রাজধানী ঢাকায় ভুয়া চিকিৎসক, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। দালালদের মাধ্যমে এসব সেন্টারগুলো পরিচালিত হচ্ছে। যদিও এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাঝেমধ্যেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সিলগালা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপরও বন্ধ হয়নি তাদের কার্যক্রম। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর গ্রিন রোডের ‘হার্টবিট ফার্টিলিটি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন থেকে চললেও গত ৭ অক্টোবর অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অধিদফতর থেকে এখনো অনুমোদন মেলেনি জানালেও হার্টবিট ডায়াগনিস্টক সেন্টারের মালিক শামীম আহম্মেদ জানালেন তাদের অনুমোদন হয়েছে। অনুমোদনসহ সকল নিয়ম মেনেই কাজ শুরু করা হয়েছে।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন যেসব দম্পতি নিঃসন্তান রয়েছেন, চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা করছে হার্টবিট ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে দেয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ ছাড়া অবৈধভাবে ভারতীয় এক চিকিৎসকের মাধ্যমে অনলাইনে রোগী দেখানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সাবেক রেজিস্ট্রার ডা. জাহিদুল হক বসুনিয়া বলেছেন, বিদেশি কোনো চিকিৎসক এদেশে চিকিৎসা কার্যক্রম চালালে অবশ্যই বিএমডিসি’র অনুমোদন নিতে হবে। কেউ যদি অনুমোদন না নিয়ে রোগী দেখেন, সেটা হবে অবৈধ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, হার্টবিট ফার্টিলিটি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শামীম আহম্মেদ। ‘নোভা আইভিআই ঢাকা লিমিটেড’ নামে অস্তিত্বহীন আরেকটি ডায়াগনস্টিকের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন। ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্সটি নেন ধানমন্ডির একটি ভবনের ঠিকানায়। কিন্তু সেখানে ওই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ভবনের পঞ্চম তলায় ‘গ্রীন ইনফার্টিলিটি সেন্টার’ নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অংশীদার ছিলেন শামীম আহম্মেদ। এই ঠিকানা ব্যবহার করেই নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রীন ইনফারটিলিটি সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। এর পর গ্রিন রোডের গাজী টাওয়ারের চতুর্থ তলায় হার্টবিট ফার্টিলিটি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে অকারণে শারীরিক একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় দম্পতিদের। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য বড় অঙ্কের ফি। একাধিক রোগী অভিযোগ করেছেন, কোনো ধরনের পরীক্ষা না করিয়েই ভুয়া রিপোর্ট দেয়া হয়েছে তাদের।
হার্টবিট ডায়াগনিস্টক সেন্টারের মালিক শামীম আহম্মেদ বলেন, লাইসেন্সসহ সকল নিয়ম মেনেই প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়েছে।
অবশ্য ইনকিলাবের হাতে যে তথ্য রয়েছে, তাতে দেখা যায়- গত ৭ অক্টোবর লাইসেন্সের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অথচ এর কয়েক মাস আগে থেকেই এখানে চলছে টেস্ট বাণিজ্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন