আজিবুল হক পার্থ : চলমান অবস্থায় দেশের বেকারত্ব, উচ্চশিক্ষার হার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট, সার্বিক গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং চাকরি থেকে অবসরের সময়সীমা দুই বছর বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি উঠেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই দাবি তোলা হলেও তা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শাহবাগে আন্দোলনের পর থেকে কয়েক দফায় সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি বেসরকারি বিল এবং তার সংশোধনীর ব্যাপারে নয়জন এমপি দ্রুত দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের মতো সংসদ সদস্যদেরও দৃষ্টি প্রধানমন্ত্রীর দিকে। প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টিতে এ দাবি বাস্তবায়ন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
চাকরি প্রত্যাশিতদের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করার দাবি রাজপথ থেকে সংসদে গড়িয়েছে। এই দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। দশম জাতীয় সংসদের নবম অভিবেশনে একাধিক পয়েন্ট অব অর্ডারের পাশাপাশি বেসরকারি বিল হিসাবেও আনা হয়েছে দাবি। সংসদ সদস্যরা চাকরি প্রার্থীদের দাবির পেছনের বিভিন্ন দাবি সংসদে উপস্থাপন করছেন এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য একটি বেসরকারি বিল উত্থাপন করেন যশোর-৪ আসনের এমপি মনিরুল ইসলাম। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করা হোক Ñ এই প্রস্তাবের সাথে ৯ জন সদস্য অবিলম্বে বাস্তবায়নের কথা যোগ করতে বলেছেন এবং একজন বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও স্পিকার তা স্থগিত করে রাখেন। চলতি অধিবেশনের যেকোনো দিনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
সংসদে সদস্যরা জানান, আমরা দেশের বেকার শিক্ষিতদের জন্য কান্নাকাটি করছি। সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করার দাবি জানাচ্ছি। এই দাবি যুক্তিসঙ্গত। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশিষ ক্ষেত্রে সরকারি প্রবেশের বয়সসীমা ৪০ রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৪০ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৫ বছর, ইতালিতে ৩৫ বছর, ফ্রান্সে ৪০ বছর, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯ বছর, কানাডা ও সুইডেনে ৪৭ বছর, কাতার ও নরওয়েতে ৩৫ বছর, এঙ্গোলায় ৪৫ বছর এবং তাইওয়ানে ৩৫ বছর। আমাদের দেশে ডাক্তারদের আবেদনের বয়স ৩২ বছর। নার্সদের ৩৬ বছর। অথচ সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে ২০১২ সালে ২ ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আবেদন করা হয়েছে।
এর গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র এমপি হাজী সেলিম এবং ১ ফ্রেব্রুয়ারি সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ করার দাবি জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ করার দাবি জানান।
অবরোধকারীদের দাবি এখন সময়ের দাবি। আমার মনে হয় অবরোধকারীদের প্রতি দলমত সচেতন সব মানুষের সমর্থন রয়েছে। এ অবস্থায় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের প্রতি দলমত সব সচেতন মানুষের সমর্থন রয়েছে।
এর আগে হওয়া শাহবাগের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাজধানীর শাহবাগে এসব আন্দোলনকারীদের ব্যানারে বড় করে লেখা ছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বয়স বাড়ান, জীবন বাঁচান। পুলিশি হস্তক্ষেপে আন্দোলনকারী নেতাদের আটক করে অবরোধ থামিয়ে দিলেও বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
জিয়াউল হক মৃধা বলেন, সেশনজট, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে অনেক চাকরি প্রার্থীর বয়স ৩০ পেরিয়ে যায়। এ কারণে তারা সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। অপর দিকে অনেক প্রতিভাবান ছেলে শুধু বয়সের হেরফেরের কারণে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। ফলে রাষ্ট্রও বঞ্চিত হয় তাদের সেবা থেকে। এটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়স অনেক বেশি হলেও আমাদের দেশে কম। এটি একটি ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা। যার ফলে শিক্ষিত বেকারে দেশ ছেয়ে গেছে। অপর দিকে সব সরকারি দফতরে শূন্য পদের ছড়াছড়ি। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন Ñ চাকরিকালীন অবসরের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। অথচ চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানো হবে না কেন?
পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশেও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ করার দাবি জানানো হয়েছে। আর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন হাজী মো. সেলিম।
তিনি বলেন, সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচারিত এবং বাস্তব সত্য পৃথিবীর রোল মডেল শেখ হাসিনার কাছে কিছু চাইতে হয় না। চাওয়ার আগেই তিনি দিয়ে দেন। তবুও একটি প্রবাদ আছে Ñ সন্তান না কাঁদলে মাও দুধ দেয় না।
সেলিম বলেন, বর্তমানে সেশনজটসহ বিভিন্ন কারণে চাকরির আবেদনের বয়স শেষ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে শুধু মাস্টার্স ডিগ্রিতে সেশনজট ছিল দুই বছরের বেশি। ২০০৯ ও ২০১০ সালে তিন বছরের বেশি। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংসদে মুলতবি প্রস্তাাবসহ বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে। আমার দাবি মেনে নিলে আমরাও ধন্য হই। বয়সসীমা অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলিয়ে ৩৫ করা হলে সরকারি চাকরি প্রত্যাশীরা উপকৃত হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন