শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বরেন্দ্রের মাঠে কৃষকদের আমন ধান কাটার উৎসব

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা

রেজাউল করিম রাজু ও আশিকুর রহমান টুটুল, রাজশাহী ও লালপুর (নাটোর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বরেন্দ্র অঞ্চলের চারদিকে সবুজের সমারোহ। মাঠ ভরা পাকা সোনালী আমনের বিস্তীর্ণ ক্ষেত। ধানের গোছা দেখে কৃষকের চোখ ভরা স্বপ্ন এবার আমনের ফলন ভালই হবে। আর কয়েক দিন পর থেকে শুরু হয়ে যাবে আমন কাটাই মাড়াই হুলস্থুল কর্মকাণ্ড। ইতোমধ্যেই কোথাও কোথাও ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। যে দিকে চোখ যায় শুধু সোনালী ধান আর ধান। সবুজ পাতার মাঝে দুলছে সোনালী রোপ আমন ধান। এ যেনো কৃষকের চোখে সোনালি স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। চলতি মৌসুমে পোকার আক্রমণের পরেও রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হাসি এনে দিয়েছে কৃষকের মুখে।

একদিকে আমনের অন্যদিকে শীতকালীন শাকসবজির ক্ষেত। যেদিকে চোখ যাবে শুধু ফসল আর ফসল। চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষক। আগাম লাগানো কিছু আমন কাটা হচ্ছে। আর আগাম শাকসবজি তোলার পাশপাশি নতুন করে শীত মৌসুমের সবজি ফুলকপি বাধাকপি, টমেটো, গাজর, মুলা, বেগুন, সীম, ব্রোকলিসহ নানান সবজির আবাদ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ততা।

এবার বরেন্দ্র অঞ্চলের চার জেলায় রাজশাহী, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রোপা, আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিনলাখ পচানব্বই হেক্টর জমিতে। বাস্তবে আবাদ হয়েছে চারলাখ হেক্টরের বেশি জমিতে। যা থেকে উৎপাদন হবে দশলাখ তেষট্টি হাজার মেট্রিক টন চাল। সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে ধান উৎপন্ন এলাকা হিসাবে পরিচিত নওগাঁয় একলাখ সাতানব্বই হাজার হেক্টর। এছাড়া রাজশাহীতে আশি হাজার হেক্টর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিপান্ন হাজার হেক্টর আর নাটোরে বাহান্ন হাজার ছয়শো হেক্টর জমিতে।

এবার বর্ষণ বেশি হলেও বরেন্দ্র অঞ্চল উচু হওয়ায় তেমন একটা বিরুপ প্রভাব পড়েনি আমন উৎপাদনে। বরং ভাল বৃষ্টি হওয়ায় তা সেচের ক্ষেতে উপকার বয়ে এনেছে। যা কৃষকের কাছে আল্লাহর রহমতের বর্ষণ। আবহাওয়া অননুকূল ছিল আমন আর সবজি আবাদে। এবার গমের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পচানব্বই হাজার হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে তিনলাখ মেট্রিক টন। আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় বাষট্টি হাজার হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে আলু পাওয়ার আশা তেরলাখ টনের বেশি আলু। শীতকালীন শাকসবজির আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক চল্লিশ হাজার হেক্টর জমিতে। যেখানে আবাদের আশা প্রায় সাড়ে আট লাখ টন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি।

কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হবে এমন কথা জানান মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা। কারণ হিসেবে বলছেন এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে আছে। আর গ্রামে শীতের আমেজ আগেভাগেই অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশা নামছে। যা শীতকালীন সবজির জন্য বেশ সহায়ক। তাছাড়া কৃষক এখন আর কোন জমি খালি রাখতে নারাজ। যদিও তাদের চিরাচরিত সমস্যা সার, বীজ, আর কীটনাশক নিয়ে। ভাল বীজের নামে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক কৃষক। এবার বিভিন্ন ধরনের সারের কৃত্রিম সঙ্কট করা হচ্ছে আবাদের শুরুতে।
রাজশাহীর তানোর, নবাবগঞ্জে নাচোল আর নওগাঁর পোরশা এলাকা ঘোরার সময় কৃষকের পাশপাশি কৃষান বধূর ব্যস্ততা নজর এড়ায়না। শুরু হয়ে গেছে আমনের জন্য বাড়ির আঙ্গিনার খৈলান ঝাড়া মোছার কাজ। আর ক’দিন পরই শুরু হবে আমন কাটার মহাউৎসব। তখন দম ফেলার ফুরসত থাকবেনা কারো। কাকডাকা ভোরে উঠে শুরু হবে দলবেধে মাঠে মাঠে ধানকাটা, খৈলানে মাড়াই, ঝাড়াই আর বস্তাবন্দী। ফড়িয়াদের আনাগোনা।

চলতি মৌসুমে পোকার আক্রমণের পরেও রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হাসি এনে দিয়েছে লালপুরের কৃষকের মুখে। সোমবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার মোট ধানের ২০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার উপজেলায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এই সকল জমি থেকে বিঘা প্রতি ১৪ মন হারে ৩০ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন ধান ও ২১ হাজার ১৩৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি ধান ও চাল উৎপাদন হবে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার মাঠ জুড়ে দুলছে রোপা আমন ধান। প্রতিটি মাঠেই শুরু হয়েছে ধান কাটা ও মাড়াই কাজ। সকাল থেকে মাঠে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এখানকার শ্রমিকরা। আর দুই সপ্তহের মধ্যে কৃষকরা তাদের সোনালী ধান ঘরে তুলতে পারবে।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। কিছুটা মাজরা পোকার আক্রমণ হলেও শেষ পর্যন্ত ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কৃষকেরা তাদের বিগত দিনের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

ধান বেচেই অনেক স্বপ্ন সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করে মেটাবে কৃষক। শুরু হবে পিঠা পুলির উৎসব। মেয়ে জামাইকে নায়রে নিয়ে আসাসহ আরও কত কি। এমনিতে গেল দু’বছর ধরে করেনোর কারণে অনেক কিছু করা যায়নি। এবার অবস্থা ভাল। মেতে উঠবে নতুন ধানের সোদাগন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উৎসবের মেজাজে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন