শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রংপুরে এবার শিমের বাম্পার ফলন

লাভবান হচ্ছেন কৃষক মুখে হাসির ঝিলিক

হালিম আনসারী, রংপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

ক্ষেতের পর ক্ষেত জুড়ে মাচা। তার ওপর সবুজের মাঝে বেগুনি রংয়ের ফুল দোল খাচ্ছে। ফুলের সুগন্ধ ক্ষেতের আশ-পাশের এলাকাকে অন্যরকম এক সুগন্ধে সুবাসিত করে তুলেছে। শিম ক্ষেতের এই দৃশ্য গ্রামীণ প্রকৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য ক্ষণিকের জন্য হলেও মন ভরিয়ে দিচ্ছে। এ দৃশ্য রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার শিম ক্ষেতের দৃশ্য।

উপজেলার প্রায় সর্বত্রই শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এতে করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। বাড়ির উঠানসহ আশপাশের উঁচু জমিতে শিম চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন সকলেই। অনেকেই বাড়ির উঠান ছাড়াও ফসলি জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করে বাড়তি আয়ের পথ তৈরি করে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে এসব জমি থেকে আগাম জাতের শিম তুলে বাজারে বিক্রি করছেন কৃষকরা। শীতের আগেই শীতকালীন এই সবজি বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা বেজায় খুশি।

সরেজমিন রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর, জায়গীর, রুপশীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মাঠ জুড়ে শিমের ক্ষেত। মাচা বা জাংলির উপর সবুজের মাঝে বেগুনি রংয়ের শিম ফুল বাতাশে দোল খাচ্ছে। এই উপজেলা ছাড়াও কাউনিয়া, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, সদর ও বদরগঞ্জের মাঠজুড়ে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার প্রায় সর্বত্রই শীতকালীন বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি বাড়ির উঠানসহ উঁচু জমিতে শিম চাষ ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। অত্যন্ত কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এই আগাম জাতের শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এবং ফলনও ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা এসব ক্ষেতের শিম তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। শীতের আগেই বাজারে দিতে পারায় দামও বেশ ভালো পাচ্ছেন।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট এলাকায় শিমের পরিচর্যারত কৃষক খোরশেদ আলম জানান, এ সময়ে অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ না থাকায় বসে থাকতে হয়। এবার ৩ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। তার মধ্যে প্রায় দেড় বিঘার মত জমিতে শিম লাগিয়েছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। প্রায় ১ মাস থেকে শিম বাজারে বিক্রি করছি। প্রতি মণ প্রায় আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি। ইতোমধ্যে টাকা উঠে এসেছে। গতবছরও তিনি এই জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। তাকে অনুসরণ করে আরে অনেকেই এবার আশ-পাশের জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করেছেন। সকলেরই জমিতে শিমের ফলন ভালো হয়েছে।

রংপুরের প্রায় সব উপজেলাতেই আগাম শিম চাষ করে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম হলো শিম। অন্যান্য বছর মিঠাপুকুর ও পীরগাছা উপজেলায় অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে স্বল্প পরিমানে বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ হয়ে আসছিল। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বর্তমানে শিম চাষ অনেক বেড়েছে। এখন জেলার প্রতিটি উপজেলায় মাঠের পর মাঠ জুড়ে দেখা যায় শিম ক্ষেত। শিম ক্ষেতে সাদা ও বেগুনি রঙের ফুলে গ্রামের প্রকৃতি সেজেছে অন্য রকম এক মুগ্ধতায়।

বদরগঞ্জ উপজেলার নাগের হাট এলাকার আইরিন বেগম পেশায় একজন এনজিওকর্মী। অফিস থেকে এসে প্রতিদিন বাড়ির উঠানসহ পাশের জমিতে লাগানো শিম ক্ষেতে পরিচর্যা করেন। তিনি জানান, বাড়ির উঠানসহ পামের অল্প একটু জমিতে শখ করে আগাম জাতের শিম লাগিয়েছি। আল্লাহর রহমতে ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বেপারিরা প্রতি কেজি শিম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে ক্ষেত থেকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে কিছু বাড়তি টাকা হাতে এসেছে। শিম আরও কিছুদিন তোলা যাবে। এদিকে, রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি শিম খুচরা বিক্রি হচ্ছে খুচরা ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় শীতকালীন সবজির এখনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে গত বছর রবি মৌসুমে এই জেলায় ৫৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছিল। জেলার মধ্যে মিঠাপুকুর, পীরগাছা, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলা সবজি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগি। শীতকালীন সবজির মধ্যে শিম আগাম বাজারে নিয়ে আসতে হলে বৃষ্টি-বাদল শেষে জমিতে বীজ বপন করতে হয়। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার সর্বত্রই সবজির চাষ ভালো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন