শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইপি প্রতিনিধি দলের উদ্বেগ

প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (ইপি) প্রতিনিধিদল। তবে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় ইপি। একইসাথে ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ গঠন ও সংসদীয় প্রতিনিধি বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ইপি সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং জাতীয় সংসদের স্পীকারের ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে একথা বলেন সফররত প্রতিনিধি দল।  
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ৪৬ মিনিটে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ইপি’র প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষ হয়। এর আগে বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক থেকে বের হয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সফররত ইপি প্রতিনিধিদল।
তিনি বলেন, ইপি প্রতিনিধিদল বেগম খালেদা জিয়াকে জানিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ’র বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে হলে অবশ্যই আগে দেশে জনপ্রতিনিধিত্বের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সোয়া ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে চলমান রাজনীতি, মানবাধিকার, পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
ইপি’র সদস্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধিদলের চেয়ারপারসন জ্যঁ ল্যাম্বার্টের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সদস্য রিচার্ড হাউয়িট, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট পার্টির সদস্য ইভান স্টিফেন্স ও কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য সাজ্জাদ করিম। বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (ইপি) প্রতিনিধি দল জানায়, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রতিনিধি দল ইসলামী বিশ্বে বাংলাদেশকে মডারেট মুসলিম দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রশংসা করেন এবং বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী উগ্রবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি অবহিত করেন এবং প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন।
সফরকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্পর্ক আরো গভীর হবে। গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সরকারের প্রশংসা করে ইপি প্রতিনিধি দল।
এসময় আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই অগ্রগতি সাধন সম্ভব হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদী অংশীদারিত্বসহ ইপির অব্যাহত সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিনিধি দলকে জানান, বাংলাদেশ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক জোটে যেমন সার্ক, বিবিআইএন, বিমসটেক এবং বিসিআইএমতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সমুদ্র অর্থনীতিতে ইইউ-এর সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
গতকাল বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে ইপি’র প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
গতকাল বিকেলে সফররত চার সদস্যের প্রতিনিধি দল স্পিকারের কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করে। সাক্ষাৎকালে স্পিকার প্রতিনিধি দলকে জানান, বাংলাদেশের সংবিধান ও সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সংসদে প্রতি বুধবার সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকেন। তাছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
স্পিকার বলেন, সংসদীয় কার্যক্রমকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং মন্ত্রীর পরিবর্তে একজন সংসদ সদস্যকে কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আসন্ন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী সম্মেলন প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তারা ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ গঠন ও সংসদীয় প্রতিনিধি বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন