দুবাইয়ের ড্যান্স ক্লাবে প্রতিমাসে এক লাখ বিশ হাজার টাকা বেতনের প্রলোভনে কম বয়সী তরুণীদের টার্গেট করতো মানবপাচারকারী একটি চক্র। ড্যান্স ক্লাবে চাকরির কথা থাকলেও তাদের যৌনতায় বাধ্য করা হতো। এভাবে প্রায় শতাধিক তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে একটি চক্র। পাচারকারী চক্রটি ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়াই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নকল কার্ড তৈরি করতো। গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কার্ড তৈরি করা হলেও তাদের মূলত দুবাইয়ে পাচার করে আসছিল চক্রটি। গতকাল সোমবার রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে চক্রের অন্যতম হোতা শামসুদ্দিনকে (৬১) গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। এ সময় তার কাছ থেকে দুইটি মোবাইল ফোন, একাধিক ব্যক্তির পাসপোর্ট, একটি বিএমইটি কার্ড এবং একজন নারী ও তিনজন পুরুষ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, পাচারকারীরা বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল তরুণী ও পুরুষদের ফাঁদে ফেলে দুবাইয়ে নিয়ে যেত। তাদের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। যাদের অধিকাংশই নারী। এসব নারীকে বিদেশে বিভিন্ন পেশায় লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির কথা বলে তারা বিক্রি করে দিতো। পরে জোরপূর্বক ডিজে পার্টি, যৌনতাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়ানো হতো।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শামসুদ্দিন জানিয়েছে, বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থানরত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে তারা এই চক্রের কাজ করতো। জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতারক চক্র মেয়েদের বিদেশে যেতে প্রলুব্ধ করে। সম্প্রতি জিয়া চক্রের মাধ্যমে বিমানবন্দর দিয়ে কয়েকজন নারী পাচার করা হচ্ছে, এমন খবরে আমরা তাদের উদ্ধার করি। পরবর্তীতে গত রোববার আমরা তথ্য পেলাম, জিয়া চক্রটি আবারও এক নারীকে পাচারের চেষ্টা করছে। এরপর অভিযান চালিয়ে ওই নারী ও তিন পুরুষকে উদ্ধার করা হয়। জিয়ার বিভিন্ন এলাকায় নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা প্রথমে অল্পবয়সী নারীদের টার্গেট করে। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ঢাকায় এনে হোটেলে রেখে পাসপোর্ট ও ‘বিএমইটি’ কার্ড তৈরি করে দেওয়া হতো।
তিনি বলেন, বিদেশে যেতে করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেটও করে দিতো এ চক্র। এরপরেই নারীদের বিদেশে পাচার করে দেয়া হতো। চক্রটি দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় পাচার করত। বিএমইটি কার্ডটি কোনো রকম ট্রেনিং ছাড়াই করে দিত। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একজন দক্ষকর্মী হিসেবে বিএমইটি কার্ড তৈরি করতে এক মাস সময় লাগতো। আমরা একজন ভিকটিমকে পেয়েছি, যাকে ট্রেনিং ছাড়াই বিএমইটি কার্ড দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটি হারিয়ে গেলে তার অনুপস্থিতিতেই আবারও কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়, পাচারকারী চক্র অতি কৌশলে নকল এই বিএমইটি কার্ড তৈরি করে নারীদের পাচার অব্যাহত রেখেছে। পাচার করতে যাওয়া একজন নারীকে দেশে থাকা অবস্থায় ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। তাকে আরও টাকা দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। তবে উদ্ধার পুরুষ ভিকটিমদের বিদেশে পাঠানোর জন্য দালাল চক্র তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু মেয়েদের পাঠাতে কোনো টাকা নেয়া হতো না। উল্টো মেয়েদের টাকা দেয়া হতো। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন