দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টহল ব্যবস্থা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে। একই সাথে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন নাশকতা করতে না পারে সেজন্য পুলিশ-র্যাবকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট বিশেষ অভিযানে তিন হাজারেরও বেশি আসামিকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ইয়াবাসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্র্রব্য, অস্ত্র, বিস্ফোরকসহ নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেল।
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কেউ যাতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুলিশ-র্যাবকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এই বার্তা পেয়েই সদর দফতর থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে মৌখিকভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা ছুটিতে আছেন তাদের ছুটি ২৩ নভেম্বর থেকে বাতিল করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমাণ্ডার খন্দকার আল মঈন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিসহ সব ধরনের পরিস্থিতি আমরা নজরদারি করছি। র্যাবের সকল ইউনিট সারা দেশে সর্তকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। ইউপি নির্বাচন বা অন্য কোনো সুযোগে কেউ যেন দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য র্যাব কাজ করছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশ সদস্যদের সবসময়ই সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। এ নির্বাচনে ফের যেন কোনো সহিংসতা না হয়, এ জন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। অনুরূপভাবে রাজধানীতেও যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ব্যত্যয় না ঘটে, সে জন্য পুলিশ সদস্যদের টহল ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এটি পুলিশের একটি চলমান প্রক্রিয়া। কাউকে গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে কোনো রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ কোনো প্রকার গুজব ছড়িয়ে কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ডিসেম্বর মাসে অনেক রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম আছে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রয়েছে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ অফিসারদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাই। পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকায় কর্মরত যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে বাইরে ছিলেন, তাদের বৃহস্পতিবার দিনের প্রথমভাগে কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার বাইরে যাদের যাওয়ার কথা ছিল, তাদের সফর বাতিল করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট মাদকবিরোধী অভিযানে ২ হাজার ৯৬৪ জনকে গ্রেফতার করে। এসব অভিযান চলাকালে ১১ লাখ ২৫ হাজার ৩২৮ পিস ইয়াবা, ৫ কেজি ২৩০ গ্রাম হেরোইন, ৮ হাজার ৮৩২ বোতল ফেনসিডিল, ১ হাজার ৫৯০ লিটার বিদেশি মদ, ১০ হাজার ৫১ লিটার দেশি মদ ও দেড় হাজার কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। একই সময়ে পুলিশের অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার অভিযানে ৯৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভিযানে ৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫২৫টি দেশীয় অস্ত্র ও ৫৭টি বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযান চলাকালে পুলিশের নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেল বিরোধী অভিযানে নিবন্ধনহীন ৩ হাজার ১৪০টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। চোরাই ৩৬টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৯৮টি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন