শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চির নিদ্রায় শায়িত হলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। গতকাল মঙ্গলবার বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাযা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে পশ্চিম কোনায় তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয় নন্দিত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের লাশ। এ সময় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্য, রাজশাহী জেলার রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দর্শন বিভাগে আনা হয় প্রখ্যাত এ কথা সাহিত্যিকের লাশ। সেখানে বিভাগ ও বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
হাসান আজিজুল হক দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে গত ২১ আগস্ট রাজশাহী থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়া হয়। প্রথমে তাকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্থানান্তর করা হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজশাহীর বাসভবন ‘উজান’-এ ফিরেছিলেন হাসান আজিজুল হক। গত সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে তিনি রাজশাহীর বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তিনি তিন মেয়ে এবং এক ছেলে রেখে গেছেন। তার ছেলে ইমতিয়াজ হাসান মৌলি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রানবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়াারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ পযন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন এই সাহিত্যিক।
২০০৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে মনোনীত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।
আগুনপাখি (উপন্যাস), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (গল্পগ্রন্থ), একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথাসহ (প্রবন্ধ) অসংখ্য জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এ সাহিত্যিক বিভিন্ন সময়ে নানা পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে এবং ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
এই অসামান্য গদ্যশিল্পীর সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি লাভ করেন।
নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক সর্বশেষ প্রকাশিত লেখা ‘মাটির বাড়ি, যতদিন চন্দ্র সূর্য’। এই লেখাটা ছিল তার জন্মস্থানের নিজ মাটির বাড়িকে নিয়ে। এটি একটি উপন্যাস। নিজেদের মাটির বাড়িটি কিভাবে তৈরি হয়েছিল সেটির গল্প মূলত এই লেখায় স্থান পেয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন