শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আ’লীগের সম্মেলনকে ঘিরে চট্টগ্রামে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কেন্দ্রে ঠাঁই পেতে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনকে ঘিরে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা এখন দারুণ উজ্জীবিত। জেলা মহানগর থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। দলের কেন্দ্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোন কোন নেতা ঠাঁই পাচ্ছেন তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা।
সম্মেলনে যোগদানের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এবারের সম্মেলনে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা থেকে মোট ৩৪২ জন কাউন্সিলর যোগ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কাউন্সিলর তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন এছাড়াও দেড় হাজার ডেলিগেট যোগ দিবেন সম্মেলনে। জেলা এবং মহানগরের সাংগঠনিক রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। সরকারি দলের এই বিশাল আয়োজন দেখতে নিজ উদ্যোগে ঢাকায় যাবেন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আরও অনেকে। শুক্রবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করছেন তারা। ইতোমধ্যে ট্রেনের বগি আর বিলাসবহুল বাস রিজার্ভ ভাড়া করা হয়েছে। ঢাকায় নেতাকর্মীদের থাকার জন্য হোটেলও ঠিক করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে ১২০ জন কাউন্সিলর এবং ৫০০ জন ডেলিগেট সম্মেলনে যোগ দিবেন। এই সংখ্যা আরও বাড়ানো যায় কিনা তা নিয়ে দেন-দরবার করছেন নেতারা। ইতোমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ঢাকায় এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেছেন।
নগর আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, মহানগরীর লোকসংখ্যা ৪০ লাখ হিসাব করে ১১১ জন কাউন্সিলর ও ৫০০ জন ডেলিগেট নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু এখন লোকসংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সে হিসেবে ডেলিগেট ও কাউন্সিলরের সংখ্যা বাড়ার কথা। বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী ডেলিগেট কাউন্সিলর ঠিক করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন মহানগরীর নেতারা। কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেবেন তা নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। এতে করে দলীয় কোন্দলও ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বিষয়টি সুরাহা করতে গতকাল মহানগরীর নেতারা বৈঠকে বসেন।
এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা থেকে ১১১ জন কাউন্সিলর এবং ৫০০ জন ডেলিগেট, দক্ষিণ জেলা থেকেও ১১১ জন কাউন্সিলর এবং ৫০০ জন ডেলিগেট যোগ দেবেন। তাদের তালিকা ইতোমধ্যে কেন্দ্রে জমা পড়েছে।
কাউন্সিলর ও ডেলিগেট হিসেবে যারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের মহানগর, জেলা, থানা, পৌরসভা ও উপজেলার সভাপতি এবং সম্পাদক। এদের মধ্যে অনেকে আবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ীরাও এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এবারের সম্মেলন দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীন বাংলাদেশে এবারই প্রথম টানা দুই দফায় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সম্মেলন ও কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনকে ঘিরে বিগত সাত বছরের সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হবে। এর পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের ভূমিকা কি হবে তারও একটি নির্দেশনা থাকবে। আর এ কারণে এবারের সম্মেলন দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী ২২ এবং ২৩ অক্টোবর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জমকালো আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে রাজধানী ঢাকাজুড়ে। এসব প্রস্তুতি দেখতে নেতাকর্মীদের অনেকে আগে-ভাগে ঢাকা পৌঁছেছেন। ডেলিগেট কিংবা কাউন্সিলর নয় এমন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সম্মেলন দেখতে ঢাকায় যাবেন বলে দলের নেতারা জানান।
এদিকে জাতীয় কাউন্সিলে নতুন কমিটিতে চট্টগ্রামের কোন কোন নেতা ঠাঁই পাচ্ছেন তা নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে জোর আলোচনা। নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে এক ঝাঁক তরুণ মুখ অনেক আগে থেকেই চেষ্টা-তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই প্রবীণ নেতারাও। যারা এখন বিভিন্ন পদে আছেন তারাও পদোন্নতি পেতে চাচ্ছেন। সেই কারণে এবারের কাউন্সিলের প্রতি নেতাকর্মীদের বাড়তি আকর্ষণ। কেন্দ্রে ঠাঁই পেতে বিপুল সংখ্যক নেতার দৌড়ঝাঁপে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্য খুলে তা দেখার অপেক্ষায় এ অঞ্চলের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে আওয়ামী লীগের বর্তমান ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদের আকার বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৮১ সদস্য করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে সভাপতিম-লীর ৪টি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২টি, সাংগঠনিক সম্পাদক ১টি।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ১৫ জন। এই সংখ্যা বেড়ে ১৯ করা হতে পারে। আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ জন বেড়ে হবে ৫ জন। প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ জন। এখন তা বেড়ে হবে ৮ জন। সে অনুযায়ী গঠনতন্ত্রে সংশোধনীর জন্য খসড়া তৈরি হচ্ছে। পদের সংখ্যা বাড়ায় এবার চট্টগ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আগের তুলনায় বেশি পদ পাওয়ার আশা করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
বিগত ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১৯তম জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন নেতা কেন্দ্রে পদ পান। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন সাবেক এমপি ইসহাক মিয়া, ড. অনুপম সেন ও ড. প্রণব কুমার বড়–য়া। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন ড. হাছান মাহমুদ। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান বীর বাহাদুর এবং সদস্য পদে ঠাঁই হয় আমিনুল ইসলাম আমিনের।
এবারের কাউন্সিলে বর্তমান পদে থাকা কয়েকজন পদোন্নতি পেতে পারেন, আবার কয়েকজন বাদও পড়তে পারেন বলে মনে করেন দলের নেতারা। দলের উপদেষ্টা পরিষদেও এবার নতুন মুখ আসতে পারে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন শীর্ষ নেতাও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের কাউন্সিলে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে দলকে সাজাবেন এমন প্রত্যাশা তাদের।
মিছিল নিয়ে যাবে মহানগর আ.লীগ
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলন স্থলে যাবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। সম্মেলন সফল করতে গতকাল রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় এ তথ্য জানান নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যে আনন্দ-উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সুশৃঙ্খলভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এতে সম্পৃক্ত হবে। ২১ অক্টোবর রাতে ট্রেন ও বাসযোগে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। এরপর তারা সমবেত হবে কমলাপুর রেলস্টেশনে। সেখান থেকে মিছিল যাবে সম্মেলনে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আন্দোলন সংগ্রাম ও বীরত্বময় ঐতিহ্যের ধারক। সম্মেলনে অংশগ্রহণে এর প্রতিফলন ঘটানো হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, বদিউল আলম, এম এ রশিদ, উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য এ কে এম বেলায়েত হোসেন, এনামুল হক চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ ইসহাক। এদিকে ২০ তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নগরীর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাইটিং করার সিদ্ধান্ত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন