বাংলাদেশ-সংযুক্ত আরব আমিরাত যৌথ কমিশন-এর ৫ম সভা গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আহমেদ আলী আল সায়েগ যৌথভাবে সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সভায় উভয় প্রতিনিধিদলের দলনেতা ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। উভয় দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়ই একই সময়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে। ১৯৭৪ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরকারী সফরে প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের ঐতিহাসিক সাক্ষাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়। আমাদের উভয় সরকারই সেই পথ অনুসরণ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহযোগিতা সংক্রান্ত আমাদের সম্ভাবনাকে আরও কাজে লাগাতে আগ্রহী। অর্থমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী কর্মী ও পেশাজীবীদের আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বৃদ্ধির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি আহ্বান জানান।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে করোনা পূর্ব গত এক দশক গড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে পরিচিত। আশা করা যায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সংযুক্ত আরব আমিরাত অভিন্ন বিভিন্ন স্বার্থের বিষয়ে বাংলাদেশকে যে সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছে তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। অধিকন্তু অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশী নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে খ্যাতি ও মর্যাদার সাথে সেবা প্রদান করছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ করে পেশাদার, দক্ষ, আধা-দক্ষ এবং অ-দক্ষ জনশক্তির জন্য এখনও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বন্দর এবং বড় অবকাঠামোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, তথ্য প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ; কৃষি, মহাকাশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, চিকিৎসা সেবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পিপিপি ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিল্প বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
সভায় উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের নানাবিধ বিষয় পর্যালোচনা করে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করে। ক্ষেত্রসমূহ হলো- দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন সংক্রান্ত; জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও কনস্যুলার খাত; বেসরকারি বিমান চলাচল, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র; বিনিয়োগ সংক্রান্ত; আবুধাবি উন্নয়ন ফান্ডের মাধ্যমে সহযোগিতা বৃদ্ধি; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাত; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত; শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত; সামুদ্রিক পরিবেশ উন্নয়ন খাত; কৃষি ক্ষেত্র; স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা খাত এবং মানবিক ও দাতব্য সংক্রান্ত সহযোগিতা।
দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার পর একটি ‘সম্মত কার্যবিবরণী’ স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তী যৌথ কমিশনের সভা আবুধাবিতে অনুষ্ঠানের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন