুন নবীও ছিল। পাঁচজনের কাছেই চাপাতি ছিল। তবে একজনের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। সে গুলি করে।
এ হত্যাকা- ছাড়াও প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা ও জুলহাস মান্নান-মাহবুব তনয় হত্যাকা-ের সঙ্গেও গ্রেফতারকৃত রশিদুন নবী জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি। নাজিমউদ্দিনকে হত্যার ছয় মাসেরও বেশি সময় পার প্রধান সন্দেহভাজন রশিদুন নবী ভুইয়াকে গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানী থেকে আটক করেন গোয়েন্দারা। এই যুবক টিপু, রাসেল, রফিক এবং রায়হান নামেও পরিচিত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, অনলাইনে নাজিমউদ্দিন সামাদের লেখালেখির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে খুন করা হয়েছে বলে তাদেরকে জানিয়েছেন রশিদুন নবী। মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের ভাষায় কথিত নাস্তিক হিসেবে নাজিমউদ্দিন টার্গেট করা হয়। হত্যার তিন মাস আগে তারা এই টার্গেট করে।
পুলিশ কর্মকর্তা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আসামি রশিদুন নবী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম টিমের সক্রিয় সদস্য। ২০১৫ সালে এই সংগঠনে যোগ দেন তিনি। ঢাকা অঞ্চলে দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি ‘অপারেশন শাখা’র দায়িত্ব পালন করতেন রশিদুন।
পুলিশের ভাষ্যমতে, নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই রশিদুন। অপারেশনও হয় তার নেতৃত্বেই।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন শুদ্ধস্বরের টুটুলসহ তিনজনের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। তিনি গুরুতর আহত হলেও বেঁচে যান।
মনিরুল ইসলাম জানান, নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় ও জুলহাস মান্নান হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন রশিদুন নবী। গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ঢুকে এই দুই নাট্যকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, নাজিমউদ্দিনকে হত্যার জন্য তিনি পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাড়ি ভাড়াও নেন রশিদুন নবী। আর এই হত্যায় অংশ নেন পাঁচজন । তাদের সবার কাছে চাপাতি ছিল। একজনের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। তিনিসহ দু’জন চাপাতি দিয়ে নাজিমউদ্দিনকে কোপান।
বাকি চারজন কারা- জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে, তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে আশা করছি। আর আসামিদের সম্পৃক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

ব্লগার নাজিমুদ্দিন হত্যা মামলায় রশিদুল ৩ দিনের রিমান্ডে
কোর্ট রিপোর্টার : ব্লগার নাজিমুদ্দিন হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার রশিদুন নবীকে ৩ দিন রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম আসামিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। পরে শুনানিকালে হাকিম আসামির কাছে মূল ঘটনা জানতে চান। তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রশিদুন নবী বলেন, স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমরা এই ঘটনা (হত্যাকা-) ঘটিয়েছি; বুঝতে পারিনি। আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। এর আগে রোববার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাকে আটক করেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে সূত্রাপুর এলাকায় দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে ও পরে গুলিতে ঘটনাস্থলেই নাজিমুদ্দিন মারা যান। নিহত নাজিমউদ্দিন জবির আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। এ মামলায় আরও তিন আসামি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তারা হলেন, সিএম মোহাইমিনুল ইসলাম, মামুন রামীম ও মেহেদি হাসান অমি ওরফে রাফি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন